কোলরিজের কবিতা: বুড়ো নাবিকের গান (দ্বিতীয়াংশ)

সূর্যটা এখন উদিত হলো ডান দিকটায়, যেন সাগরের নিচ থেকে ভেসে উঠলো, এখনো কুয়াশায় লুকিয়ে আছে, বাঁ দিকটায়, ডুব দিলো সাগরে। এবং এখনো সুন্দর দখিনা বাতাস বয়ে চলছে পেছনে, কিন্তু এবার কোনো সুন্দর পাখি আমাদের পিছু নেয়নি, না কোনো পাখি এসেছিলো খেতে অথবা খেলতে নাবিকের কামরায়! এবং আমি একটা পাপিষ্ঠ কাজ করে বসেছি, যা তাঁদের […]

কোলরিজের কবিতা: বুড়ো নাবিকের গান (প্রথমাংশ)

ভূমিকা ইংরেজ রোমান্টিক কবি স্যামুয়েল টেইলর কোলরিজ তাঁর এই কবিতা “দ্যা রাইম অব দ্যা এইনশানট মেরিনার” এর জন্য সুবিখ্যাত। কবিতাটা মূলত কাহিনী নির্ভর। প্রশান্ত মহাসাগরে প্রচণ্ড ঝড়ের কবলে পড়ে, অদ্ভুত সব ঘটনা আর এডবেঞ্চারের মধ্য দিয়ে কিভাবে বৃদ্ধ নাবিক দেশে ফিরে আসে সেই লোমহর্ষক ভূতুড়ে কাহিনী বুড়ো লোকটি মানুষকে ধরে বসিয়ে শোনায়। একবার, দুইবার, বারবার। কবিতাটা […]

দি ড্রাগ

শইল্যে আর সয় না মনে কি সয়? আত্মায়? শেফালির মা’র দেহ গ্লানি, মনোগ্লানি— কত ভার সংসারের? দার্শনিকের এত গ্লানি, যন্ত্রণায়— কত ভার চেতনের? সিনেটরের দীর্ঘ মুখ ঝুলে পড়ে অনিচ্ছায়— কত ভার গাম্ভীর্যের? আঁখিজলে ধর্মযাজক কপোল ভাসে অনুশোচনায়— কত ভার আদিপাপের? তবুও সয় সয় লো—এই জগতের ভার। একটু যে সুখ, একটা যে নেশা জীবনের।

মেরুসঙ্গম

ধরো তুমি উত্তর আর আমি দক্ষিণ যখন প্রবেশ করি তোমার ভেতর— আমি ভুলে যাই ঈশ্বরের কথা, অথবা ঈশ্বর ভুলে যান নিজের কথা। শরীর থেকে খসে পড়লে ঐশ্বরিক বসন, আমি হয়ে উঠি এক পূর্ণ মানব। সাক্ষাৎ হয় উত্তর আর দক্ষিণ মেরুতে। ধরো তুমি উত্তর আর আমি দক্ষিণ যখন প্রবেশ করি তোমার ভেতর— তুমি আর তুমি থাকো […]

অ-মৃত্যু

আমাকে ভেঙ্গে পড়তে দাও, আর কত শির উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকার শাস্তি দেবে আমায়? সৌন্দর্যের পদতলে দলিত মথিত হোক আমার অহং। আমাকে গলে যেতে দাও, শক্ত হয়ে থাকার ভার আমি আর কত বইব, বলো? এক আঁজলা প্রেমেই গলে বেয়ে সমুদ্রে নেমে যাক আমার অহং। আমাকে মরে যেতে দাও, বেঁচে থাকার ভান করে করে আমি কি […]

একা

যখন আমাকে দেখো তুমি একা লাগে না? যেন শীতের দুপুরে আমি কুণ্ডলী পাকানো কুয়াশা, আমার কারণে সূর্যের সঙ্গবিহীন দুপুরটার যেমন একা লাগে। পুকুরের জলে একটা আস্ত নদী এনে ডুবিয়ে দিলে জলের শরীর বেড়ে যেমন গাঢ় হবে পুকুরের একাকীত্ব— তেমনি আমি তোমাতে ডুবলেও কি তোমার একা লাগবে না? গভীর ধ্যানে আমার মনযোগের নিরবিচ্ছিন্নতায় যখন নিঃশ্বাসটা একা […]

সন্ধিক্ষণ

নিঃশ্বাস নেয়া আর ছাড়ার মধ্যিখানের গ্যাপ— মুহূর্তে থেমে যায় ব্রহ্মাণ্ডের সব স্পন্দন, মৃত্যু হয় সব কিছুর। স্বাদের মৃৃত্যু—কোলে নিয়ে বসে থাকে অন্তহীনতা। এই মৃত্যু মুহূর্তে আমি নৈকট্য পাই তোমার। এখানেই গড়ে উঠে আমাদের সংসার। স্থির সংসার। সবকিছু বড় হয়, বুড়ো হয়, জীর্ণতায় ফুটে উঠে তোমার পুরনো সৌন্দর্য, আমার মুচকি হাসিতে এই প্রলম্বিত মৃত্যু—নিঃস্বেশ হয় পরবর্তী […]

লক্ষ্মী

তখন সন্ধ্যে হলেই মা কুপি জ্বালাতে বলত, কিংবা হারিকেন, মাঝে মধ্যে ভুল করে একটু দেরি হয়ে গেলে জুড়ে দিত চেচামেচি। ঘরে নাকি লক্ষ্মী আসবে না! লক্ষ্মীর কথাটা কানে গেলেই একটা আবছা অবয়ব ভেসে উঠত আমার চোখে, কোন ধর্মীয় লক্ষ্মী নয়,একজন স্মিত হাস্য মানবী। টের পেতাম কুপি না জ্বালালেই সে বরং আসে, মাকে সেটা বলতে পারতাম […]

নট টু লাভ ইউ

তোমাকে ভালোবাসব না বলে আমি যুদ্ধে গিয়েছি বারবার রক্তের গন্ধে ভুলিয়ে রেখেছি নিজেকে। তোমাকে ভালোবাসব না বলে আমি নিজেকেও ভালোবাসিনি কখনও মুখ দেখাও ছেড়ে দিয়েছি আয়নায়। তোমাকে ভালবাসব না বলে আমি কত বসন্ত কাটিয়েছি হাইপার স্লিপে অথচ প্রতিবার জেগে উঠেই দেখি— তোমাকে ভালোবাসার ইচ্ছেটায় পাতা গজিয়েছে সবুজ, গাঢ় সবুজ। মার্চ ২০, ২০১৯

ঈশ্বরের মৃত্যু

প্রত্যুষে জেগে উঠে একদিন দেখলাম পৃথিবীতে আমি ছাড়া আর কেউ নেই। সবাই রাতারাতি কোথায় যেন হাওয়া হয়ে গেছে। শুধু আমি আছি। আমি আর আমি। ভাবলাম এই বুঝি এখনই মরে যাব একাকীত্বের তাড়নায়। কিন্তু না— সেদিনই প্রথম আমার বোধ হয়নি কোন একাকীত্ব। পুরো ব্রহ্মাণ্ড যেন ঢুকে পড়েছে আমার ভেতর। এরপর থেকে প্রায়ই আমি মেরে ফেলি পৃথিবীর […]