share

ট্রায়াঙ্গাল অব স্যাডনেস

লিডিয়ার রাজা ক্রিসাসকে মনে করা হয় রাজাদের মধ্যে সর্বকালের সেরা ধনী। রোমান ভাষায় একটা প্রবাদই আছে যে, কোন ধনী ব্যক্তির ধনের পরিমাণ বোঝানোর ক্ষেত্রে বলা হয় ‘এই লোক তো ক্রিসাসের মত ধনী!’। একদিন গ্রিসের নামকরা আইনকর্তা সোলন এসেছিলেন রাজা ক্রিসাসকে পরিদর্শন করতে। তৎকালে সোলন তার নিষ্ঠতা, আত্মসম্মান, নমনীয়তা, সংযম, প্রজ্ঞা, বুদ্ধিমত্তা আর সাহসের জন্য ছিলেন সুপরিচিত। রাজাকে পরিদর্শনকালে সোলন তার ধন-দৌলত এবং ঐশ্বর্য দেখে একটুও বিচলিত হননি, এমনকি এত প্রাচুর্যের মালিক রাজারও বিন্দুমাত্র প্রশংসা করেননি। রাজা এতে খুবই বিরক্ত বোধ করেন, কারণ সোলনের মত একজন ব্যক্তির কাছ থেকে প্রশংসা পাওয়াটা ছিল অনেক গুরুত্বপূর্ণ। একপর্যায়ে রাজা রেগে গিয়ে সোলনকে জিজ্ঞেস করেই বসেন যে, তার থেকেও সুখী মানুষ সে জীবনে কোথাও দেখেছে কিনা। সোলন উত্তরে বলেন, আপনার গল্পটা তো এখনও শেষ হয় নি, কত ধনী আর সুখী মানুষের জীবন দেখেছি বদলে গিয়ে করুণ পরিণতির দিকে গেছে!

পরবর্তীতে, পার্সিয়ান রাজা সাইরাসের কাছে যুদ্ধে পরাজিত হন ক্রিসাস। পরাজিত রাজা ক্রিসাসকে ধরে যখন আগুনে পুড়িয়ে মারতে যাওয়া হচ্ছিলো, ক্রিসাস তখন চিৎকার করে বলে উঠেছিলেন, “সোলন, তুমি তো ঠিকি বলেছিলে!” ক্রিসাসের মুখে এরকম অদ্ভুত কথা শোনে সাইরাস জানতে চাইলেন এই কথার হেতু কী। সোলনের সেই সতর্কবাণীর গল্প শোনে সাইরাস মুগ্ধ হয়ে এতই আশ্চর্য বনে যান যে, নিজের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ক্রিসাসকে তিনি জীবন ভিক্ষা দেন।

জগতে সবকিছুই পরিবর্তনশীল। কিছু পরিবর্তন স্বল্পমেয়াদী আর কিছু পরিবর্তন দীর্ঘমেয়াদী। দীর্ঘমেয়াদী দুটো পরিবর্তনের মধ্যকার দৈর্ঘ্য হাজার, লক্ষ কিংবা মিলিয়ন বছরও হতে পারে। আবার পরিবর্তন হতে পারে আকস্মিক ঘটনা নির্ভর, যেকোন মুহূর্তে, যখন-তখন পাল্টে যেতে পারে যে-কোন পরিস্থিতি। কিন্তু মানুষ যখন নিজের জীবনে ধন-সম্পদের আধিক্যে—সম্পর্কে আকস্মিকতা ছাড়া তার আশানুরূপ একটা সময় পার করে ফেলে, তখন সে একটা চিরস্থায়ী নিরাপত্তার অনুভূতি পায়। সে মনে করে যে, তার এই অবস্থার আর অবনতি হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। শুধু সম্পদ আর সম্পর্ক নয়—চিন্তা, আদর্শ, নৈতিকতার ক্ষেত্রেও মানুষ দীর্ঘ সময় কিংবা অধিক জনগণের চর্চার উপর ভিত্তি করে সেগুলোকে শাশ্বত মনে করে বসে থাকে। এককালে সমাজে নারীদের সাথে চরম বৈষম্যমূলক আচরণ করা হতো এবং এটা এত বেশি সময় ধরে এত বেশি মানুষের দ্বারা গৃহীত ছিল যে, এটাকে বৈষম্য মনেই হতো না। কে জানতো যে এমন একটা সময় আসবে যখন নারীপুরুষ এতটাই সমতার চর্চা করবে যেখানে লিঙ্গ সচেতন এক জোড়া প্রেমিক-প্রেমিকা রেস্টুরেন্টে খাওয়া শেষ করে বিল দেয়ার সময় সেটাকে সমান দুইভাগে ভাগ করা নিয়ে ঝগড়া লেগে প্রায় ব্রেকাপ হওয়ার উপক্রম হবে! বর্তমানে এমনটা হচ্ছে। এবং এখন যেটা হচ্ছে সেটাও কোন একদিন বদলে যাবে।

পরিচালক রুবেন অস্টলান্ডের বিদ্রূপাত্মক ব্ল্যাক কমেডি ‘ট্রায়াঙ্গাল অব স্যাডনেস (২০২২)’-এও দেখা যায় ঘটনার এক আকস্মিকতায় পাল্টে যেতে পারে অকল্পনীয় পরিস্থিতি। পরিবেশের ভিন্নতা আর প্রলেতারিয়াতদের সারভাইভাল স্কিলের কাছে হেরে গিয়ে প্রতিষ্ঠিত বুর্জোয়ারাও শাসিত হতে বাধ্য হতে পারে সামান্য টয়লেট ক্লিনারের হাতে। পরিস্থিতির কারণে পাল্টে যেতে পারে মানুষের নৈতিকতার ধরন, পাল্টে যেতে পারে ক্ষুধা আর আরামবোধের চাহিদাও। 

Comments

comments

574 views

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *