মুভি ইউ, দ্যা লিভিং — আপনার জীবন নিয়া বানানো সারিয়াল কমেডি

যদি প্রশ্ন করা হয়, “আমারে কেউ বোঝে না”—এই অভিমানী বাক্যটি বছরে ঠিক কতবার আপনার মনে আসে? এই প্রশ্নের উত্তর বিভিন্ন জন বিভিন্ন ভাবে দিলেও কেউ কেউ আউট অফ অনেসটি হয়তো বইলা বসতে পারেন, “বছরে কেন বলতাছেন? আমার তো প্রতিদিনই মনে হয় যে আমারে কেউ বোঝে না”। কিন্তু সবাই যে এমন উত্তর দিবেন না তাঁর নিশ্চয়তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করার কোন অবকাশ নাই। কারন সবার প্রতিদিন এমনটা মনে হয় না। আবার কারো হয়তো একই দিনে অনেকবার মনে হয়! তবে মানুষের সাইকোলজির স্টাডি অথবা দীর্ঘদিন আশেপাশের মানুষজনকে প্রত্যক্ষ কইরা এইটুকু বলা যায় যে পোস্টমডার্ন এইজে সব মানুষের জীবনের কোন না কোন সময় এক অথবা একাধিকবার অভিমানী মন আপনা আপনি বইলা উঠে, “আমারে কেউ বোঝে না”। এই অভিমান অনেকের ক্ষেত্রে সুইসাইডালও হইতে পারে। প্রশ্ন জাগতে পারে শুধুই কি পোস্টমডার্ন মানুষদের মনেই এই সমস্যা বাস করে, তাঁর আগের মানুষ জনের মনে ছিল না? হয়তো ছিল, সেইটা অন্য আলোচনা। তবে এই পোস্টমডার্ন পিরিয়ডে মানুষের সাইকোলজি ডমিনেট করছে উপরোক্ত অভিমানী বাক্যটা। এই অভিমানের উৎস আর কারণ কি হইতে পারে? প্রধানত মানুষের মানুষিক বিচ্ছিন্নতা। এই কারণ বিশ্লেষণের আগে প্রশ্ন হইল আপনারে অন্যের বোঝার আদৌ কোন প্রয়োজন আছে কি? আপনি আপনার ভিতরে কি এমন মুল্যবান কিছু ধারন করেন যা অন্যরে বোঝা লাগব, হউক কে খুব কাছের কেউ? ভিতরে হাত দিয়া দেখেন, তেমন কিছুই খুইজা পাইবেন না। প্রশ্নগুলা যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করলেও মনে হইতে পারে এদেরকে নেগেটিভলি পুট করা হইছে যা আপনারে আমড়া কাঠের ঢেঁকি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার একটা প্রয়াস দেখায়। তাই যদি এইসবের বিপরীত প্রশ্নগুলা কন্সিডার করি যা দাড়ায়, অন্যরা আপনাকে বুঝল কিনা তাতে আপনার কি আদৌ কিছু আসে-যায়? আপনার অস্তিত্ব কি কারো বোঝার উপর নির্ভর করে? খেয়াল করলে দেখবেন আসলে আপনার কিছু আসেও না, যায়ও না। কারণ অন্য কেউ নয়, আপনেই আপনার রিয়্যালিটির ক্রিয়েটর। সবই আপনার নিজের মনের তৈরি আর্টিফিশিয়াল প্রবলেম। এখানে দুই ধরনের প্রশ্নই সমান গুরুত্ব বহন করে।

220a41e9457034ecd3f1f52cad34ae94

মানুষের মানুষিক বিচ্ছিন্নতা, আনন্দ-বেদনা, আত্মবিশ্বাস আর উদ্বিগ্নতাকে মেইন থিম হিসেবে নিয়ে তৈরি করা হয়েছে মুভি “ইয়্যু, দ্যা লিভিং”। মুভির নামটা আপনারেই সরাসরি এড্রেস কইরা যায়। মুভিটা আপনার জীবন নিয়াই বানানো। মুভির শুরুর দিকেই একটা স্থুলাকায় মেয়েকে দেখা যায় তাঁর স্বামী/বয়ফ্রেন্ডকে রিপিটেডলি বলতেছে, “আমারে কেউ বোঝে না”। বলতেছে, কাঁদতেছে আর সিগারেট টানতেছে। মুভির কাহিনীটা একটা শহরে বাস করা অনেকগুলা মানুষের জীবনের উপর ভিত্তি কইরা গইড়া উঠে যেখানে সবগুলো মানুষই আপনি নিজে। কিন্তু মুভিটা সারেয়াল কমেডি হউয়ার কারণে আপনি লিনিয়ার কোন কাহিনী এইখানে খুঁইজ নাও পাইতে পারেন। যা পাইবেন তা হইল ‘স্লাইস অফ পোস্টমডার্ন লাইফ’

এই লাইফে টেকনোলজির আশীর্বাদে প্রয়োজনের চেয়েও অনেক বেশী উপকরণ এভেইলএবল থাকলেও মানুষে মানুষে কোন প্রপার কমুনিকেশন নাই।

maxresdefault-1

একই বিছানায় বছরের পর বছর থাইকাও কেউ তাঁর পাশের মানুষটারে এক্স্যাক্ট মনের ভাবখানা বোঝাইতে পারে না। কি যেন এক শক্তি হঠাৎ আইসা আমাদের ভিতরের সত্ত্বাটা থাবা মাইরা নিয়া গেছে অথবা কোন এক অদৃশ্য শক্ত দেয়াল গইড়া উঠছে আমাদের সবার মাঝখানে যা আমাদেরকে বিচ্ছিন্ন কইর রাখে! আর এই বিচ্ছিন্নতাই আমাদের ভেতর তৈরি করে মৃত্যুকামী অভিমান। আমরা যাপন করি প্রাণহীন রক্ত পিপাসু জম্বিদের জীবন। মুভির এক পর্যায়ে দেখায় এক বুড়ো বারান্দায় দাড়িয়ে পাশের দালানের আরেক ভদ্রলোকের অদ্ভুত কাণ্ড লীলা দেখছে। এমন সময় বুড়োর বউ এসে জিজ্ঞাসা করে ‘কি করছো?’। বুড়ো উত্তর দেয়, ‘দাড়িয়ে আছি’। বুড়ি বলে, ‘দাড়িয়ে তো আছো দেখছি। কিন্তু দাড়িয়ে কি করছো?” বুড়ো উত্তর দেয়, “আমি এখানে দাড়িয়ে যেইটা করতাছি সেইটা হইল আমি দাড়ইয়া আছি”

খেয়াল কইরা দেখবেন আমাদের প্রতিদিনের জীবনটাও এমন সারহীন সংলাপ আর মিসকমুনিকেশনে ভরপুর।

আরেক বুড়োকে দেখায় যে সে খুব মিউজিক প্রেমী। সে আস্ত একটা ঢোল আইনা একটা স্ট্যান্ডের উপর রাইখা মিউজিক নোট দেইখা ক্যাসেট প্লেয়ারে বাঁজা মিউজিকের সাথে তাল মিলইয়া বিচ্ছিরি ভাবে পেটাইতে থাকে। আর মুখের ভাবখানা এমন যেন খুব সিরিয়াস কোন মিউজিক চর্চায় সে মত্ত। তাঁর বউ বিরক্তিতে দরজায় খিল দেয়। পুরো মুভি জুড়েই আপনার মনে হইতে পারে যা দেখাচ্ছে সব এক্সট্রিম এবসারডিটি। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে আমাদের বাস্তব জীবন আরও বেশী এবসার্ড যা আমরা নিজেরা যাপন করার কারণে টের পাইনা, পাইলেও বিষয়টা ইগনোর করি। নয়তো বাঁচাটা আমাদের জন্য কঠিন হইয়া পড়ে।

রটেন টমেটোতে মুভিটা ৯৭% ফ্রেশ। সারিয়াল টেইস্ট পাইতে আর জীবনবোধ বাড়াইতে আগ্রহীদের জন্য মুভিটা হাইলি রেকমেনডেড। আইএমডিবি রেটিং ৭.৫।

Comments

comments

2,265 views

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *