জিনোঃ জীবনের লক্ষ্য হল প্রকৃতির সাথে এক হয়ে বাঁচা

অ্যারিস্টটলের মৃত্যুর পর পশ্চিমা দর্শনে দুটি প্রধান দার্শনিক চিন্তার স্কুলের আবির্ভাব হয়েছিলো। একটা ছিল এপিকিউরাসের ঈশ্বরহীন আনন্দবাদী নীতি—যেটা লোকের কাছে খুব একটা গ্রহণযোগ্যতা পায়নি, আর আরেকটা ছিল জিনো অফ সিটিয়াম-এর জনপ্রিয় এবং দীর্ঘ মেয়াদী নিঃস্পৃহবাদ। জিনো ডাইয়োজিনিস-এর অনুসারী সিনিকদের সাথে পড়ালেখা করেছিলেন—যেখানে তিনি ব্যক্ত করেছিলেন জীবনের প্রতি তার বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন দৃষ্টিভঙ্গির কথা। আধ্যাত্মিক জল্পনা-কল্পনায় তার ধৈর্য ছিল খুবই কম এবং তিনি দ্রুত বিশ্বাস করে নিয়েছিলেন যে ব্রহ্মাণ্ড পরিচালিত হয় এক মহত্তম বিধানকর্তা প্রদত্ত প্রাকৃতিক নিয়ম দ্বারা। তিনি ঘোষণা করেছিলেন যে, এই বাস্তবতা পরিবর্তনের কোন ক্ষমতাই মানুষের নেই এবং এর উপকারিতা উপভোগ করতে হলে মানুষকে অবশ্যই এটার নিষ্ঠুরতা এবং অবিচারকেও মেনে নিতে হবে।

স্বাধীন ইচ্ছা
জিনো আরও ঘোষণা করেন যে, মানুষকে একটা যৌক্তিক আত্মা প্রদান করা হয়েছে যা দিয়ে সে স্বাধীন ইচ্ছার চর্চা করতে পারে। এখানে, ‘সুন্দর’ জীবনের পেছনে ছোটার জন্য কাউকে জবরদস্তি করা হয় না। জীবনে যা কিছু মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে সেগুলোকে পাশে ফেলে সুখ, যন্ত্রণা, দারিদ্র্য ও প্রাচুর্যের প্রতি অনীহা প্রকাশ করা বা না করাটা ব্যক্তির নিজের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। তবে কেউ যদি এটা করে, জিনো বলেন, তাহলে সে প্রকৃতির সকল পরিপ্রেক্ষিতে—ভালো এবং খারাপ—সঙ্গতিপূর্ণ একটা জীবন অর্জনে সক্ষম হবে, এবং সে মহত্তম বিধানকর্তার শাসনানুসারে জীবনযাপন করতে পারবে।

হেলেনীয় গ্রীসের বেশীরভাগ মানুষ এই নিঃস্পৃহবাদের পক্ষে ছিল। ছয় শতাব্দীতে খ্রিস্টধর্মের আবির্ভাবের আগ পর্যন্ত—সম্প্রসারিত রোমান সাম্রাজ্যে এই মতবাদের জনপ্রিয়তা বেড়ে গিয়েছিল আরও বেশি—যেখানে এটা ছড়িয়ে পড়েছিল রাজনৈতিক এবং ব্যক্তি পর্যায়ে নৈতিকতার ভিত্তি হিসেবে।

অনুবাদ ।। শরিফুল ইসলাম
মূলঃ দ্যা ফিলসফি বুক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *