রেনেসাঁর বছরগুলোতে পুরো ইউরোপ জুরে কিছু মানবতাবাদী মতবাদের বন্যা বইছিলো। ১৫০৯ সালে লেখা দার্শনিক ডেসিডেরিয়াস ইরাসমাসের ‘ইন প্রেইজ অফ ফলি’ বইতে এইসব মতবাদের প্রতিচ্ছবি প্রকাশিত হয়েছিলো, যা তৎকালে সংস্কারের ক্ষেত্রে পালন করেছিলো অনেক বড় ভূমিকা। বইটা ছিল মূলত ক্যাথোলিক চার্চের কট্টরপন্থী আচরণ আর দুর্নীতিকে ইঙ্গিত করে লেখা এক ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ। তবে এই বই বিদ্রুপ ছাড়াও আরেক গভীর বার্তা বহন করে। ইরাসমাস মূর্খতা বলতে যেটা বোঝাতে চেয়েছিলেন সেটা হল ‘সাদাসিদা অজ্ঞতা’। তার মতে এই অজ্ঞতা মানুষ হওয়ার ক্ষেত্রে এক অপরিহার্য অংশ। এবং সবশেষে অজ্ঞতাই আমাদের জীবনে সুখ আর পূর্ণতা আনতে পারে। অন্যদিকে, জ্ঞান হল মানুষের জন্য ভারি এক বোঝা, যা জীবনকে করে তুলতে পারে জটিল এবং অসুখী।
বিশ্বাস এবং মূর্খতা
ইরাসমাস বলেন ধর্মও এক ধরণের মূর্খতা। কারণ, ধর্ম কেবল বিশুদ্ধ বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করেই দাঁড়িয়ে থাকতে পারে, যুক্তির উপর নয়। সেইন্ট অগাস্টিন, থমাস একুইনাসের মত মধ্যযুগীয় দার্শনিকরা যেভাবে গ্রিক যুক্তিচিন্তার সাথে ক্রিশ্চিয়ান থিওলজিকে মিশিয়ে খিচুড়ি পাকানো শুরু করেছিলেন, সেটাকেই ইরাসমাস মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসে ফাটল ধরার মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি বলেন, ক্যাথোলিকদের কিতাবের কথা না শোনে সকলের উচিত ঈশ্বরকে হৃদয় থেকে বিশ্বাস করে তার সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তোলা। তার পরামর্শ হল, ধর্মগ্রন্থ থেকে আমাদেরকে এটার সত্যিকারের স্পৃহাকেই কেবল গ্রহণ করা উচিৎ, যা হল—সরলতা, মূর্খতা আর ন্রমতা। এবং এসবই হল সুখী জীবনযাপনে মনুষ্য সত্ত্বার মৌলিক বৈশিষ্ট্য।
- অনুবাদ ।। শরিফুল ইসলাম
- মূল ।। দ্যা ফিলসফি বুক
- ১১-১০-২০২১