ডেমোক্রিটাস এবং লিওকিপাসঃ অস্তিত্বে শূন্য আর পরমাণু ছাড়া কিছু নেই

ব্রহ্মাণ্ড কি একটা একক মৌলিক উপাদান থেকে তৈরি কিনা সেটা নিয়ে দার্শনিকরা ভাবা শুরু করেছিলেন খ্রিস্টপূর্ব ছয় শতাব্দীর পর থেকে। পঞ্চম শতাব্দীর দিকে, গ্রীসের এবডেরা থেকে ডেমোক্রিটাস এবং লিওকিপাস নামে দু’জন দার্শনিক বললেন যে, ব্রহ্মাণ্ডের সবকিছু একটা ক্ষুদ্র, অদৃশ্য এবং অপরিবর্তনীয় কণা দ্বারা তৈরি, যার নাম উনারা দিয়েছিলেন পরমাণু।

প্রথম পরমাণু থিওরি

ডেমোক্রিটাস এবং লিওকিপাস আরও বললেন, এই কণাগুলোর অস্তিত্বশীল হওয়ার ক্ষেত্রে শূন্যতা একমাত্র ভূমিকা পালন করে—যেখানে এক পরমাণু থেকে আরেক পরমাণুকে বিযুক্ত করার ক্ষেত্রে কাজ করে শূন্য জায়গাই—এবং এই শূন্যতাই পরমাণুগুলোকে তৈরি করে দেয় মুক্ত ভাবে নড়াচড়া করার সুযোগ। পরমাণুরা যখন গতিশীল হয়, তখন এরা একে অন্যের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে নতুন নতুন পরমাণুর বিন্যাস তৈরি করে—এতে করে সৃষ্টি হয় জগতের সকল ধরনের পরিবর্তন। এই দুই চিন্তক মনে করতেন যে, পরমাণুর সংখ্যা অসীম, কিন্তু এরা একে অন্যের সাথে জড়িয়ে যত ধরনের বিন্যাস সৃষ্টি করে সেগুলোর সংখ্যা সসীম—যা থেকে আপাত অস্তিত্বশীল বিভিন্ন উপাদানের নির্দিষ্ট সংখ্যার ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। উদাহরণ স্বরূপ, যে পরমাণু দ্বারা আমাদের শরীর গঠিত, আমরা মরে গেলে সেগুলো ধ্বংস এবং অদৃশ্য হয়ে যায় না, বরং সেগুলো বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে—যা পুনর্গঠনের যোগ্য।

এটোমিজম নামে ডেমোক্রিটাস এবং লিওকিপাস-এর প্রদত্ত থিওরিকে বলা হয় ব্রহ্মাণ্ডকে নিয়ে প্রথম পূর্ণাঙ্গ অধিযন্ত্রবাদী দৃষ্টিভঙ্গি—যেখানে ঈশ্বরের কর্তৃত্ব কিংবা ঈশ্বরের সাহায্যের কোন ইঙ্গিত নেই। ম্যাটারের মৌলিক বৈশিষ্ট্যের চিহ্নিতকরণেও কাজ করেছিল এই থিওরি, যা পরবর্তীতে পদার্থবিদ্যার উন্নয়নে প্রমাণিত হয়েছিল গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে—বিশেষ করে সতেরো শতাব্দীর পর থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞানে তোলপাড় সৃষ্টি করা এটোমিক থিওরির জন্মদাতাও ডেমোক্রিটাস এবং লিওকিপাস-এর চিন্তা।

অনুবাদ ।। শরিফুল ইসলাম
মূলঃ দ্যা ফিলসফি বুক

Comments

comments

1,464 views

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *