ঈশ্বরের কোন বৈশিষ্ট্য নেই

মানুষ ঈশ্বরে বিশ্বাস করে। ঈশ্বরকে সে নিজের থেকে কিংবা অন্য সবকিছু থেকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে মেনে নেয়। কিন্তু ঈশ্বর কী? ঈশ্বর কেমন? ঈশ্বর কেমন সেটা ভাবতে গেলে মানুষ তাকে নররূপেই চিন্তা করে। ঈশ্বরের রূপকেও মানুষ মনুষ্যরূপের বাইরে চিন্তা করতে পারে না। দার্শনিক মাইমোনিডিস মানুষের এই চিন্তার ঘোর বিরোধী ছিলেন। মাইমোনিডিস তৎকালে হিব্রু ভাষায় ইহুদি আইন এবং আরবি ভাষায় এরিস্টটললীয় চিন্তা লিখতেন। দুই ক্ষেত্রেই দৃশ্যমান ছিল তার বিরোধিতার স্পষ্ট ছাপ। মাইমোনিডিসের মতে, মানুষের সবচাইতে বড় ভুল হল তোরাহ (হিব্রু ভাষার প্রথম বাইবেল)-কে আক্ষরিক অর্থে নেয়া এবং মনে করা যে ঈশ্বরেরও একটা অবয়ব আছে। যারা এরকমটা ভাবে তাদেরকে ইহুদী গোত্র থেকে বের করে দেয়া উচিৎ। পরবর্তীতে মাইমোনিডিস ‘গাইড অব দ্যা পারপ্লেক্সড’ বইতে তার এই যুক্তিকে আরও সামনে টেনে নিয়ে একটি সুত্র তৈরি করেন যেটাকে বলা হয় “নেগেটিভ থিওলোজি”। এটার কথা অবশ্য ক্রিশ্চিয়ান থিওলোজিতে আগে থেকেই উল্লেখ করা ছিল। এই থিওরিতে মূলত ঈশ্বর কী সেটাকে বর্ণনা করা হয় ঈশ্বর কী না সেটা বর্ণনা করার মধ্য দিয়ে।

মাইমোনিডিস বলেন ঈশ্বরের কোন বৈশিষ্ট্য নেই অথবা কোন গুণ নেই। ঈশ্বর “ভালো” অথবা “পরাক্রমশালী” এইসব কথা আমরা ঠিকভাবে বলতে পারি না। কারণ, যে-কোন বৈশিষ্ট্য বা গুণ হয় আকস্মিক (যা পরিবর্তনশীল) অথবা অপরিহার্য। যেমন ধরুন, আমার নিজের একটা আকস্মিক বৈশিষ্ট্য হল আমি এখন বসে আছি; আর অন্যগুলো হল আমার মাথার চুলগুলো পাকা এবং আমার নাকটা একটু লম্বাটে। এখন যদি আমি দাঁড়িয়ে থাকতাম তাহলেও আমি চুল-পাকা-লম্বা-নাকওয়ালা মানুষটাই হতাম। যুক্তিচিন্তার অধিকারী, মরণশীল মানুষ হয়ে বেঁচে থাকাটাই আমার অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য, এটাই আমি। মাইমোনিডিস আরও বলেন, ঈশ্বরের কোন অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে না। কারণ বৈশিষ্ট্য থাকলেই সেটাকে সংজ্ঞায়িত করা যায়। আর ঈশ্বর হল অসংজ্ঞায়িত।

যদি ঈশ্বরের কথা বলি
মাইমোনিডিস দাবি করেন, ঈশ্বরকে নিয়ে অনেক কিছুই বলা যায়। যা কিছু আমরা বলি না কেন সেগুলো হল ঈশ্বরের কাজের বর্ণনা, যা দিয়ে ঈশ্বর কী সেটা বোঝা কখনই সম্ভব নয়। তোরাহ-তে যেসব কথাবার্তা আছে তার বেশিরভাগকে এভাবেই বোঝা উচিৎ। সুতরাং যখন বলা হয় যে, ঈশ্বর হলেন ‘স্রষ্টা’, তখন আমাদেরকে বুঝতে হবে এই কথা দ্বারা বোঝানো হয়েছে ঈশ্বর কী করেন সেটা, ঈশ্বর কী সেটা নয়। যদি একটা বাক্যে লেখা থাকে ‘জন একজন লেখক’, এটা পড়ে আমরা ধরে নেই লেখালেখি করাটা জনের পেশা। মাইমোনিডিস বলেন জন একজন লেখক এই কথা দ্বারা কেবল জন কী করে সেটা বোঝা সম্ভব। এটা দ্বারা জন কী অথবা কে সেটা বোঝা কিছুতেই সম্ভব নয়, কারণ লেখাটা জন লেখে। তার লেখালেখি তাকে সংজ্ঞায়িত করে না।
তবে ঈশ্বরের কোন গুণাবলী যখন উল্লেখ করা হয়, সেটাকে মাইমোনিডিস ডাবল নেগেটিভ হিসেবে ধরে নিতে বলেন। যদি বাক্যটি হয় “ঈশ্বর পরাক্রমশালী”, এর অর্থ হবে ঈশ্বর দুর্বল নন। ধরুন, আপনার সাথে আমি একটা খেলা খেলব যেখানে আমি আপনাকে বলব, “আমি একটা জিনিসের কথা চিন্তা করছি। বলেন তো, এটা কী নয়? (এটা বড় নয়, লাল নয়, ধারালো নয়……)।” যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি ধারণা করতে পারবেন আমি যেটা চিন্তা করছি সেটা কী হতে পারে। এক্ষেত্রে পার্থক্যটা হল আমাদের কাছে শুধু ঈশ্বর কী না সেটার দিক নির্দেশনা আছেঃ আমরা বলতে পারবো না ঈশ্বর আসলে কী।
অনুবাদ ।। শরিফুল ইসলাম
মূল ।। দ্যা ফিলসফি বুক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *