ভালোবাসায় ঢেউয়ের উঠানামা

আপনে যখন কাউরে ভালোবাসেন, তখন তাঁরে আপনি সারাজীবন প্রতিটা মুহূর্তে একই রকম ভাবে অথবা একই তালে ভালোবাসতে পারেন না। এইটা একটা অসম্ভব ব্যাপার। এবং এইটারে সম্ভব মনে করাটাও একটা বড় ধরণের মিথ্যা, নিজের সাথে প্রতারণা। কিন্তু তারপরেও আমরা সবাই ঠিক এই জিনিসটাই দাবী কইরা বসি। আমরা চাই আমাদের ভালোবাসার মানুষটা যেন আমাদেরকে সারাটি জীবন একই ভাবে ভালোবাসে। জীবনের উত্থান-পতন, জীবনের স্রোত, ভালোবাসা, আর পারস্পরিক সম্পর্কের উপর আমাদের বিশ্বাস খুবই ঠুনকো। আমরা লাফ দিয়ে জীবনের ঢেউয়ের উপর উইঠা বসি, তারপর ঢেউয়ের নিম্নগামিতাকে জোর কইরা আটকানোর চেষ্টা করি। ঢেউটা নাইমা যাইব, মিশা যাইব এইটা আমরা মানতে পারি না। আমরা ভঁয়ে থাকি এইটা যদি আর ফিরা না আসে। আমরা সবসময় সবকিছুর স্থায়িত্ব চাই, নিরবিচ্ছিন্নতা চাই, সবকিছুরেই দীর্ঘ সময়ের জন্যে নিজের কইরা চাই; অথচ আমরা ভুইলা যাই যে জীবনে, ভালোবাসায়, বেঁড়ে উঠায়, তারল্যে—স্বাধীনতায় নিরবিচ্ছিন্নতা কেবল তখনই সম্ভব, যখন আপনে বুঝতে পারবেন যে ড্যান্সাররা ড্যান্স করার সময় তাঁদের পার্টনারকে স্পর্শ করে কদাচিৎ, কারণ দুজনেই নাচে একই প্যাটার্নে। এবং সম্পর্ক হইলো এক ধরণের ড্যান্সিং।

আমরা নিরাপত্তা চাই। কিন্তু কোন কিছুর মালিকানা কিংবা স্বত্বাধিকার দিয়া কখনও নিরাপত্তা আসে না, দাবী দিয়াও নিরাপত্তা আসে না, এমনকি প্রত্যাশা দিয়াও তা আসে না। সম্পর্কের মধ্যে অতীতের স্মৃতি নিয়া নস্টালজিয়ায় ভোগার মধ্যে কোন নিরাপত্তা নাই, কিংবা ভবিষ্যতে কি হইতে পারে এইটা নিয়া সাংঘাতিক দুশ্চিন্তায় ডুইবা যাওয়ার মধ্যে দিয়াও সম্পর্কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় না, সম্পর্কে নিরাপত্তা আসে বর্তমানে বাঁচার মধ্য দিয়া, আর বর্তমানরে সাদরে গ্রহণ কইরা নেওয়ার মধ্য দিয়া। সম্পর্কগুলা হইতে হবে দ্বীপের মত, সবাইরে তা দ্বীপের সীমাবদ্ধতা সইই মাইনা নিতে হবে, দ্বীপরে যেমন সমুদ্র চারিদিক থাইকা ঘিরা রাখে, এবং সবসময় তাঁর মনযোগে ব্যাঘাত ঘটায়, এবং সমুদ্রের ঢেউ যেমন নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে দ্বীপের কাছে আসে আবার চইলা যায়, সম্পর্কের মধ্যে ভালোবাসাও ঠিক তেমনই।

তর্জমা।। অগাস্ট ২৯, ২০১৬।
মূলঃ অ্যান মরো লিন্ডবার্গ, গিফট ফ্রম দ্যা সি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *