জীবনের মূল সাধনা কোনটা?

মনুষ্য ইগো বহির্জগতের সবকিছুকে জয় করার যে প্রবণতা ধারণ করে সেটা শানিত হয়ে উচ্চমার্গে গিয়ে পৌঁছায় তখন, যখন সে নিজের প্রবৃত্তিকে জয় করতে আগ্রহী হয়ে উঠে। এটা যেহেতু অন্তর্জগতের কাজ, তাই কাজটা বেশ কঠিন। এই কাজে নামার কথা ভাবতেও দরকার পড়ে এক ধরণের পরিপক্বতার। এর জন্যে মানুষ আধ্যাত্মিক সাধনায় নিমগ্ন হয়।

সাধনা কী? বহির্জগতের কোনকিছুকে জয় করা কিংবা কোন লক্ষ্য অর্জন করার জন্যে যে অনুশীলনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়, অন্তর্জগতে প্রবৃত্তিকে জয় করার সাধনাও তাই। কিন্তু অন্তর্জগতের সাধনায় একটা ভিন্ন ব্যাপার ঘটে। সেটা হল, যে ইগো প্রবৃত্তিকে জয় করতে চায়, সাধনার এক পর্যায়ে সে বুঝতে পারে যে ইগো নিজেই আসলে সকল প্রবৃত্তির ধারক। তখন সাধনার মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় স্বয়ং ইগোকেই জয় করা। মুক্ত হওয়া।

কিন্তু ইগোকে যে জয় করবে সে তাহলে কে? কে ইগো থেকে মুক্ত হবে? ঠিক এই জায়গাটায় এসে ব্যাপারটা খুবই ট্রিকি হয়ে দাঁড়ায়। এই ট্রিকি অবস্থাটা একেকজনের ইগো একেকভাবে হ্যান্ডেল করে থাকে। তাই মানুষে মানুষে সাধনার পন্থা হয় ভিন্ন। তবে সবার ক্ষেত্রে একটা ব্যাপার কমন, সেটা হল, একটা কিছুকে জয় করার সাধনায় নিমগ্ন হওয়ার সুযোগ। সবার ইগোই কিছু একটাকে সামনে রেখে কাজ করে যাওয়ার মধ্যে নিজের স্যানিটি খুঁজে পায়, এমনকি সেটা নিজেকে জয় করা (ইগোর মৃত্যু)-ও হতে পারে।

প্রবৃত্তিকে কি আসলেই জয় করা যায়? এই জয় করার আকাঙ্ক্ষাটা তো একটা প্রবৃত্তিই। দ্যা ডিজায়ার নট টু ডিজায়ার।

প্রবৃত্তি সম্পর্কে সচেতন হওয়া সম্ভব। আত্মসচেতন। সচেতন হলে তখন প্রবাহের দিক পরিবর্তিত হতে পারে, আবার নাও পারে। এতে লাভ কী? এখানে লাভ, আপনি জানেন যে আপনি কী। এটাই আমার মতে মানুষের একমাত্র সাধনা। জয় করাটা একটা লোভ, জয় আদৌ করা যায় না। যদি যায়ও, সেটা করে কী লাভ? যা আছে তাকে উৎখাত করে কোথাও যাওয়া যাবে? আর জয় কে করবে? জয় করবে এমন কোন ফিক্সড ‘সেলফ’ আমাদের ভেতরে নেই।

সচেতনতা কী? নিজের আবেগের প্যাটার্নগুলো দেখা। নিজের ভয়, আনন্দ, দুঃখ, আকাঙ্ক্ষা এসবের রিপিটেশনগুলোকে পর্যবেক্ষণ করা। পাশাপাশি জগতের দিকে তাকানো, রিয়্যালিটির প্যাটার্নগুলোকে দেখা। সবকিছু কীভাবে চলছে, ছুটছে, জন্মাচ্ছে, মারা যাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *