সূর্যটা এখন উদিত হলো ডান দিকটায়,
যেন সাগরের নিচ থেকে ভেসে উঠলো,
এখনো কুয়াশায় লুকিয়ে আছে, বাঁ দিকটায়,
ডুব দিলো সাগরে।
এবং এখনো সুন্দর দখিনা বাতাস বয়ে চলছে পেছনে,
কিন্তু এবার কোনো সুন্দর পাখি আমাদের পিছু নেয়নি,
না কোনো পাখি এসেছিলো খেতে অথবা খেলতে
নাবিকের কামরায়!
এবং আমি একটা পাপিষ্ঠ কাজ করে বসেছি,
যা তাঁদের উপর ডেকে আনবে বিপর্যয়ঃ
সবাই নিশ্চিত, আমি পাখিটা মারার কারণেই
জোরে বাতাস বইতে শুরু করেছে,
আহ হতভাগা! তাঁরা বললো, এমন পাখি কেউ মারে,
এজন্যই জোরে বাতাস বইতে শুরু করেছে!
না ক্ষীণ, না রক্তিম, যেন ঈশ্বরের নিজের মাথা,
উজ্জ্বল সূর্যটা জেগে উঠলোঃ
তারপর সবাই নিশ্চিত, আমি পাখিটা মারার কারণেই
এসেছে ঘন কুয়াশা,
এটাই ঠিক, তাঁরা বললো, এমন পাখি কেউ মারে,
এজন্যই ধেয়ে আসছে এমন ঘন কুয়াশা!
মৃদু বাতাস বইতে শুরু করলো,
সাদা মেঘ উড়তে শুরু করলো,
জাহাজটা মুক্তভাবে ভাঁজ কেটে যাচ্ছিলো পানিতে,
আমরাই প্রথম উদিত হলাম
এই নীরব সাগরে।
বয়ে চলা বাতাসটা হঠাৎ থেমে গেলো,
নেমে গেলো জাহাজের গতি,
বিষণ্ণতায় ছেয়ে গেলো সবকিছু,
আর আমরা কথা বলছিলাম
শুধুই সাগরের নীরবতা ভাঙতে!
বিকালে লাল সূর্যটা তেতে উঠেছিলো
গরম, তামাটে আকাশটায়,
ঠিক এসে দাঁড়িয়েছিলো মাস্তুলের আগায়,
দেখতে চাঁদের চেয়ে বড় নয়।
দিনের পর দিন, দিনের পর দিন,
আমরা আটকা পড়েছিলাম,
আটকে গিয়েছিলো নিঃশ্বাস, নিস্পন্দ;
যেন একটা অঙ্কিত জাহাজ
দাঁড়িয়ে আছে একটা অঙ্কিত সমুদ্রে।
পানি, পানি, সবখানে পানি,
আর সবকটি তক্তা চুপসে গিয়েছিলো
পানি, পানি, সবখানে পানি,
কিন্তু পান করার মত একটি ফোঁটাও ছিলো না।
একেবারে গভীরে ধরেছিলো পচনঃ আহ ঈশ্বর!
এমনি হওয়ার কথা ছিলো!
হ্যাঁ, চটচটে সরীসৃপ ভেসে বেড়াচ্ছিলো
চটচটে সাগরটায়।
প্রচণ্ড ঘূর্ণনে
মৃত্যু -আগুনরা নাচছিলো সারা রাত,
পানিটা, যেন ডাইনির হাতে যাদুর তেল,
পুড়ে পুড়ে হচ্ছে সবুজ, নীল আর সাদা।
কেউ কেউ নিশ্চিত করলো তাঁরা
স্বপ্নে দেখেছে সেই অশুভ আত্মাকে,
যে আমাদেরকে ফেলেছে এই মহামারিতে
নয় ফেদম পানির গভীরে সে আমাদের
পিছু নিয়েছিলো, কুয়াশা আর তুষারের দেশ থেকে।
প্রতিটা জিহ্বা তৃষ্ণায় চৌচির হয়ে গিয়েছিলো,
শুকিয়ে গিয়েছিলো গোড়া থেকে,
আমাদের মুখ থেকে কোন কথা বেরুচ্ছিলো না
যেন আমাদেরকে গলায় কেউ ঠেসে দিয়েছে ভুসি।
আহ! একদিন! আমার চেহারা দেখাচ্ছিলো শয়তানের মত,
তীরের বদলে, আমার ঘাড়ে
ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছিলো অ্যালবাট্রসটা।
———
দ্বিতীয় অংশের সমাপ্তি। (চলবে…)