অস্তিত্বে কোন সংবেদনশীল সত্তা যখন তার নৈর্ব্যক্তিক শারীরিক যন্ত্রণা আর সুখানুভূতিকে টপকিয়ে মানসিক পীড়া, যন্ত্রণা, সুখ আর আনন্দের এক নিজস্ব জগত তৈরিতে সক্ষম হয়, তখন সে সত্তা তার অনুভূত সবকটা অনুভূতির উৎসের সন্ধানে জীবদ্দশার কোন না কোন এক সময় নেমে পড়তে বাধ্য হয়। এর কারণ এইসব অনুভূতির বিলম্বিত কিংবা আকস্মিক উঠানামার পশ্চাত্পটে যা জীবনভর লেগে থাকে তা হল দুঃখ। এখন পর্যন্ত অস্তিত্বে আমাদের ইন্দ্রিয়গাহ্য মানসিক জগতের অধিকারী একমাত্র সত্তা হল মানুষ। অর্থাৎ আমরাই সেই সত্তা। মানুষ ঈশ্বর সন্ধানী। এর কারণ মানুষের দুঃখ আছে। সুখানুভূতি কখনও মানুষকে তার উৎসের সন্ধানে উদগ্রীব করে তোলে না। তা কেবলই বর্তমান। অস্তিত্বের মানুষ নামক এই দুঃখী প্রাণীর ঈশ্বর সন্ধানের পন্থাগুলো বিচিত্র। তা যত বিচিত্রই হোক, গন্তব্য সেই দুঃখের গোড়াই। দুঃখের গোড়াতে যাওয়াটাকে সুখের সন্ধান বলে ভ্রম হতে পারে। কিন্তু সুখের জন্য দুঃখের গোড়ায় যাওয়ার প্রয়োজন নেই আসলে। গোঁড়ায় যাওয়া মানে ‘হওয়া’। দুঃখের স্বল্প জ্ঞান মনুষ্য সত্তাকে ঠিক ‘হয়ে উঠতে’ দেয় না। আর এই হয়ে উঠার হয়ে উঠা হয়ে উঠে না মানুষের মানসিক জগতের সাথে তার চিরসাথী দুঃখের পূর্ণ পরিচয়ের অভাবে। হওয়াই ঈশ্বর। না হওয়া, সেও ঈশ্বর, তবে সে অজ্ঞ, দুঃখী – যে দুঃখকে ভালোবাসতে জানে না। হওয়ার উপায় কী? শুধু দেখা। বোকার মত, নাদানের মত। জলের উপর পা রেখে ভুলে যাওয়া যে এটা জল। ভুলে যাওয়া জলের কথা, পায়ের কথাও। তখনই একটি সত্তা হয়ে উঠে, হয়, বিশুদ্ধ বোকা অথবা ঈশ্বর।