পশ্চিমা দর্শনের শুরুর দিকে ব্রহ্মাণ্ডের শারীরিক প্রকৃতি নিয়ে নানান বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা উদ্ঘাটনে গ্রীক দার্শনিকরা যখন মহা ব্যস্ত, হেরাক্লিটাস তখন বলে উঠলেন যে ব্রহ্মাণ্ডে সবকিছুই একটা ঐশ্বরিক লোগো দ্বারা পরিচালিত। এই লোগোকে মাঝে মাঝে বলা হয় ‘যুক্তি’ অথবা ‘তর্ক’। হেরাক্লিটাসের মতে, লোগো হল সর্বজনীন—একটা মহাজাগতিক নিয়ম, যাকে কেন্দ্র করেই অস্তিত্বশীল হয় সকল কিছু এবং যার মাধ্যমে ব্রহ্মাণ্ডের সকল বস্তুগত উপাদান ধরে রাখে তাদের ভারসাম্য। তিনি আরও বললেন, যে-কোন বৈপরীত্য—যেমন, দিন এবং রাত, গরম এবং ঠাণ্ডা’র ভারসাম্যে তৈরি হয় ব্রহ্মাণ্ডের মূল ঐক্য অথবা সবকিছুই একটা একক প্রক্রিয়া কিংবা উপাদানের অংশমাত্র—আর এটাই মনিজমের মূলনীতি। এখানে উল্লেখযোগ্য হল, যে-কোন বিপরীত জোড়ার মধ্যে অবিরত তৈরি হতে থাকে এক ধরনের টানাপড়েন, যার ফলে সবকিছুকে সবসময় একটা স্থায়ী পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। যেমন, দিন পরিবর্তিত হয়ে রূপ নেয় রাতে, রাত আবার পরিবর্তিত হয়ে রূপ নেয় দিনে।
এই থিওরি ব্যাখ্যা করার জন্য হেরাক্লিটাস একটা নদীর উদাহরণ দেন। তিনি বলেন, ‘আপনি কখনই এক নদীতে দুইবার নামতে পারবেন না।’ যার অর্থ হল, ঠিক যে মুহূর্তে আপনি নদীতে পা ফেলবেন, তার পরের মুহূর্তেই নতুন পানিতে প্রতিস্থাপিত হয়ে যাবে আপনার পায়ে ছোঁয়া পুরাতন পানিটা, তবুও সাধারণত নদীকে একটা স্থির, অপরিবর্তনীয় জিনিস হিসেবেই বর্ণনা করা হয়।
হেরাক্লিটাস মনে করতেন, ব্রহ্মাণ্ডের প্রতিটা বস্তুই সর্বদা একটা পরিবর্তনের উপরে থাকে, যা ছিল মাইলসিয়ান স্কুলের দার্শনিকদের চিন্তার সাথে সাংঘর্ষিক—যেমন, থেলিস এবং এনাক্সিমেনেক্স সবকিছুকে সংজ্ঞায়িত করতেন সেটার অপরিবর্তনীয় বিশুদ্ধ সত্তার উপর ভিত্তি করে।
অনুবাদ ।। শরিফুল ইসলাম
মূলঃ দ্যা ফিলসফি বুক