হুলু নেটওয়ার্কের সিরিজ ‘নাইন পারফেক্ট স্ট্রেঞ্জার্স’ নিয়ে নয়া আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স চ্যাটজিপিটি’র সাথে সেদিন আলাপ করলাম। সিরিজ নিয়ে আমার করা বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে চ্যাটজিপিটি যে সমস্ত কথাবার্তা বলছিল সেটা দেখে আমি কিছুটা ভীত এবং অনেকটা অভিভূত হলাম। গত পাঁচ-সাত বছর ধরে আমি বিভিন্ন চলচ্চিত্র, সিরিজ নিয়ে লেখা প্রকাশ করি। এধরণের লেখায় শুরু থেকেই আমার একটা ইউনিক অবস্থান তৈরি হয়ে আছে, যদিও আমি চলচ্চিত্র নিয়ে নিয়মিত লেখি না। যাইহোক, আমি যেটা করি সেটা হল বিভিন্ন মেটাফোরিক গল্প টেনে এনে চলচ্চিত্রের গল্পের সাথে সংযোগ তৈরি করে অথবা বিভিন্ন প্রশ্নের মাধ্যমে সেটার মূল দার্শনিক ইন্সাইটটা বের করে আনি। এটা আমার একটা প্রিয় কাজ।
নাইন পারফেক্ট স্ট্রেঞ্জার্স দেখা শুরু করেছিলাম মিস্ট্রি থ্রিলার হিসেবে। স্রেফ বিনোদনের জন্যে। কিন্তু নয় পর্বের এই সিরিজের কয়েক পর্ব পার হওয়ার পর মনে হল এটা থ্রিলার নয়, অন্য জিনিস, যে জিনিস দেখার পর সাধারণত সেটা নিয়ে লেখার একটা অবলিগেশনে পড়ে যাই। এটাকে নিয়ে লিখবো যখন ভাবছিলাম, তখন কৌতূহলী হয়ে এটা নিয়ে চ্যাটজিপিটি’র সাথে আলাপ শুরু করে দিলাম। প্রথম প্রশ্নের উত্তরে সে খুব সাদামাটা গদবাধা উত্তর দিল। ভাবলাম এরকমই তো হওয়ার কথা। কিন্তু আমি একটা সিরিজ নিয়ে লেখার সময় মেটাফোরের পাশাপাশি যে সমস্ত পিভোটাল কোয়েশ্চেন সেট করে সেগুলোর উত্তরের মধ্যে দিয়ে মূল দর্শনটা বের করে আনি, চ্যাটজিপিটিকে যখন সেসব প্রশ্ন করা শুরু করলাম, তখন সে অভিভূত হওয়ার মতই উত্তর দিল। ক্রিটিক্যাল, অবজেক্টিভ এবং ইন্টেলিজেন্ট সব উত্তর। যত এঙ্গেল থেকেই তাকে হিট করি সে মূল পয়েন্ট ঠিক রেখে ভিন্ন ভিন্ন পন্থায় উত্তর দিতে পারে। ব্যাপারটা টেরিফাইয়িং, বাট ইন অ্যা গুড ওয়ে!
লিয়ান মরিয়ারটি’র লেখা জনাথন লেভিন পরিচালিত নাইন পারফেক্ট স্ট্রেঞ্জার্স স্পিরিচুয়ালিটি, হিউম্যান সেলফ-ডিসকভারি, রিডেম্পশন নিয়ে নির্মিত এক কমপ্লেক্স সিরিজ। হিউম্যান ইন্টেলিজেন্স তার মস্তিষ্কে এমন এক কমপ্লেক্সিটি বহন করে যার চাপে মানুষ খাওয়া-পরার বন্দোবস্ত হয়ে গেলেই নেমে পড়ে জীবন-মরণের একটা দিশার সন্ধানে। হাজার বছর ধরে বিভিন্ন ট্রাইবাল রিচুয়াল আর বড় সাইজের ধর্মগুলো এই জায়গাটায় অনেক বড় ভূমিকা পালন করে এসছে, পাশাপাশি গডলেস স্পিরিচুয়ালিটিও গত দুই-তিন হাজার বছর ধরে মানুষকে নিজের ভেতরে ডুব দিয়ে মোক্ষলাভের একটা টুল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বর্তমানে অরগানাইজড রিলিজিওনগুলোর আবেদন উল্লেখযোগ্যহারে কমে আসলেও, এই উত্তরাধুনিক বিশ্বে স্পিরিচুয়ালিটির জনপ্রিয়তা নতুন আঙ্গিকে বেড়ে চলেছে। প্রাচ্যের শিক্ষা ছড়িয়ে পড়ছে পাশ্চাত্যে। এক্ষেত্রে ‘গুরু’ নামক একটা রোল খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, যা অতীতেও ছিল। সাধারণত ‘গুরু’ তাকেই মনে করা হয় যার মধ্যে সাধারণ মানুষের মত ভালনারিবিলিটি নেই, যিনি দুর্বল নন, যিনি মুক্ত। যেহেতু হিউম্যান ব্রেইন তার নিজের ইন্টেলিজেন্সের কমপ্লেক্সিটিকে সহ্য করতে পারে না, তাই সে যতই উত্তরাধুনিক আর গডলেস হোক না কেন, কোন একটা স্ট্রং ফিগার অথবা আইডিয়ার কাছে নিজেকে সপে দেয়ার প্রবণতা তার কখনই যায় না। তাই গুরুকে কিংবা রাষ্ট্রকে কিংবা কর্মকে কিংবা আইনকে কিংবা কোন আদর্শকে সকল ভঙ্গুরতার ঊর্ধ্বে বসিয়ে তার কাছে সে নিজেকে সপে দিতে চায়। কিন্তু এই রিয়্যালিটি এতই বিচিত্র, গতিশীল আর ভেল্কিবাজ যে, এখানে কোন এন্টিটির পক্ষে সকল ভঙ্গুরতার ঊর্ধ্বে যাওয়া সম্ভব এমন ব্যবহারিক উদাহরণ আমরা কখনই নিজ চোখে দেখতে পাই না। তাহলে উপায়? উপায় হল বিশ্বাস করা। বিশ্বাস আমাদেরকে কতদূর পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে? সেটা নির্ভর করে ইন্ডিভিজুয়ালের উপর। এই জগতে কেউ কি কাউকে পুরোপুরি উদ্ধার করতে পারে? কেউ কারও মুক্তির উপায় হয়ে উঠতে পারে? এর উত্তর ‘হ্যাঁ’ হতে পারতো যদি এক ব্যক্তির ঘুম আরেক ব্যক্তি ঘুমিয়ে দিতে পারতো। একজন মানুষের ঘুম যতটা সাবজেক্টিভ, তার রিডেম্পশনও হয়তো ততটাই সাবজেক্টিভ।
নাইন পারফেক্ট স্ট্রেঞ্জার্স-এ মাশা নামক যাদুকরী সুন্দরী গুরুকে দেখা যায় তার শক্তিশালী এক শান্ত ব্যক্তিত্বের নিচে তিনিও দুর্বল—তিনিও ভেঙে পড়ার মত ভঙ্গুর। আবার এও দেখা যায়—তার দেখানো উপায়ে কারও কারও দেখা হয়ে যাচ্ছে নিজের সাথে নিজের—আবার দেখা যায়—এই দেখাটাও সম্পূর্ণ নয়। কে জানে কীসে কার মুক্তি আর কীসে কার অন্তর্ধান!
চ্যাটজিপিটি কি আমাকে এসব কথা বলেছে? না, এসব আমারই কথা। তবে চ্যাটজিপিটি অনেকটা কাছাকাছি উত্তর দিয়ে আলাপ করতে পারে। তাকে যত ইন্টেলিজেন্ট আর ক্রিটিক্যাল প্রশ্ন করা হয়, সে তত ইন্টেলিজেন্ট উত্তর প্রদান করে। হিউম্যান লাইক উত্তর! ব্যাপারটা খুবই চমৎকার। এর থেকে আরও অনেক ইন্টেলিজেন্ট রোবট সামনের দিনগুলিতে আসবে। এটা কালেক্টিভ হিউম্যান ইন্টেলিজেন্সের ফসল। এটাকে আমাদের সাদরে গ্রহণ করতে হবে—সাথে আমাদের ওপেন থাকতে হবে—মেনে নিতে হবে যে—আমরা ফ্র্যাজাইল, বড়ই ফ্র্যাজাইল।