মেডিটেশন্‌স

উদরে চিনচিনে একটা খিদা নিয়ে আপনি বসে আছেন। আপনার সামনে সাজানো খাবারের ঢালা। রোস্ট করা পাখির মাংস কিংবা খাসির রেজালা, গরুর কালা ভুনা কিংবা লাল, বাসমতী চালের পোলাও, রুই কিংবা ইলিশ ভাঁজা, পানীয় হিসেবে আছে নোবেল ভিন্টেজ কিংবা অন্য কোন রাজকীয় ফলের জুস। আপনি এখন খাবেন। কিন্তু হঠাৎ আপনার মনে হলঃ ভাঁজা মাছটা তো আসলে একটা মরা মাছ। রোস্ট কিংবা রেজালা হল একটা মরা পাখি, মরা গরু কিংবা মরা খাসি। নোবেল ভিন্টেজ তো হল আঙ্গুরের রস।

রাতে কিংবা দিবসের সবচাইতে উত্তেজনাকর মুহূর্তে যখন আপনি আপনার স্ত্রী কিংবা প্রেয়সীর সাথে যৌনলীলায় মত্ত হয়েছেন, তখন হঠাৎ আপনার মনে হল  এটা তো আপনার শিশ্নের গায়ে কেবল অন্যকিছু একটার ঘষা লাগছে, একটা সংক্ষিপ্ত কাঁপুনি অনুভূত হচ্ছে এবং হালকা একটু ঘোলাটে তরল পদার্থের নির্গমন হচ্ছে।

কোনকিছু নিয়ে এমন পারসেপশন কিংবা বোধ সব জিনিসের হুড়কা খুলে ছিঁড়েফেরে ঢুকে পড়ে, এতে আমরা দেখতে পাই জিনিসপত্রের আসল রূপ। এটা আমাদের প্রায়শই করা উচিৎ। জীবন জুরে আমাদের আস্থা স্থাপন করতে হয় অনেক কিছুর উপর। যেহেতু আস্থা রাখতে হয় সবকিছুর উপর, সেহেতু ন্যাংটো করে দেখতে হবে সবকিছুকে। দেখতে হবে কতটা অর্থহীন সবকিছুর অস্তিত্ব। খুলে ফেলতে হবে তাদের গায়ে জড়ানো কিংবদন্তী শক্ত আবরণ।

যেসব শব্দ একসময় খুব প্রচলিত ছিল, যেসব শব্দ ঘুরে বেড়াত সাধারণ মানুষের মুখে মুখে, সেগুলো এখন কেউ উচ্চারণ করলে প্রাচীন, সেকেলে শোনায়। একসময় পৃথিবী জুরে যাদের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল, তারা এখন মৃতঃ ক্যামিলাস, স্যাসো, ভোলেসাস, ডেনট্যাটাস…সিপিও এবং ক্যাটো… অগাস্টাস…হাডরিয়ান এবং এন্টোনিয়াস, এবং …

সকল খ্যাতিই মুছে যায় দ্রুত, রূপ নেয় কিংবদন্তীর, এরপর একসময় ঢাকা পড়ে যায় বিস্মরণে।

এতো কেবল যারা জ্বলে উঠেছিল, স্মরণীয় হয়ে উঠেছিল জীবদ্দশায় তাদের কথা বললাম। আর বাকীরা? অখ্যাত, কেউ জানতেও চায় না যাদের কথা? তাদের তো মানুষ মৃত্যুর মিনিটখানেক পরেই ভুলে যায়।

অন্তহীন খ্যাতি বলে কি কিছু আছে? আছে—শূন্যতা।

তাহলে আমরা কী করবো? এমন অর্থহীন শূন্যতায় আমাদের কীইবা করার আছে?

শুধু এইঃ সঠিক উপলব্ধি, স্বার্থহীন কর্ম, সত্যকথন। মেনে নেয়া যা কিছুই ঘটে দরকারি, পরিচিত। বয়ে চলা জলের মত, যে জল উৎসারিত হয় সেই একই উৎস থেকে, একই ঝর্ণা থেকে।

আপনি উপরে বসে আছেন। অনেক উপরে। যত উপরে গিয়ে বসলে দেখা যায় সবকিছু, দেখা যায় পুরো জগতকে। দেখা যায় সময়ও। নিচের দিকে তাকিয়ে আপনি দেখতে পাচ্ছেন হাজার হাজার পশুর পাল। চষে বেড়াচ্ছে চারণভূমি। দেখতে পাচ্ছেন হাজারো মানুষ লিপ্ত হয়ে আছে ধর্মীয় ক্রিয়াকলাপে। দেখতে পাচ্ছেন সমুদ্রের বুকে কতশত জলযাত্রা ছুটছে—কখনও উত্তাল ঢেউয়ে, কখনও প্রশান্ত জলে। দেখতে পাচ্ছেন কতশত পন্থায় জন্ম নিচ্ছে মানুষ, ঢুকে পড়ছে জগতে, বেঁচে থাকছে একে অন্যের সাথে, এরপর একে একে চলে যাচ্ছে এই জগত ছেড়ে।

এখন ভাবুন, যারা বেঁচে ছিল একদা, অনেক আগে। ভাবুন, যারা বেঁচে থাকবে আপনারও পরে, যারা বেঁচে আছে এখন, অন্য কোন ভিনদেশী মাটির উপরে হেঁটে বেড়াচ্ছে যারা। ভাবুন, জগতে কত সংখ্যক মানুষ আছে যারা জানেই না আপনার নাম! কতজন আছে যারা কিছুদিন পরেই ভুলে যাবে আপনাকে! কতজন আপনার গুণগান গায় এখন—এবং কালকে, হয়তো, অবজ্ঞা করবে আপনাকে।

মানুষের মনের মধ্যে বেঁচে থাকার কি আদৌ কোন মূল্য আছে? যেমন, খ্যাতির কোন মূল্য নেই। যেমন, কোন কিছুরই কোন মূল্য নেই।

মানব জীবন। ব্যাপ্তিকালঃ ক্ষণিক। প্রকৃতিঃ পরিবর্তনশীল। দৃষ্টিভঙ্গিঃ ক্ষীণ। দৈহিক অবস্থাঃ ক্ষয়িষ্ণু। আত্মাঃ ঘূর্ণায়মান। নিয়তিঃ বলা যায় না কী হবে। খ্যাতির মেয়াদঃ অনিশ্চিত। যোগফলঃ দেহ আর দেহের অংশগুলো হল নদীর মত, আত্মা হল স্বপ্নঘোর, ধোঁয়াশা। জীবন হল যুদ্ধ, ঘর থেকে বের হয়ে যাওয়া এক দূরবর্তী যাত্রা, যেখানে খ্যাতি হারিয়ে যায় বিস্মৃতিতে।

তবে? এই অমানিশায় আমাদের দিশা দিবে কে?

কেবল দর্শন।

দর্শনই কেবল নিশ্চিত করতে পারে যে আমাদের ভেতরে যে শক্তির বাস সে শক্তি নিরাপদ, কেউ তাকে আঘাত করে ভাঙতে পারে না, যে শক্তি যন্ত্রণা আর আমোদ-প্রমোদের চাইতেও উচ্চতর। যে শক্তি অসৎ, প্রতারণামূলক অথবা এলোমেলো কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখে। কারও কিছু করা বা না করার উপর যা নির্ভরশীল নয়। প্রকৃতির কর্মপ্রবাহকে যে মেনে নেয় সাদরে। এবং সর্বোপরি, মৃত্যুকে সে গ্রহণ করে আনন্দ চিত্তে, কারণ মৃত্যু তো কেবল প্রতিটা জীবন-গঠনের কণাগুলোর ভাঙচুর। কণাদের এই রূপান্তরের চিরন্তন পরিবর্তনে যদি এরা আলাদাভাবে কোন যন্ত্রণা অনুভব না করে, ব্যথা অনুভব না করে, তাহলে মানুষ কেন এই পরিবর্তনে, বিচ্ছেদে এত ভীত হয়ে পড়ে? এটা তো প্রাকৃতিক। আর যা কিছুই প্রাকৃতিক, তা কি খারাপ হতে পারে?

 

খৃষ্টপূর্ব ৬৯ সালের দিকে টানা সাতাশ বছর ধরে রোমকে শাসন করা রোমান সম্রাট ভেস্পাশিয়ানের শাসনামলে মানুষজন কিছু বিশেষ কাজ করতো। সেগুলো হলঃ তারা বিয়ে করতো, সন্তান উৎপাদন করতো, পার্টি করতো, যুদ্ধ করতো, ব্যবসা করতো, কৃষি কাজ করতো, তোষামোদ করতো, অহংকার করতো, অবিশ্বাস করতো, ষড়যন্ত্র করতো, অন্যের মৃত্যু কামনা করতো, নিজের জীবন নিয়ে অভিযোগ করতো, প্রেমে পড়তো, টাকা উড়াতো, ক্ষমতার লোভ করতো, অসুস্থ হতো এবং মারা যেত।

এসব করে যতগুলো জীবন তারা যাপন করেছিলো তাদের কোন চিহ্নই পৃথিবীতে এখন আর নেই।

মজার ব্যাপার হল, খৃস্টের জন্মের ৯৮ বছর পরে রোমকে শাসন করা রোমান সম্রাট ট্রাজানের শাসনামলেও মানুষজন একই কাজ করতো। এবং তাদেরও আর কোন চিহ্ন এখন পৃথিবীতে নেই।

এবং আপনি যদি পরিসংখ্যান দেখেন, তাহলে দেখবেন যে, সকল যুগের সকল মানুষই এই একই কাজ করতোঃ বিয়ে করতো, সন্তান উৎপাদন করতো, পার্টি করতো, যুদ্ধ করতো, ব্যবসা করতো, কৃষি কাজ করতো, তোষামোদ করতো, অহংকার করতো…।

আরও দেখবেন যে, অনেকেই তার সর্বস্ব দিয়ে দেয়ার পরও একসময় তারা মরে গেছে, প্রকৃতিতে পচে গিয়ে মিশে গেছে তাদের দেহ।

এবং এও দেখবেন যে, বেশীরভাগ মানুষই তার জীবদ্দশায় বৃথা পরিশ্রম করে গেছে, এমন কিছু করে গেছে যা তাদের করা উচিৎ ছিল না—এমন কিছুতে তারা লেগে থাকেনি যা তাদেরকে তুষ্টি দিতে পারতো, পূর্ণতা দিতে পারতো।

জীবনকে যাপন করতে, এখন আমাদের মনে রাখা উচিৎ, একজন মানুষের মনোযোগের মূল্য কতটুকু সেটা নির্ভর করে বস্তু কিংবা বিষয়ের উপর প্রদান করা অনুপাতের উপর। অর্থাৎ, যে জিনিস যতটুকু মনোযোগ প্রাপ্য তাকে এর বেশি প্রদান করা আমাদের কোনভাবেই উচিৎ হবে না।

 

আমাদের মধ্যে এমন কী আছে যেটাকে আমাদের কদর করা উচিৎ?

কেবল শ্বাসপ্রশ্বাস নেয়া নিশ্চয়ই নয় (পশু-পাখিও তো শ্বাসপ্রশ্বাস নেয়, এমনকি গাছপালাও)।

অথবা এলোমেলো চিন্তায় আটকা পড়ে যাওয়াও নয়।

অথবা নিজের প্রবৃত্তির কাছে বন্ধী হয়ে পড়াও নয়।

অথবা আমজনতার ভিড়ে নিজেকে ছেড়ে দেয়াও নয়।

অথবা জীবনভর উদর ঠেসে খেয়েদেয়ে পায়ুপথ দিয়ে সেটা খালাস করে দেয়াও নয়।

তাহলে কী আছে যেটাকে আমরা কদর করবো?

দর্শকের হাততালিকে? না। জনসাধারণের মুখের প্রশংসা কেবল অনেকগুলো জিহ্বার ঝনঝনানি ছাড়া আর কিছুই না।

যদি আমরা মানুষের স্বীকৃতিকেও কদর না করি, তাহলে আর কদর করবো কী?

তা-ই যা করা কিংবা না করার জন্য আমরা অভিপ্রেত। সকল বাণিজ্য আর শিল্পের লক্ষ্য একটাই—সেটা হল তাই করা যেটা করার জন্য সে সৃষ্ট। যেমন, মালির কাজ বাগানের পরিচর্যা করা, অশ্বশিক্ষকের কাজ ঘোড়াকে প্রশিক্ষণ দেয়া, কুকুর প্রতিপালকের কাজ কুকুর পোষা। আর শিক্ষকদের কাজ কী? তারা কি অন্যকিছু অর্জন করার চেষ্টায় মত্ত থাকে?

আমাদের যার যা করার কথা তা-ই শুধু কদর করা উচিৎ। যদি আমরা অন্য সবকিছুকে কদর করা না থামাতে পারি—তাহলে আমরা কখনই মুক্ত হবো না, স্বনির্ভর হবো না, প্রশান্ত হবো না। সবসময় আমরা ডুবে থাকবো ঈর্ষায় আর হিংসায়—মনে হবে এই বুঝি কেউ এসে সবকিছু এখনই নিয়ে গেল আমার কাছ থেকে!

 

জগতে আমরা সকলে মিলে একটা প্রকল্পেই কাজ করছি। কেউ সচেতনভাবে, বুঝেশুনে করছে, আর কেউ সেটা না বুঝেই করছে। দার্শনিক হেরাক্লিটাস যখন বলেছিলেন, “যারা ঘুমুচ্ছে, তারাও কঠোর পরিশ্রমে নিবদ্ধ”, তখন তিনি হয়তো এটাই বোঝাতে চেয়েছিলেন যে জগতে যা কিছু ঘটছে তাতে ঘুমন্ত মানুষের অবদানও সমান।

আমরা একেকজন একেকভাবে কাজ করি। সবার কাজের ধরণ কখনই এক হবে না। এবং জগতে যারা কথায় কথায় শুধু অভিযোগ করে, অনুযোগ করে আর অন্যের কাজে বাঁধা সৃষ্টি করে—তারাও জগতের কর্মপ্রবাহে অন্য সকলের সমান অবদানই রাখছে। জগতে তাদেরও প্রয়োজন আছে।

আপনি এখন মনস্থির করতে পারেন আপনি কীসের সাথে কাজ করবেন, কার সাথে কাজ করবেন, কী নিয়ে কাজ করবেন। কিন্তু আপনি যদি কোন কিছু মনস্থির নাও করেন, তাহলে আপনি চান বা না চান, জগতের মূল শক্তি আপনাকে কোন না কোন কাজে লাগাবেই এবং সে কাজের মাইনে আপনাকে প্রদান করা হবেই।

  • পরিবর্তনকে ভয় পান? পরিবর্তন ছাড়া কি কোনকিছু অস্তিত্বশীল হতে পারে? প্রকৃতির হৃদপিণ্ডের কাছাকাছি কী থাকে জানেন? কনকনে ঠাণ্ডায় কাঠের আগুনে জল গরম করে একটা গোসল দেয়ার পরে কি আপনি আশা করতে পারেন যে গোসলের আগে জ্বলন্ত কাঠগুলোর শারীরিক অবস্থা যেমন ছিল এখন তেমনই থাকবে? চুলায় কিংবা জিহ্বায় কোন খাদ্যবস্তুকে রূপান্তরিত না করে কি খেয়ে হজম করতে পারবেন? এমন কোন গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া কি আছে যেটা পরিবর্তন ছাড়া ঘটতে পারে?

আপনি কি দেখতে পান না? আপনার সাথেও একই জিনিস ঘটছে—এবং এটা প্রকৃতির মতই গুরুত্বপূর্ণ।

  • অস্তিত্বের মধ্য দিয়ে আমরা খরস্রোতের মত ভেসে যাচ্ছি। ভেসে যাচ্ছে জগতের সকল শরীর, সকল বস্তু। প্রকৃতি থেকেই প্রস্ফুটিত হয়েছে সবকিছু এবং সহযোগিতা করছে প্রকৃতিকেই—ঠিক আমাদের শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোর মতই। সময় সবকিছু গিলে খায়। সময় গিলে খেয়ে ফেলেছে একজন ক্রিসিফাস, একজন সক্রেটিস এবং একজন এপিক্টেটাসকে। বহুবার।

“এপিক্টেটাস”-এর জায়গায় আপনি অন্য কোন মানুষের নাম পড়তে পারেন কিংবা কোন বস্তুর।

শসা খেতে তিতা লাগছে? ছুড়ে ফেলে দিন।

পথে কাঁটার ঝোপ পড়ে আছে? তাহলে একটু ঘুরে এগিয়ে যান।

এইতো। এটুকু জানাটাই আপনার জন্য যথেষ্ট। এর বেশি কিছু না। এখন জানতে চাবেন না যে “এরকম জিনিস কেন অস্তিত্বশীল”। তাহলে বিষয়টা হাস্যকর হয়ে যায়। যেমন ধরুন, একজন কাঠমিস্ত্রির ওয়ার্কশপে গিয়ে কাঠের গুঁড়া দেখে যদি আপনি অবাক হয়ে যান অথবা একজন চর্মকারের কাছে গিয়ে পড়ে থাকা উচ্ছিষ্ট চামড়া দেখে যদি অবাক হয়ে যান, তাহলে কি বিষয়টা হাস্যকর হয়ে যাবে না? এখানে অবশ্য, তাদের এগুলোকে ডাস্টবিনে ফেলে দেয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু প্রকৃতির কাছে এই সুযোগ নেই।

প্রকৃতি চাইলেও কোন কিছু ঝেড়ে ফেলে দিতে পারে না। তার এমন কোন জায়গা নেই। এটা তার সীমাবদ্ধতা। তবে প্রকৃতির এই কারিগরির সুন্দর দিকটা হল, এই সীমাবদ্ধতা নিয়ে সে যা কিছু ভাঙা, পুরাতন এবং অপ্রয়োজনীয়, সবকিছুকে রূপান্তরিত করে নিজের অস্তিত্ব বানিয়ে নেয় এবং নতুন নতুন জিনিসের জন্ম দেয়। এতে করে প্রকৃতির বাইরের কোন উৎস থেকে কোনকিছু আনার প্রয়োজন হয় না অথবা কোন অপ্রয়োজনীয় জিনিসকে ফেলে দিতেও হয় না। প্রকৃতি নিজেই নিজের উপর নির্ভরশীল যেখানে তার শুধু প্রয়োজনঃ জায়গা, উপাদান আর শ্রম।

ভাবানুবাদ । শরিফুল ইসলাম
[মূলঃ মেডিটেশন্‌স, মারকাস অরেলিয়াস]

Comments

comments

778 views

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *