যদিও থমাস হবস মূলত তার রাজনৈতিক দর্শনের জন্য সুপরিচিত, আন্যান্য বিষয়ে তার লেখার পরিমাণও কম নয়। তার বেশীরভাগ চিন্তাধারাই বিতর্কিত, এর মধ্যে রয়েছে ফিজিক্যালিজমের পক্ষে তার জোর গলার সাফাই—যে তত্ত্বানুসারে বলা হয় যে জগতের সবকিছুই শারীরিক, এখানে শরীর ব্যতিত অন্য কোন অস্তিত্ব, যেমন মন অথবা অতিপ্রাকৃতিক কোন সত্তার জায়গা নেই। হবসের মতে, মানুষ সহ সকল […]
ইরাসমাসঃ বোকারাই সবচাইতে সুখী
১৫০৯ সালে লেখা আলোচনা-গ্রন্থ ‘প্রেইজ অব ফলি’-তে ইরাসমাস কিছু মানবতাবাদী ধারনা তুলে ধরেছিলেন যা গোটা ইউরোপ জুরে ছড়িয়ে পড়েছিল নবজাগরণের শুরুর দিকের বছরগুলোতে এবং যা সংস্কার সাধনে পালন করেছিল এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। বইটা মূলত ক্যাথোলিক চার্চের দুর্নীতি আর মতবাদের দ্বন্দ্বের উপর করা হাস্য রসাত্মক বিদ্রুপ। তবে বইটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বার্তাও বহন করে—যেখানে ইরাসমাস উল্লেখ করেন […]
প্রোটাগোরাসঃ মানুষই সবকিছুর মাপকাঠি
খ্রিস্টপূর্ব পাঁচ শতাব্দীর দিকে পেরিক্লিসের নেতৃত্বে পাণ্ডিত্য আর শিক্ষার এক ‘সোনালি দিন’-এ প্রবেশকারী শহর এথেন্স হয়ে উঠেছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সমৃদ্ধিশালী নগর-রাজ্য। গ্রীসের নানান জায়গা থেকে লোকজন তখন আসা শুরু করেছিল সেখানে। এদের মধ্যে যারা সেখানকার আইন বুঝতো এবং সেটাকে ব্যাখ্যা করতে পারতো, তাদের জন্য এই শহরটা ছিল ভালো একটা উপরি আয়ের জায়গা। প্রতিষ্ঠিত একটা […]
মন্টেইনঃ খ্যাতি আর মানসিক প্রশান্তি কখনই শয্যাসঙ্গী হতে পারে না
মন্টেইন তার প্রথমদিককার লেখা প্রবন্ধ ‘অন সলিটিউড’-এ জনপ্রিয় প্রাচীন একটি বিষয় নিয়ে কথা বলেছিলেন, সেটা হলঃ অন্যদের ভিড়ে বাঁচার নৈতিক এবং বুদ্ধিগত বিপদ, এবং নির্জনতার মূল্য। নির্জনতার কথা বলতে গিয়ে মন্টেইন শারীরিক নির্জনতার উপর জোর দেননি, বরং আপামর জনগণের মতামত আর কর্মকাণ্ডে নির্বোধভাবে নিজেকে ছেড়ে দেয়ার আকর্ষণীয় লোভকে সংযত করার ক্ষমতা অর্জনের কথা গুরুত্বের সাথে […]
এপিকিউরাসঃ মৃত্যুকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই
প্লেটো আর অ্যারিস্টটলের চিন্তা যখন ইতোমধ্যে প্রাচীন গ্রীস দর্শনের চূড়ায়, তখন জন্ম হয়েছিলো এপিকিউরাসের। দার্শনিক চিন্তার মূল ফোকাস তখন অধ্যাত্মতত্ব থেকে সরে যাচ্ছিলো নীতিশাস্ত্রের দিকে—রাজনৈতিক নীতিশাস্ত্র থেকে ব্যক্তিগত নীতিশাস্ত্রের দিকে। যাইহোক, পূর্ববর্তী দার্শনিকদের অনুসন্ধান, যেমন মানুষের মৌলিক ধ্যান-ধারণা এবং মূল্যবোধের সত্যকে পরখ করা নিয়ে সক্রেটিসের চিন্তায় এপিকিউরাস খুঁজে পেয়েছিলেন নতুন চিন্তার বীজ। মানুষের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য […]
জিনোঃ জীবনের লক্ষ্য হল প্রকৃতির সাথে এক হয়ে বাঁচা
অ্যারিস্টটলের মৃত্যুর পর পশ্চিমা দর্শনে দুটি প্রধান দার্শনিক চিন্তার স্কুলের আবির্ভাব হয়েছিলো। একটা ছিল এপিকিউরাসের ঈশ্বরহীন আনন্দবাদী নীতি—যেটা লোকের কাছে খুব একটা গ্রহণযোগ্যতা পায়নি, আর আরেকটা ছিল জিনো অফ সিটিয়াম-এর জনপ্রিয় এবং দীর্ঘ মেয়াদী নিঃস্পৃহবাদ। জিনো ডাইয়োজিনিস-এর অনুসারী সিনিকদের সাথে পড়ালেখা করেছিলেন—যেখানে তিনি ব্যক্ত করেছিলেন জীবনের প্রতি তার বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন দৃষ্টিভঙ্গির কথা। আধ্যাত্মিক জল্পনা-কল্পনায় তার ধৈর্য […]
ডাইয়োজিনিসঃ অল্পতে যে তুষ্ট সেই ধনী
ডাইয়োজিনিসের কথা বলতে গিয়ে প্লেটো একবার বলেছিলেন, “সে হল পাগল হয়ে যাওয়া সক্রেটিস।” যদিও কথাটা উনি বলেছিলেন অপমান করার উদ্দেশ্যে, কিন্তু কথাটা খুব একটা মিথ্যা না। সক্রেটিসের মত ভালো কাজ করা এবং জাগতিক আরাম-আয়েশকে প্রত্যাখ্যান করার অনুরাগ ডাইয়োজিনিসেরও ছিল, কিন্তু ডাইয়োজিনিস সেটাকে নিয়ে গিয়েছিলেন চরম পর্যায়ে। তার মতে, একটা ভালো কিংবা বাঁচার যোগ্য জীবন যাপন […]
ডেমোক্রিটাস এবং লিওকিপাসঃ অস্তিত্বে শূন্য আর পরমাণু ছাড়া কিছু নেই
ব্রহ্মাণ্ড কি একটা একক মৌলিক উপাদান থেকে তৈরি কিনা সেটা নিয়ে দার্শনিকরা ভাবা শুরু করেছিলেন খ্রিস্টপূর্ব ছয় শতাব্দীর পর থেকে। পঞ্চম শতাব্দীর দিকে, গ্রীসের এবডেরা থেকে ডেমোক্রিটাস এবং লিওকিপাস নামে দু’জন দার্শনিক বললেন যে, ব্রহ্মাণ্ডের সবকিছু একটা ক্ষুদ্র, অদৃশ্য এবং অপরিবর্তনীয় কণা দ্বারা তৈরি, যার নাম উনারা দিয়েছিলেন পরমাণু। প্রথম পরমাণু থিওরি ডেমোক্রিটাস এবং লিওকিপাস […]
হেরাক্লিটাসঃ জগতে কোন কিছুই স্থির নয়
পশ্চিমা দর্শনের শুরুর দিকে ব্রহ্মাণ্ডের শারীরিক প্রকৃতি নিয়ে নানান বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা উদ্ঘাটনে গ্রীক দার্শনিকরা যখন মহা ব্যস্ত, হেরাক্লিটাস তখন বলে উঠলেন যে ব্রহ্মাণ্ডে সবকিছুই একটা ঐশ্বরিক লোগো দ্বারা পরিচালিত। এই লোগোকে মাঝে মাঝে বলা হয় ‘যুক্তি’ অথবা ‘তর্ক’। হেরাক্লিটাসের মতে, লোগো হল সর্বজনীন—একটা মহাজাগতিক নিয়ম, যাকে কেন্দ্র করেই অস্তিত্বশীল হয় সকল কিছু এবং যার মাধ্যমে […]
থেলিস অফ মিলেটাসঃ পানিই সকল বস্তুর উৎস
খ্রিস্টপূর্ব ৮-৬ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ের দিকে গ্রিসের উপদ্বীপবাসীরা ধীরে ধীরে শহর-নগরে বসতি শুরু করে দিয়েছিলো। তৎকালে তারা বর্ণানুক্রমিক লেখার একটি পদ্ধতি তৈরি করেছিলো, যার সাথে সাথেই খুলে গিয়েছিলো দর্শন-জগতের এক মহাদরজা যা আজকে আমাদের কাছে পশ্চিমা দর্শন নামে পরিচিত। এর আগের বিদ্যমান সভ্যতাগুলোর কাছে তাদের চারপাশের ঘটনা-দুর্ঘটনাগুলোকে ব্যাখ্যা করার একমাত্র ভরসা ছিলো ধর্ম। সেখানে এখন […]