“বেটার ফিউচার” নামক ভবিষ্যতের মূলা

প্রায় সব মানুষেরই বর্তমানটা সবসময় মিজারেবল থাকে। এবং এইটা শুধু ইনডিভিজুয়াল লেভেলে না, ন্যাশনাল ও ইন্টারন্যাশনাল লেভেলেও একই অবস্থা। সবসময়ই সবার মনে হয় সময়টা এখন বড় খারাপ, অস্থির। কখন না আবার তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাইধা যায়! তাই সবাই বর্তমানের চাইতে ভবিষ্যতটা যেন আরও খারাপ না হইয়া যায় সেই চিন্তা কইরা একটা “বেটার ফিউচার” এর জন্যে কাজ কইরা যায়। সবাই নিজের জীবনটারে স্যাক্রিফাইস কইরা যায়। নিজের সন্তানের ভবিষ্যৎ, দেশের ভবিষ্যৎ, জাতীর ভবিষ্যৎ, সবরকমের ভবিষ্যতের জন্যে সবাই প্রস্তুতি নিতে থাকে। কেউ কেউ আছে দুনিয়া উদ্ধারের অভিযানে নাইমা সারাক্ষণ শুধু আগামী, আগামী বইলা চিল্লায়, কিন্তু আজকের কি হইব সেইটা নিয়া তাঁদের কোন মাথা ব্যথা নাই। এখন প্রশ্ন হইলো, এই আগামীটা আসলে কবে আসব? আগামী কি আদৌ আসে?

চিন্তা করেন আজ থাইকা পাঁচ হাজার বছর আগের কথা। তখন থাইকা প্রতিটা জেনারেশন তাঁর পরের জেনারেশনের “বেটার ফিউচার” এর জন্যে কাজ কইরা গেছে, নিজের জীবনরে স্যাক্রিফাইস কইরা গেছে। আজকের আমাদের এই সময়টা তাঁদের জন্যে ছিল ফিউচার। তাঁরা আমাদের কথা অনেক চিন্তা করছে। এখন দেখেন তাঁরা আমাদেরকে কি ভবিষ্যৎ উপহার দিছে! আজকে আমরা যেই বর্তমানে আছি সেইটা কি আসলেই বেটার? মোটেও না। কেউই এই বর্তমান নিয়া সন্তুষ্ট না, বরং সবাই এখন সারাক্ষণ ভয়ে থাকে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, পারিবারিক সবরকমের ভয় এখন প্রতিটা মানুষরে গ্রাস কইরা রাখছে।

এখন আজ থাইকা পাঁচ হাজার বছর পরের কথা চিন্তা করেন। প্রতিটা জেনারেশন, প্রতিটা বাপ, প্রতিটা মা, প্রতিটা শিক্ষক, প্রতিটা ধর্ম যাজক — সকলেই মিলাই একটা বেটার ফিউচার তৈরিতে প্রতিনিয়ত ব্যস্ত হইয়া থাকব, এবং আছে। পাঁচ হাজার বছর পরে গিয়া যে একটা “বেটার ফিউচার” তৈরি হইয়া যাইব এইটার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। এখন যেহেতু ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত তাই এইটা নিয়া আমি জোর গলায় কিছু বলতে চাই না। তবে যা অতীত হইয়া গেছে তা নিয়া বলা যায় এবং যা বর্তমানে ঘটতাছে তা নিয়াও।

ভবিষ্যৎ সৃষ্টির এই প্রতিযোগিতায় গত পাঁচ হাজার বছরে কি ঘটলো? দুইটা জিনিস ঘটছে। প্রথমত তাঁরা তাঁদের বর্তমানটারে ধ্বংস করছে। তাঁরা বর্তমানে বাঁচে নাই। তাঁরা শুধু স্যাক্রিফাইস কইরা গেছে। তাঁরা ভাবছে তাঁরা শহীদ হইতেছে, তাঁরা ভাবছে তাঁরা মানবতার জন্যে অনেক বড় সার্ভিস দিয়া যাইতেছে। কিন্তু তাঁরা আসলে মানবতার জন্যে অনেক বড় ক্ষতি কইরা গেছে। কারণ তাঁরা নিজের জীবনটারে অপচয় করছে। জীবনে যেই সময়টা পাইছে সেই সময়টা তাঁরা ঠিকমত বাঁচে নাই। অস্তিত্বের দেয়া উপহারটারে তাঁরা উপভোগ করে নাই। দ্বিতীয়ত, তাঁরা মোটেও কোন বেটার ফিউচার তৈরি করতে পারে নাই। সেইটা এখন আমরা এমনিতেই দেখতে পাই। এমনটা কেন হইল? কারণ, তাঁরা সবাই ভুইলা গেছে যে বর্তমান থাইকাই ভবিষ্যতের জন্ম হয়, একটা মুহূর্ত আরেকটা মুহূর্তের জন্ম দেয়। এই মুহূর্তে আপনে ঠিক ভাবে বাঁচলে এইখান থাইকা পরের মুহূর্তে নতুন জীবনের জন্ম হইব। সুতরাং বর্তমানে বাঁচার মধ্য দিয়াই আপনে ভবিষ্যৎ সৃষ্টি করতে পারবেন। এইটার অন্য কোন পন্থা নাই।

একবার চিন্তা কইরা দেখেন, ভবিষ্যৎ নিয়া আমাদের যেই লজিক কাজ করে সেইটা কতটা ফুলিশ এটিটিউডে আমাদেরকে নিয়া যায়। বাপরে বলা হয় যে তাঁকে অবশ্যই তাঁর সন্তানের জন্যে নিজের জীবন স্যাক্রিফাইস করতে হইব, কারণ তাঁর বাপ তাঁর জন্যে নিজের জীবন স্যাক্রিফাইস করছিল। এইখানে না তাঁর বাপ নিজে ঠিক মত বাইচা ছিল, না সে নিজে এখন ঠিকমত বাচতেছে, না তাঁর সন্তানগুলা ভবিষ্যতে ঠিকমত বাঁচব, কারণ তাঁরাও তাঁদের জীবন স্যাক্রিফাইস কইরা যাইব পরের প্রজন্মের জন্যে। সবাই তাঁর পরের জেনারেশনের জন্যে স্যাক্রিফাইস কইরাই যাইতেছে। অদ্ভুদ! তাইলে আসলে বাঁচব কোন জেনারেশন?

শরিফুল ইসলাম। নভেম্বর ১৭, ২০১৬।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *