জীবন ও জগৎকে বোঝার ক্ষেত্রে মানুষ সাধারণত অথবা বেশীরভাগ সময় মানুষকেই প্রধান সাবজেক্ট হিসেবে ধরে সামনে এগোয়। এটা হয়তো মানুষের এন্ত্রোপোসেন্ট্রিক তথা মানবকেন্দ্রিক চিন্তা করার ন্যাচারাল ধর্মীয় স্বভাব থেকেই আসে। এমনকি দার্শনিক ও সাইন্টিফিক এক্সপ্লোরেশনেও মানুষ খুব বেশি মানবকেন্দ্রিক চিন্তার বাইরে গিয়ে জিনিসপত্রকে বোঝার চেষ্টা করতে পারে না। এটা হয়তো সম্ভবও নয়। কারণ, মস্তিষ্কের সাবজেক্টিভিটি থেকে বের হয়ে গিয়ে আলাদা হয়ে জগৎকে দেখার এবং এক্সপেরিয়েন্স করার মত কোন সত্তা কিংবা সেলফ আমাদের ভেতরে আছে এমন সলিড কোনকিছুর ডেমোনস্ট্রেশন কখনই কেউ দিতে পারেনি। এই দিতে না পারাটা যে একটা দুঃখের ব্যাপার এমনও নয়। আমাদের সত্তার সলিড কোন মুখাবয়ব না থাকার পরও, আমাদের অনুভূতি আর অভিজ্ঞতায় এটার যে তীব্রতা, ব্যাপারটা ম্যাজিক্যাল। এই যে ‘ম্যাজিক্যাল’ বললাম, এটা বলার সাথে সাথেই মানব মস্তিষ্ক কোন একটা বড় সত্তা কিংবা শক্তি কিংবা পারসোনা কিংবা পারসোনিফাইড ন্যাচারকে এই ম্যাজিকের ক্রেডিট দেয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগে যাবে। কারণ, মানব মস্তিষ্কের ম্যাজিকই তাকে অসহনীয়ভাবে ভঙ্গুর বানিয়ে তুলতে পারে। তাই সে এই ম্যাজিকের ক্রেডিটটা একটা আউটসাইড এজেন্সি কিংবা গডলাইক কোনকিছুকে দিয়ে নিজে হালকা হয়ে থাকতে চায়। এই যে একটা ইন্টারেস্টিং প্যাটার্ন মানব মস্তিষ্কে অস্তিত্বশীল, এটাকে ধরে জগৎ বোঝার ক্ষেত্রে অনেকদূর আগানো যায়, যদিও এই যাত্রার গন্তব্য অনিশ্চিত।
আমাদের সামনে অস্তিত্বশীল জগৎ ও বাস্তবতা পুরোটাই এবসার্ড। এমন এবসারডিটি আপনি মস্তিষ্কের প্যাটার্ন দিয়ে বুঝবেন কীভাবে? বোঝা যাবে আদৌ? যাবে, কারণ, মানব মস্তিষ্কের র্যাশনাল ফ্যাকাল্টিগুলোর কার্যপ্রণালীও এবসার্ড। তবে এই বোঝা মানে আবার সবকিছু “ফিগার আউট” করে ফেলা নয়। এটা বোঝা মানে আসলে রিয়্যালিটির জটিলতাকে সাধারণ মাত্রার চেয়ে বেশি এক্সপেরিয়েন্স করা। এখানে যন্ত্রণার ব্যাপার হল, এটা করার জন্য নিজের দুর্বলতা ও ভয়ানক দিকগুলোকে আগে স্বীকার করে নিতে হয়। এই স্বীকার করাটাও একটা এবসার্ড ব্যাপার।
মানবজাতি মিলিয়ন বছর ধরে তার নিজ নিজ জীবদ্দশায় একটা কাজই প্রধানত করে গেছে, সামনেও করবে, সেটা হল, এই এবসার্ড অস্তিত্বে একটা অর্থ আরোপ করা। তাই মানুষকে বলা হয়, মিনিং মেকিং মেশিন।
জীবন ও জগতের অযৌক্তিকতার উপরে আরোপ করা অর্থকে ধরে রাখতে না পেরে আত্মহত্যা করেছিল আফ্রিকান লেখক চিনুয়া আচেবের “থিংস ফল এপার্ট” উপন্যাসের প্রধান চরিত্র ওকোনকুয়ো।
এক্সিসটেনশিয়ালি এমন ট্র্যাজিক আত্মহত্যা অন্য কোন সাহিত্যকর্মে হয়তো কখনই উঠে আসেনি। ওকোনকুয়ো তার জীবনে যে অর্থ বহন করতো, সে অর্থের সবচেয়ে বড় অংশ ছিল আত্মহত্যাকে ঘৃণার সাথে এড়িয়ে যাওয়া। কিন্তু তার মস্তিষ্ক জগতের এবসারডিটিতে এতটাই হতভম্ব এবং অসহ্য হয়ে পড়েছিল যে, সে নিজের অর্থকেই কন্ট্রাডিক্ট করে নিজেকে খুন করতে বাধ্য হয়েছিল।
মানুষের জন্য ভালো খবর হল, মস্তিষ্কের মিনিং মেকিং-এর ক্ষমতা মানুষকে এক্সিস্টেনশিয়াল আত্মহত্যা থেকে বাঁচিয়ে রাখে। তবে এই অর্থটা যেহেতু আরোপ করা, তাই এটা জীবন ও জগৎ সম্পর্কিত কোন সত্য বহন করে না। তবে সত্য ছাড়াও বেঁচে থাকা যায়, আবার স্রেফ বেঁচে থাকাটাই একটা সত্য। এবসার্ড!