abstract Fiber bouquet by David Moreno Dominguez

মনের ঘরে (৩)

 ৮

হিউম্যান মাইন্ডের সবচাইতে ভালনারেবল তথা ভঙ্গুর পার্ট হইল এইটাকে সহজেই ম্যানিপুলেট করা যায়। ম্যানিপুলেশন দুই ভাবে ঘটেঃ মাইন্ড নিজেই নিজেকে ম্যানিপুলেট করতে পারে (এইক্ষেত্রে মাইন্ড স্প্লিট হয়ে দুই বা ততোধিক ভাগে ভাগ হয়ে কাজ করে) এবং এক মাইন্ড অন্য মাইন্ডকে ম্যানিপুলেট করতে পারে। সাধারণত চাকরি-বাকরি, পরিবার, বন্ধু মহল এবং প্রেমিক-প্রেমিকাদের ক্ষেত্রে এক ইনডিভিজুয়াল আরেক ইনডিভিজুয়ালকে ম্যানিপুলেট করে নানান ছলে। তবে ইনডিভিজুয়াল ছাড়াইয়া সবচাইতে বেশি যে ম্যানিপুলেশন হয় সেইটা হইল ‘মাস ম্যানিপুলেশন’ অর্থাৎ গ্লোবাল কিংবা লোকাল জনগোষ্ঠীর ম্যানিপুলেশন। হিউম্যান মাইন্ডের এই ম্যানিপুলেশনের উপর ভিত্তি কইরাই গড়ে উঠে পৃথিবীর হাজারো রকম ব্যবসা। এইটার উপর ভিত্তি কইরাই ব্যবসা ক্ষেত্রে আবির্ভাব হয় ‘মার্কেটিং’ নামক এক জিনিস। তার উপর আছে বিজ্ঞাপন। সাধারণত মানুষ দৈনন্দিন যতগুলা দ্রব্যাদি বাজার থেকে কিংবা অনলাইন ক্রয় করে সেগুলার প্রায় নব্বই ভাগই সারভাইবালের ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয়। মাইন্ড ম্যানিপুলেশনের মাধ্যমে সহজেই অপ্রয়োজনীয় জিনিসকে প্রয়োজনীয় হিসেবে তুলে ধরা যায়, শুধু তাই না, সেই অপ্রয়োজনীয় জিনিসের গুরুত্ব এমনভাবে মাইন্ডে প্রবেশ করানো সম্ভব যে সেটা না পাইলে মাইন্ড ডিরেক্টলি ডিপ্রেশনে চাইলা যাইতে পারে। ব্যবসা ক্ষেত্র ছাড়াও ম্যানিপুলেশন ঘটে আইডিয়া, আইডিওলজি, আদর্শ এবং মতাদর্শের মাধ্যমে।

হিউম্যান মাইন্ড অলমোস্ট ২৪ ঘণ্টা বিভিন্ন বায়াসনেসে ভোগে। অবেজকটিভ গুটিকয়েক কাজ যেমন হাটা চলা, খাওয়া (কিছু ক্ষেত্রে এগুলাও) ইত্যাদি ছাড়া প্রায় প্রতিটা কথা, প্রতিটা চিন্তা এবং প্রতিটা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে মানুষ সম্পূর্ণ বায়াসড হয়ে। মানুষের ঘুমের মধ্যে দেখা স্বপ্নগুলাও সম্পূর্ণ কিংবা প্রায় সম্পূর্ণ বায়াসড। ইভ্যুলুশনারি সাইকোলজি অনুযায়ী মানুষের মিনিমাম ২৫ ধরনের কগনিটিভ বায়াস আছে, যার উপর নির্ভর করে তার প্রতিটা ডিসিশন মেকিং। এই ২৫টা ছাড়াও আনডিফাইনড বায়াস আছে আরও অনেক। আপনি খুব সম্ভবত আমার এই লেখাটা পড়ার সময়ও বায়াসড হয়ে পড়ছেন। আমার নিজেরেও কয়েক ধরনের বায়াস কাজ করছে এই লেখা চলাকালীন সময়েই। বায়াসড ব্যাপারটাকে আমরা নেগেটিভলি দেখলেও সবটা এমন না যদি কোন মাইন্ড সেলফ এওয়্যার হইয়া উঠতে পারে। তবে সিগনিফিক্যান্ট আনকনশাস বায়াসে বেশিরভাগ এভারেজ মাইন্ডই ভোগে, যা তাদের চিন্তারে ডিসটর্ট কইরা রাখে সারাক্ষণ। আনকনশাসলি সারাক্ষণ বায়াসড ওয়েতে চিন্তা করাও এভারেজ মাইন্ডের একটা কোপিং ম্যাকানিজম।

১০

কোন না কোন রকমের বিলিফে নিজেরে সইপা দেওয়া হিউম্যান মাইন্ডের একটা বড় টেনডেন্সি। জীবন, অস্তিত্ব এবং মহাবিশ্বের শুরু, শেষ, অর্থ, অনর্থ, উদ্দেশ্য এবং উদ্দেশ্যহীনতা এইরকম ব্যাসিক তবে জটিল চিন্তা কিংবা প্রশ্ন নিয়া হিউম্যান মাইন্ড নিজেরে এক্সজস্ট করতে চায় না। মাইন্ড অন্যান্য অনেক ব্যাপারেই এক্সজস্টেড হয়, তবে এইসব ব্যাপারে চিন্তা করলে যে এক্সজশন আসে তাতে মাইন্ড তার আপাত স্যানিটি হারাইয়া ফেলতে বসে। তাই এইসব বিষয় নিয়া না ভাইবা সেইগুলা বিশ্বাসের উপরে ছেড়ে দেয়। এইখানে পিকুলিয়ার ব্যাপারটা হইল মাইন্ড যখন কোন কিছু জানে না এবং জানতে পারে না, সেইটাই কেবল সে বিশ্বাসের উপর ছাইড়া দেয়, যেটা জানা সম্ভব সেইটা নিজেই ভ্যারিফাই করে। কিন্তু না জানারে ‘জানি না’ বইলা এডমিট করতে মাইন্ড বরাবরই নারাজ, বরং সে বলে যে বিশ্বাস করি। অন্যদিকে, হিউম্যান মাইন্ডের এই বিলিফ কালেকটিভ সারভাইবালে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিলিফ ছাড়া কোন সোশ্যাইটাল সিস্টেম তথা গল্প কাজ করত না। এক্ষেত্রে হারারির দেয়া ক্লাসিক এক্সাম্পল হইল টাকা। রিয়েল পণ্যের জায়গায় টাকার মত একটা অকেজো কাগজের মাধ্যমে গোটা দুনিয়া জুইরা সবকিছুর লেনদেন করা সম্ভব হইছে একমাত্র মানুষের বিলিফের কারণে।

১১

পৃথিবীতে কৃত্রিম অকৃত্রিম যত ধরনের ফিল্টারের অস্তিত্ব আছে তার মধ্যে সবচাইতে সফিসটিকেটেড ফিল্টার হইল হিউম্যান মাইন্ড। যেকোন সময় যেকোন তথ্য যেকোন মাইন্ডে যখন হিট করে, মাইন্ড তাৎক্ষনিক সেই তথ্যটাকে ফিল্টার কইরা ফেলে। ফিল্টার করে কোন অংশ রাখবে আর কোন অংশ বাদ দিবে সেইটা নির্ভর করে তার প্রেজুডিসের উপর অর্থাৎ পূর্ব বিশ্বাসের উপর। আইডিয়া, বিলিফ এবং নলেজের ক্ষেত্রে ফিল্টার যেমন এভারেজ মাইন্ডকে একটা প্রশান্তির মধ্যে রাখে, তেমনি রিয়্যালিটির গোটা ইনফরমেশনকে প্রসেস করতে এভারেজ, এভাব এভারেজ, লোয়ার এভারেজ সকল মাইন্ডেরই ফিল্টারের প্রয়োজন পড়ে। যখন একটা মানুষ কোন একটা জায়গায় অবস্থান করে কিংবা কোন ইনসিডেন্টে প্রবেশ করে কিংবা যেকোন গিভেন সিচুয়েশনে নিজেকে আবিষ্কার করে, তখন আনলিমিটেড ইনফরমেশন আইসা তার ব্রেইনকে হিট করে। তখন ফিল্টার করে মাইন্ড শুধু রিয়্যালিটির সিম্পল ভার্সনটা গ্রহণ করে, বাকিটা ফালাইয়া দেয়। যেমন, আপনি যদি একটা রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করেন, তখন ইমিডিয়েটলি (শুধু রেস্টুরেন্ট রিলেটেড) অসংখ্য তথ্য আপনার মাইন্ডে হিট করবে – রেস্টুরেন্টের অবস্থান, আয়, ব্যয়, খাবারের মান, খাবার যেখানে রান্না হয় সেটার অবস্থান, মালিক, ওয়েটার, মালিকের বাৎসরিক ইনকাম, মালিকের চৌদ্দগুষ্ঠির ব্যাকগ্রাউন্ড, রেস্টুরেন্টের অন্যান্য কাস্টমার, তাদের কথাবার্তা, আপনি যে টেবিলে বসছেন সেটার আয়তন, ওজন, এবং সেটা যে অণু-পরমাণু দিয়ে গঠিত সেগুলোর অভ্যন্তরীণ কম্পন এইরকম অনেক অনেক তথ্য। এর মধ্য থেকে আপনার মাইন্ড আপাত প্রয়োজনীয় কয়েকটা ইনফরমেশন ফিল্টারআউট কইরা বাকিগুলা সম্পূর্ণ ইগনোর করবে। রিয়্যালিটির ইনফরমেশন ফিল্টারিং হিউম্যান সারভাইবালের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হইলেও, জ্ঞান তথা উইজডম আহরণের ক্ষেত্রে ফিল্টারের ব্যবহার এভারেজ মাইন্ডকে আর বাইড়া উঠতে দেয় না। সেজন্য আমি বলে থাকি, পানি ফিল্টার কইরা খাইয়েন, কিন্তু জ্ঞান ফিল্টার কইরা অর্জন কইরেন না।

০৮-০৪-২০২০

Comments

comments

1,575 views

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *