ডাইয়োজিনিসের কথা বলতে গিয়ে প্লেটো একবার বলেছিলেন, “সে হল পাগল হয়ে যাওয়া সক্রেটিস।” যদিও কথাটা উনি বলেছিলেন অপমান করার উদ্দেশ্যে, কিন্তু কথাটা খুব একটা মিথ্যা না। সক্রেটিসের মত ভালো কাজ করা এবং জাগতিক আরাম-আয়েশকে প্রত্যাখ্যান করার অনুরাগ ডাইয়োজিনিসেরও ছিল, কিন্তু ডাইয়োজিনিস সেটাকে নিয়ে গিয়েছিলেন চরম পর্যায়ে। তার মতে, একটা ভালো কিংবা বাঁচার যোগ্য জীবন যাপন করতে হলে বাহিরে সমাজের আরোপিত ধরাবাঁধা নিয়ম থেকে এবং ভেতরে আকাঙ্ক্ষা, আবেগ এবং ভয় দ্বারা সৃষ্ট অতুষ্টি থেকে নিজেকে মুক্ত করাটা জরুরি। তিনি বলেন, কোন রকমের লজ্জাবোধ ছাড়া প্রথাকে প্রত্যাখ্যান করে, ধন-সম্পদ আর আরাম-আয়েশের আকাঙ্ক্ষাকে পরিত্যাগ করে যুক্তি এবং প্রাকৃতিক প্রবৃত্তি দ্বারা পরিচালিত একটা তুষ্ট—সাধারণ জীবন যাপনের মধ্য দিয়েই এটা অর্জন করা সম্ভব।
ডাইয়োজিনিস ছিলেন ‘সিনিক’ নামে পরিচিতি এক চিন্তক দলের প্রথম চিন্তক—যেখানে ‘সিনিক’ পরিভাষাটি এসেছে গ্রীক শব্দ ‘কুনিকস’ থেকে—যার অর্থ ‘কুকুর সদৃশ’। এই নামের অর্থ সিনিকদের সমাজের সকল রীতিনীতির মুখে লাথি মেরে যতটা সম্ভব প্রকৃতির ছন্দে জীবনযাপন করার দৃঢ় সংকল্পকে ইঙ্গিত করে। তাদের মতে, একজন মানুষ যত বেশি সমাজের মুখে লাথি মারতে পারবে, তার জীবন ততই আদর্শ হয়ে উঠবে—যেমনটা করেছিলেন ডাইয়োজিনিস—যিনি একটা পরিত্যক্ত ডাবার মধ্যে দারিদ্র্যে কাটিয়ে দিয়েছিলেন নিজের পুরো জীবন।
ডাইয়োজিনিস বলেন, সে ব্যক্তিই সবচাইতে ধনী যার জীবন যাপিত হয় প্রকৃতির ছন্দের তালে তালে, যে কিনা মুক্ত থাকে সকল নিয়মকানুন থেকে, সভ্য সমাজের নীতিশাস্ত্র থেকে—এবং যে তুষ্ট থাকে অল্পতেই।
অনুবাদ ।। শরিফুল ইসলাম
মূলঃ দ্যা ফিলসফি বুক