স্প্যানিশ দার্শনিক মিগুয়েল দে উনামুনোর মতে, জন্ম নিলেই যে আমাদেরকে একদিন মরে যেতে হবে এবং জীবদ্দশায় যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে এই চেতনাই হল সকল চেতনার মূল। আমরা মানুষ, কারণ আমরা যন্ত্রণা ভোগ করি। মনে হতে পারে গৌতম বুদ্ধও এমন কথা বলেছেন। বুদ্ধও বলেছিলেন, যন্ত্রণা মনুষ্যজীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু যন্ত্রণার প্রতি উনামুনোর দৃষ্টিভঙ্গিটা একটু ভিন্ন। উনামুনো যন্ত্রণাকে কোন সমস্যা হিসেবে দেখেননি, যেটা বুদ্ধ দেখেছিলেন। বুদ্ধ যেখানে নির্বাণের মধ্য দিয়ে যন্ত্রণাকে জয় করার উপায় খুঁজেছিলেন, সেখানে উনামুনো মনে করতেন, মানুষ হিসেবে অস্তিত্বশীল হওয়ার ক্ষেত্রে যন্ত্রণার ভূমিকা অনেক বড়।
উনামুনো দাবী করেন, যদি চৈতন্য থাকার কারণে আমরা মানুষ হয়ে থাকি, যদি সকল চৈতন্যের মূল হয়ে থাকে মানুষের মরণশীলতা আর যন্ত্রণা, তাহলে আমাদের জীবনের উপর এক ধরণের গুরুত্ব এবং মর্ম আরোপ করার ক্ষেত্রে আমাদেরকে অবশ্যই যন্ত্রণাকে সাদরে গ্রহণ করতে হবে। আর যদি যন্ত্রণা থেকে আমরা মুখ ফিরিয়ে নেই, এতে শুধু যে আমাদের মানুষ হওয়া থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া হবে তা নয়, মুখ ফিরিয়ে নেয়া হবে চৈতন্য থেকেও।
উনামুনোর এই চিন্তার একটা নৈতিক দিকও রয়েছে। তিনি বলেন, যন্ত্রণাকে আমাদের অবশ্যই স্বীকার করে নিতে হবে, কারণ কেবল যন্ত্রণাকে স্বীকার করলেই আমরা অন্য যন্ত্রণাভুগি সত্ত্বাকে ভালোবাসতে পারবো। এটা আমাদের জন্য এক কঠিন পরীক্ষা। একদিকে, আমরা চাইলে সুখের পেছনে ছুটে যন্ত্রণাকে এড়িয়ে যাওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে পারি। অন্যদিকে, আমরা যন্ত্রণা আর ভালোবাসাকে নির্বাচন করতে পারি। প্রথমটার ক্ষেত্রে, সুখের পেছনে ছোটা তুলনামূলক সহজ হতে পারে, কিন্তু এতে আমরা বড্ড সীমিত হয়ে পড়ি, নিজ সত্ত্বা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি। দ্বিতীয়টার ক্ষেত্রে, যন্ত্রণাকে গ্রহণ করা কঠিন হলেও একমাত্র যন্ত্রণাই আমাদের সত্ত্বার গভীরতা আর তাৎপর্যে পৌঁছানোর সম্ভাবনাকে খুলে দিতে পারে।
ভাবানুবাদ
[মূলঃ দ্যা ফিলোসফি বুক]