আবু কাউছারের স্বর্গ

রাত এগারোটা কি বারোটা হবে। বারোটা হলেই বোধহয় সুবিধে। ঘটনা কিংবা দুর্ঘটনা ঘটার জন্য একটা উপযুক্ত সময়। স্ট্রিট ল্যাম্পের নিঃসঙ্গ আলোটা অথবা এটা চাঁদের আলোও হতে পারে—কারণ তখনো শহরে দৈত্যাকার দালানগুলোর মাথা ডিঙিয়ে চাঁদটা নিজের একাকীত্ব বিছিয়ে দিতে নেমে আসতো পিচঢালা রাস্তাগুলোতে, কাঁচ ভেদ করে উঁকি দিত দিবসের ক্লান্তিতে ঝিমুনি ধরা সেলুন কিংবা বন্ধকীর দোকানে—লাল […]

দুঃখাক্ষেপ

‘মাগো, তোর-ই গর্ভে আমায় কেন করেছিলি ধারন, আমি পাই না তো খুঁজে হায় এই বেঁচে থাকার কারণ…’ গানের দুটো লাইন। মারুফের মাথায় গুনগুন করে বাজে। অনেক সুখে কিংবা অনেক দুঃখে কিংবা সম্পূর্ণ বোধহীনতায়। মাঝে মাঝে রাতটা যখন কৈশোর থেকে যৌবনে মোড় নেয়ার প্রস্তুতি নেয় তখন কিংবা দিনটা যখন মরার জন্য ঠোঁটে শুকনো হাসি নিয়ে গোধূলির […]

অর্ক

১৯৬৮ সাল। একটা জমাট বাঁধা উত্তেজনা আনন্দে রূপ নিয়ে ছাগল শাবকের মত লাফিয়ে বেড়াচ্ছে সাত বছর বয়সী অর্কের মনে। কারণ এই মাত্রই অর্ক বেশ কিছুদিন ধরে চেষ্টা করে যাওয়া একটা যন্ত্র বানানোর কাজ সফলভাবে শেষ করতে সক্ষম হয়েছে। যন্ত্রটা দিয়ে এখন সে দূর থেকেই তার কুকুরের ঘরের দরজাটা খুলতে এবং বন্ধ করতে পারবে। ব্যাপারটা আনন্দেরই। […]

স্বপ্নান্তর

মধ্যরাত। সিগারেট টানছি। ধোঁয়া ছাড়ছি। টানা আর ছাড়ার মাঝখানে প্রতিবারই সিগারেটটা ছাইদানির মুখের কাছে নিয়া তর্জনী দিয়ে টোকা দিচ্ছি। সিগারেট খাওয়ার সময় এতবার টোকা দেয়ার কোন দরকার নেই। কিন্তু আমি দেই। এটা আমার অভ্যাস। এই অভ্যাস আমার ছাড়তে ইচ্ছা করে না। সিগারেটে কোন স্বাদ নেই। বিস্বাদ লাগছে। তবুও টেনে যাচ্ছি। আসলে সিগারেটে কখনই কোন স্বাদ […]

নৈশূন্য

কালো পিচের রাস্তাটাকে দন্তহীন মুখে চুমু খেতে খেতে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে তিনটে কালো টায়ার। ঠিক যে সামনে এগুচ্ছে সেটাও বলা যাচ্ছে না। কারণ টায়ারের কাছে সামনে-পেছনে বলে কিছু নেই। এরা শুধু ঘুরে আর চুমু খায়। চুমু খেতে খেতে কোথায় যায় এরা জানে না। কেন ঘুরে সেটাও জানে না। পেট ভর্তি এদের উষ্ণ হাওয়া। যখন খিদে […]

এমোরাল

তখন নাইট শিফটে কাজ করি। অফিস শুরু হয় রাত দশটায়, শেষ হয় সকাল সাতটায়। সারারাত লম্বা একটা ডেস্কে সারিবদ্ধ ভাবে বইসা সামনে দুইটা মনিটরের দিকে তাকাইয়া থাইকা, ডান হাত দিয়া মাউস নাড়াইয়া, দুই হাতের দশ আঙুল দিয়া কীবোর্ডে টিপাটিপি কইরা পার কইরা দিতাম রাতের পর রাত। কাজগুলা ছিল গদবাঁধা, তার মানে খুব একটা সহজ যে […]

অগ্নিচোখ

হসপিটালের লাউঞ্জে বইসা আছি। ডাক্তার আসবে। কম্পাউণ্ডাররে জিজ্ঞেস করলেই সে একঘেয়ে ভাবে বইলা যাইতেছে ‘স্যার আসতেছে, পথে’। কিন্তু অনন্তকাল পার হইয়া যায়, তাঁর স্যার আর আসে না। এইটা ডাক্তারদের স্বভাব। কনসাল্টিং আউয়ারে আইসা এরা প্রায় কখনই পৌছায় না। তবে অনন্তকাল পার হইয়া গেলেও এইটা নিশ্চিত যে ডাক্তার আসবে। দেরি করলেও এরা আসে। এই ব্যপারটারে মন্দের […]

গল্পঃ বর্ষা ও মৃত্যুর পরশ

খস খস শব্দ করে ছোট মামা তাঁর রুক্ষ পা দুটোতে জোরসে তেল মেখে যাচ্ছে। হাত বাড়িয়ে তেলের শিশিটি নিয়ে নিল মামুন। বোতলটি কাত করে সাবধানে হাতের তালুতে একটু ঢেলে নিয়ে সেও মাখতে শুরু করল নিজের পায়ে। এখন আমাকেও মাখতে হবে। এটা মাছ ধরার পূর্ব প্রস্তুতি। বিলের জলে বেশিক্ষণ থাকলে পানি কামড়ায়। আর এই পানির কামড় […]

অনুবাদ গল্পঃ ডিম

যখন মারা গেলেন, তখন আপনে বাসায় ফিরতেছিলেন। সড়ক দুর্ঘটনা ছিলো। উল্লেখযোগ্য কিছুই না, তারপরেও ব্যপারটা সাংঘাতিক। আপনে বউ আর দুইটা বাচ্চা ফালাইয়া মইরা গেছেন। মৃত্যুটা ছিলো যন্ত্রনাহীন। ডাক্তাররা অনেক চেষ্টা করছে আপনারে বাঁচানোর, কিন্তু তাঁদের চেষ্টায় কাজ হইলো না। আপনার পুরা শরীরের সব হাড়গোড় চুরমার হইয়া গেছিলো, মইরা গেছেন এইটাই ভালো হইছে, বিশ্বাস করেন। এরপরই […]