মনের ঘরে (৮)

২৬
একটা মানব শিশু জন্ম গ্রহণ করার পরে সুইটু-কিউটু, গুলুগুলু, এডোরেবল সময়টা পার কইরা সলিড খাবার খাওয়া, হাঁটা এবং কথা বলা শিখার পর একটু শক্তপোক্ত হইয়া উঠলে তার ভেতরে একটা বিলিফ সিস্টেম ঢুকাইয়া দেওয়ার পাশাপাশি কনট্রাডিক্টলি যেই জিনিসটার ইনপুট দেওয়া শুরু করা হয় সেইটা হইল লজিক। শিশু মাইন্ডরে শেখানো হয় একের সাথে এক যোগ করলে হয় দুই, দুই থেকে এক বিয়োগ করলে থাকে আর এক, নয়রে তিন দিয়া ভাগ করলে ভাগফল হয় তিন। এইভাবে স্টেপ বাই স্টেপ গাণিতিক লজিক শিখতে শিখতে একটা মাইন্ড বড় হইতে থাকে। এই লজিক দিয়া সে যে শুধু ইস্কুল-কলেজই পাশ করে তা না, সে তার ব্যবহারিক জীবনে মেটেরিয়াল সারভাইবালের ক্ষেত্রে এইসব লজিক এপ্লাই করতে থাকে। এই ফান্ডামেন্টাল লজিকগুলা সব হিউম্যান মাইন্ডই খুব সহজে ক্যাপচার কইরা ফালায়। লজিকের মত প্যারালালি আরেকটা জিনিস হিউম্যান মাইন্ডে গ্রো করতে থাকে সেইটা হইল র‍্যাশনালিটি। লজিক আর র‍্যাশনালিটি দুইটা পরস্পর সম্পর্কযুক্ত হইলেও এই দুইয়ের মধ্যে একটা পার্থক্য বিদ্যমান, যেইখানে লজিক হইল লিনিয়ার থিংকিং দিয়া স্টেপ বাই স্টেপ বিভিন্ন প্রিন্সিপ্যাল ফলো কইরা আগাইয়া যাওয়া আর র‍্যাশনালিটি হইল যেকোন চিন্তা, ঘটনা, ফেনোমেনা এবং বিলিফরে রিজনিং কইরা ভ্যালিডেট করা। সারাউন্ডিং তার শিশু মাইন্ডরে খুব যত্ন কইরা (অনেকটা জোর কইরা) লজিক শিখাইলেও র‍্যাশনালিটির চর্চায় এঙ্গেজ করার মত কোন সিস্টেম কিংবা পন্থা মাইন্ডরে বাতলাইয়া দেয় না। এইটা না হয় পারিবারিক সেটআপে, না হয় সোশ্যাল সেটআপে, এমনকি না হয় এডুকেশনাল সেটআপেও। এই ক্ষেত্রে র‍্যাশনালিটির জায়গায় বিলিফ সিস্টেম থেকে ধার করা কিছু মরাল প্রিন্সিপ্যাল অবশ্য তারে শেখানো হইয়া থাকে। অবস্থা যখন এইরকম, তখন মাইন্ড নিজে নিজেই অবজারভেশনাল লার্নিং-এর মধ্য দিয়া নিজের ভেতর সব কিছুই নিজের মত কইরা কিংবা অবজার্ভড এনভায়রনমেন্টের ইনফ্লুয়েন্স দিয়া রিজনিং কইরা নিতে থাকে। এই ক্ষেত্রে ইনডিভিজুয়াল মাইন্ড কালেক্টিভ র‍্যাশনালিটির দিকেই বেশি ঝুঁকে পড়ে, যেইখানে মাইন্ডে রিজনিং চলে ক্লাস্টার ভেদে ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে। যারা রিলিজিয়াস তাদের রিজনিং একরকম, যারা এথিস্ট তাদের রিজনিং একরকম, যারা এপাথিস্ট তাদের রিজনিং একরকম, যারা ক্যাপিটালিস্ট তাদের রিজনিং একরকম, যারা মার্ক্সিস্ট তাদের রিজনিং একরকম ইত্যাদি। আবার বিভিন্ন পলিটিক্যাল পার্টির ফলোয়ারদের রিজনিং-ও হয় ভিন্ন ভিন্ন। এই কালেক্টিভ র‍্যাশনালিটিতে বেশিরভাগ মাইন্ডই তার নিজের ক্লাস্টারের বাইরের রিজনিংগুলারে ইর‍্যাশনাল হিসেবে বিবেচনা করে। ঠিক এই স্টাইলটা ইনডিভিজুয়াল মাইন্ড তার নিজের ইনডিভিজুয়াল জীবনের আচার-আচরণ, চিন্তা-চেতনা এবং ডিসিশন মেকিং-এর ক্ষেত্রেও এপ্লাই করে। নিজের এই ক্লাউডি রিজনিং-এর স্টাইলটাকে বেশিরভাগ মাইন্ড ধইরা নেয় র‍্যাশনালিটি হিসেবে। অর্থাৎ মাইন্ড ভাবে যে, সে সম্পূর্ণ র‍্যাশনাল, যেইখানে সে অলমোস্ট সবসময় ডুইবা থাকে ইর‍্যাশনাল বিহেভিয়ারে। এখন প্রশ্ন হইল, মাইন্ড কীসের তাড়নায় এমন অযৌক্তিক আচরণ করে এবং রিজনিং-এর ক্লাউডগুলা আসলে কী? উত্তর হইল, ইমোশন।

২৭
একটা শিশু মাইন্ডরে লজিক আর মরাল প্রিন্সিপ্যাল শিখানোর পাশাপাশি র‍্যাশনালিটির চর্চাটাকে যখন ইগনোর করা হয়, তখন ওই জায়গাটা আসলে দখল কইরা নেয় মাইন্ডের অভ্যন্তরীণ সব ইমোশন। এবং যখন র‍্যাশনালিটির মত মাইন্ডরে ইমোশনাল এওয়ারনেসের কথাও একেবারেই বলা হয় না, সেইখানে তখন ইমোশনগুলা অটোপাইলট মুডে কাজ করা শুরু করে এলোপাতারি ভাবে। চর্চার অভাবে র‍্যাশনালিটির অনুপস্থিতি থাকলেও, ইমোশনের উপস্থিতির জন্য কোন প্রকারের চর্চার প্রয়োজন পড়ে না। কারণ ইমোশন ইন্টেলেক্ট ছাড়াও ফাংশন করতে পারে। আর এইভাবে বড় হইতে হইতে একটা এডাল্ট মাইন্ড তার শেখা লজিক আর ইনবিল্ট ইমোশনাল ড্রাইভগুলারেই র‍্যাশনালিটি ভাইবা বইসা থাকে। সেই মাইন্ড জানেই না যে লজিক্যাল হইয়াও ইর‍্যাশনাল আচরণ করা যায়। যেমন ধরেন, আপনি একজন থার্ড পারসন হিসেবে দেখতে পাইতেছেন যে আপনার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু কিংবা সহকর্মী কিংবা সিবলিং-কাজিন একটা টক্সিক রিলেশনশিপে জড়াইয়া আছে, যেইটা আপনার চোখের সামনে তার লাইফরে তিলে তিলে শেষ কইরা দিতেছে। আপনি স্পষ্ট দেখতে পাইতেছেন, যে, এই মুহূর্তে তার একমাত্র যৌক্তিক আচরণ হবে এই সম্পর্কটার ইতি টাইনা দেয়া, কিন্তু আপনি তারে যতই বুঝাইতে যান সে উল্টা আপনারে নানান যুক্তি দেখাইয়া সেই সম্পর্কটাতে আটকা পইড়া থাকে। আপনি বুঝতে পারেন, যে, সে আসলে ইর‍্যাশনাল আচরণ করতেছে। এবং আসলে সে তাই করতেছে। ঠিক এই আচরণের মধ্যেই যদি তারে আপনি জিজ্ঞেস করেন দুইয়ে দুইয়ে যোগ করলে কত হয়, সে ঠিকই আপনারে উত্তর দিবে যে দুইয়ে দুইয়ে যোগ করলে চার হয়। অর্থাৎ ইর‍্যাশনাল হইলেও সে তার লজিক হারায় নাই। এইরকম কইরা লাইফের অনেক আসপেক্টেই আমাদের মাইন্ড ইর‍্যাশনাল আচরণ কইরা থাকে লজিক্যাল থাইকাও। কিন্তু মাইন্ড অলমোস্ট কখনই তার ইর‍্যাশনালিটিরে এডমিট করতে চায় না। কিন্তু এর মানে এই না যে মাইন্ডে র‍্যাশনাল পার্ট একেবারেই থাকে না। বরং কোণঠাসা হইয়া থাকলেও মাইন্ডের একটা পার্ট সবসময় র‍্যাশনাল, আর আরেকটা প্রমিনেন্ট পার্ট হইল ইমোশনাল। মাইন্ডের ইমোশনাল তাড়নাগুলা সাধারণত এত শক্তিশালী হয়, যে, সে বেশিরভাগ সময়ই সেই তাড়নাগুলারে ইগনোর করতে পারে না। মাইন্ডের এই ব্যাপারটা নিয়া রাশিয়ান লেখক দস্তয়ভস্কি ১৮৭৫ সালে প্রকাশিত তার লেখা উপন্যাস ‘দ্যা র ইউথ’-এ উল্লেখ কইরা বলছিলেন, “প্রতিটা মানুষেরই যেন একটা দ্বিতীয় সেলফ আছে যেইটা ঠিক প্রথম সেলফেরই পাশে দাঁড়াইয়া থাকে; যেইখানে একটা সেলফ হইল সেন্সিবল এবং র‍্যাশনাল, কিন্তু অপর সেলফটা হইল সম্পূর্ণ সেন্সলেস এবং হাস্যকর; এবং তুমি হঠাৎ খেয়াল কইরা দেখলা যে তোমার কেবল সেন্সলেস মজার জিনিসগুলাই করতে ভালো লাগে, কেন লাগে সেইটা তুমি জানো না; যেইটা তুমি আসলে করতেও চাও না কিন্তু তবুও তুমি তোমার সর্বশক্তি দিয়া ফাইট কইরা শেষ পর্যন্ত এইটাই করো।”

আমাদের মাইন্ডের ইমোশনাল সেলফ আর র‍্যাশনাল সেলফের যুদ্ধক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় প্রথমটারই জয় হয়। তাইলে কি আমি ইঙ্গিত দিতে চাইতেছি যে ইমোশন খারাপ জিনিস? না, মোটেই না। ইমোশন ছাড়া মাইন্ড এক্সিস্ট করতে পারে না। ইমোশন হইলো মাইন্ড ফাংশনালিটির জুসি তথা রসালো পার্ট, যেইখানে র‍্যাশনালিটি হইল ড্রাই তথা শুকনা পার্ট। দুইটাই দরকারি। কিন্তু এইখানে উল্ল্যেখ্য, ইমোশনের টেনডেন্সি হইলো মাইন্ডকে সবসময় ন্যারো কইরা রাখা এবং মাইন্ডের ইমিডিয়েট ডিজায়ারগুলারে পূরণ করতে পারে এইরকম একটা-দুইটা আইডিয়ার উপর ফোকাস কইরা থাকা। এইটা একরকম ভাবে মাইন্ডকে প্রেজেন্ট মোমেন্টে নিয়া আসতে সাহায্য করলেও ইমোশনাল এওয়ারনেসের অভাব মাইন্ডের হারমোনি, বিগার আইডিয়ার ভিশন, ক্যালকুলেশন আর দূরদৃষ্টিরে কইরা তোলে ঘোলাটে, কনফিউজড এবং ক্লামজি।

Comments

comments

1,431 views

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *