মনের ঘরে (৭)

২৩
এই প্ল্যানেটে যত প্রাণী আছে (অন্যান্য গ্রহের সলিড কোন খবর আমরা এখনো জানি না) তার মধ্যে মানুষ নিজেরে শ্রেষ্ঠ মনে করার অন্যতম প্রধান কারণ হইল হিউম্যান মাইন্ড অনুভব করে কিংবা ভাইবা নেয়, যে, সে যা কিছুই করে তার প্রায় সবকিছুতেই তার নিজের চয়েস বইলা কিছু একটা আছে। অর্থাৎ তার স্বাধীন ইচ্ছা আছে। সে মনে করে যে সে ভালো আর মন্দরে আলাদা করতে জানে। কোন কিছু করা থেকে নিজেরে বিরত রাখতে জানে, আবার চাইলে সে কোন কিছুতে নিজেরে ইনভল্ব করতেও জানে। তার মতে অন্যান্য প্রাণীরা এইটা করতে পারে না। অন্যান্য প্রাণীদের মানুষের মত মাইন্ড নাই। জগতের অন্য সবকিছুর থাইকা মানুষের এই যে বড় একটা ডিশটিংশন এইটার উপর ভিত্তি কইরা হিউম্যান মাইন্ড তার নিজের জীবনের একটা গ্রেটার মিনিং তথা অর্থ খুঁইজা পায়। এই মিনিং তার জীবনের একটা পারপাস ঠিক কইরা দেয়, যদিও বেশিরভাগ মাইন্ড ঠিক ক্লিয়ারলি ঠাওরাইতে পারে না এই জগতে তার পারপাসটা আসলে কী। কিন্তু পারপাস যে একটা আছে সেইটা ভাইবাই মাইন্ড একটা দিশা খুঁইজা পায়। স্বাধীন ইচ্ছার এইরকম একটা গ্র্যান্ড ধারনা নিয়া বেশিরভাগ মাইন্ড দৈনন্দিন ফাংশন কইরা গেলেও তার অলমোস্ট নিরানব্বই ভাগ বিহেবিয়ারই হয় কমপালসিভ। অর্থাৎ রিয়্যালিটিতে মাইন্ড যতটা ভাইবা নেয় ততটা স্বাধীন ইচ্ছা আসলে তার নাই। মানুষের আদৌ কোন ফ্রি উইল তথা স্বাধীন ইচ্ছা আছে কি নাই সেইটা নিয়া দার্শনিক তর্ক চইলা আসতেছে সেই গ্রিক আমল থাইকাই। বর্তমানেও এইটা অনেকটা দার্শনিক তর্কে আটকে থাকলেও আধুনিক নিউরোসাইন্স মাইন্ডের ফ্রি উইল না থাকার পেছনে একটা (হইতে পারে কয়েকটা) অবজেক্টিভ ফাইন্ডিংস খুঁইজা পাইছে, সেইটা হইল, যে, মানুষ কনশাসলি যেইসব ডিসিশন নেয় সেইগুলা তার আনকনশাস মাইন্ডে কয়েক মাইক্রো সেকেন্ড আগেই নেয়া হইয়া যায়। অর্থাৎ আপনি এখন চিন্তা করে যদি সিদ্ধান্ত নেন যে এখন আপনি একটা আইসক্রিম খাবেন, এই সিদ্ধান্তটা আপনি কনশাসলি নেয়ার কয়েক মাইক্রো সেকেন্ড আগেই আপনার ব্রেইন নিয়া রাখছে যেইটা আপনি জানেন না। তবে ফ্রি উইল নিয়া নিউরোসাইন্সের গবেষণা এখনো চলমান থাকায় হোক আর ফ্রি উইল নাই একরকম সত্যে উপনীত হইলে মানুষের মরাল গ্রাউন্ড থেকে শুরু কইরা মেটেরিয়াল সব সিস্টেমের ভিত নইড়া যাবে এই শঙ্কার কারণেই হোক ফ্রি উইলের এরিয়াটা এখনো ধোঁয়াশা। যেইটা এখন পর্যন্ত পরিষ্কার সেইটা হইল হিউম্যান মাইন্ডের কমপালসিভ বিহেভিয়ার।

২৪
একটা মাইন্ড ২৪ ঘণ্টায় যতগুলা ডিসিশন গ্রহণ করে, যত ধরনের অনুভূতিতে রিয়েকশন শো করে, যতগুলা মানুষের সাথে যত বিষয় নিয়া ডিল করে তার খুবই ক্ষুদ্র অংশে সে নিজের কনশাস চয়েস এপ্লাই করতে পারে। তার প্রায় সব চয়েসই সে মেইক করে সিচুয়েশনের ভ্যারিয়েবলের উপর ভিত্তি কইরা এবং এই ভ্যারিয়েবলগুলা এতটাই সূক্ষ্ম যে মাইন্ড তার নিজের কমপালসন প্রায় সময় ধরতেই পারে না। অর্থাৎ সে জানেই না যে সে নিজে নিজের নিয়ন্ত্রণে নাই। সূক্ষ্ম ব্যাপার ছাড়াও মাইন্ড এতটাই কমপালসিভ থাকে যে নিজের অনেক আচরণ সে জাইনা বুইঝাও পরিবর্তন এবং নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। যেমন ধরেন, আপনি জানেন চিনি শরীরের জন্য ক্ষতিকর, কিন্তু আপনি কিছুতেই মিষ্টি খাওয়া ছাড়তে পারেন না। বা আমি জানি সিগারেট শরীরের জন্য ক্ষতিকর, কিন্তু আমি সেইটা ছাড়তে পারি না। অথবা আপনি জানেন যে যেকোন বিষয়ে রাইগা গেলে সেইটা আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, কিন্তু আপনার রাগ কখনই আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকে না। এইসব ভিজিবল কমপালসনগুলারে হিউম্যান মাইন্ড একরকম ফ্যাশনেবলি এডমিট কইরা নিলেও তার প্রায় সব কাজই যে কমপালসিভ এইটা সে এডমিট করতে চায় না। শোষিত হওয়ার একটা ক্ষুধা যেহেতু হিউম্যান মাইন্ডে লুকায়িত অবস্থায় থাকে, তাই মাইন্ডের একটা বিগেস্ট হিডেন কোয়ালিটি হইল সে দাসত্ব পছন্দ করে। সে অনেক কিছুতেই দাস হইয়া থাকতে চায়। দৃশ্যমান ডিগনিটিতে আঘাত না করলে দাসত্বে হিউম্যান মাইন্ড খুব একটা সমস্যা বোধ করে না। যেমন, প্রাচীন যুগে মানুষ বেচা কেনা কইরা, গলায় পায়ে শিকল পড়াইয়া, শারীরিক টর্চার কইরা যে দাস প্রথার চর্চা করা হইত সেইটার বিরুদ্ধে আধুনিক হিউম্যান মাইন্ড বিদ্রোহ কইরা উঠলেও, বর্তমান ক্যাপিটালিজমের যুগে যে মানুষ অন্য ফর্মে মেটেরিয়ালিজমের দাসত্ব কইরা যাইতেছে সেইটা নিয়া তার এখনো তেমন সমস্যার বোধ জাগ্রত হয় নাই। কারণ এইখানে মনুষ্য ডিগনিটিতে ভিজিবলি হার্ট করার তেমন কোন ব্যাপার নাই। মেটেরিয়াল দাসত্বের এই কালেক্টিভ চর্চার ধারা গিয়া ঢুইকা পড়ে ইনডিভিজুয়াল সেলফ স্লেইভারির ভিতরেও। বাহিরের দাসত্বের চাইতেও হিউম্যান মাইন্ড নিজের দাসত্বে আরও বেশি আসক্ত। মাইন্ড নিজের অভ্যাসের দাস হইয়া থাকতে বেশি পছন্দ করে। মাইন্ডের নিত্যদিনের সবগুলা অ্যাক্ট সে তার হ্যাবিট প্যাটার্নের ফাঁদে পইড়া সম্পন্ন করে। এইটা করার ক্ষেত্রে যখন তার এই কর্মকাণ্ডগুলা থাইকা ভালো কোন ফলাফল বাহির হইয়া আসে, তখন সে নিজের ফ্রি উইলের ক্রেডিট নিতে কৃপণতা করে না, আর যখন কোন সিগনিফিক্যান্ট কিছুর ক্ষেত্রে সে রিয়্যালিটির অনিয়ন্ত্রিত অবস্থাটা বুঝতে পারে, তখন সে কমপালসনের ভিকটিমহুডে ঢুইকা নিজেরে সেইভ করে। নিজের চয়েস আর কমপালসন নিয়া মাইন্ডের এই জিমন্যাস্টিক খেলাটা অন্যান্য খেলার মতই মজার। এখন প্রশ্ন হইল, মাইন্ড কি নিজের কমপালসনের বাহিরে গিয়া চয়েস মেইক করতে পারে না? আমরা তো দেখতে পাই যে পারে। এই যে আমি এই লেখাটা লিখতেছি আমার চয়েসে, আর আপনি সেইটা পড়তেছেন আপনার চয়েসে। কিন্তু আসলেই কি তাই? মনে তো হয়। এই মনে হওয়াটারে কিংবা আমিই কাজটা করতেছি এই অনুভূতিটারে অ্যামেরিকান ফিলোসফার এবং নিউরোসাইন্টিস্ট স্যাম হ্যারিস নাম দিছে ‘দ্যা ইল্যুশন অব ফ্রি উইল’। এই ইল্যুশন দিয়াই হোক আর সত্যিকার ফ্রি উইল দিয়াই হোক, মাইন্ড যেই কাজটা করতে পারে সেইটা হইল সে নিজেরে নিজে দেখতে পারে, নিজের প্যাটার্ন সম্পর্কে নিজে এওয়ার হইতে পারে, নিজের হাস্যকর দিকগুলার দিকে তাকাইয়া নিজেই হাসতে পারে – যেই এওয়ারনেস গভীরভাবে ইমপ্যাক্ট ফেলতে পারে মাইন্ডের এক্সটারনাল এবং ইন্টারনাল সব ভ্যারিয়েবলের উপর, মাইন্ডকে কইরা তুলতে পারে লেস কমপালসিভ এন্ড মোর কনশাস।
(আচ্ছা ফ্রি উইলের টেস্ট হিসেবে দেখেন তো এখন এই মুহূর্তে আপনি নিজের চয়েসে আমার এই লেখাটা এইখানেই পড়া থামাইয়া দিতে পারেন কিনা, অর্থাৎ পরের প্যারায় আপনি আর গেলেন না)

২৫
মনুষ্য ইতিহাসে যত ধরনের আবিষ্কার, পরিবর্তন, উন্নতি এবং অগ্রগতি সাধন হইছে সেইখানে নেসেসিটির চাইতে কাজ করছে বেশি হিউম্যান মাইন্ডের কিউরিসিটি। হিউম্যান মাইন্ড কিউরিয়াস। নো ম্যাটার হোয়াট, মাইন্ড বরাবরই কিউরিয়াস। এই কিউরিসিটি থাইকা জন্ম নেয় মাইন্ডের সিকিং। জন্মের পর থাইকাই প্রতিটা মাইন্ড সিক করা শুরু করে। এইটা কী, ওইটা কী, সেইটা কী, ওইটা কেন, কেন সেইটা এইরকম না হইয়া অন্যরকম হইল না, জীবন কী, মরণ কী, জীবন কেন, মরণ কেন, সৃষ্টি কী, ধ্বংস কী, বস্তু কী, অবস্তু কী এইরকম অসংখ্য জিনিসের প্রশ্নের উপর ভর কইরা হিউম্যান মাইন্ড সিক করতে থাকে জীবনভর। অর্থাৎ আমরণ খুঁজতে থাকে নিজেরে এবং নিজের অস্তিত্বের উৎসরে। এই খোঁজাখুঁজিতে উন্মোচিত হইতে থাকে রিয়্যালিটি তথা নিজ সত্তা তথা ব্রহ্মাণ্ডের ইন্টারনাল এবং এক্সটারনাল সব ন্যাচার। কিন্তু সব হিউম্যান মাইন্ড পুরা লাইফটাইমে এই খোঁজাখুঁজির চলমান ধারাটা একইরকম ভাবে ধইরা রাখতে সক্ষম হয় না। কারণ ওভারঅল মাইন্ডের ন্যাচার অব কিউরিসিটি স্ট্রং হইলেও এভারেজ মাইন্ডের সবকিছু নিয়া দ্রুত কনক্লুশনে চইলা যাওয়ার টেনডেন্সি তার চাইতেও বেশি স্ট্রং। যেহেতু মাইন্ড জীবনভর সিকিং-এর উপর থাকলে অনেক বেশি এক্সজস্টেড ফিল করে তাই এভারেজ মাইন্ডগুলা একটা পর্যায়ে সিকিং বাদ দিয়া সবকিছু নিয়া একটা কনক্লুশনে পৌঁছাইয়া এক ধরনের আরামের আশ্রয় নিয়া নেয়। শুধু যে এক্সিসটেনশিয়াল, জটিল এবং ইউনিভার্সের গ্র্যান্ড বিষয়গুলা নিয়া মাইন্ড তার অরগানাইজেশনাল ফাদার ফিগারের সাহায্যে দ্রুত কনক্লুশনে পৌঁছাইয়া যায় তাই না, দৈনন্দিন জীবনে প্রতিটা কর্মকাণ্ডে ইনডিভিজুয়াল মাইন্ড ধুপধাপ কনক্লুশনে পৌঁছাইয়া বইসা থাকে। এর কারণ মাইন্ড নিজেরে কখনই পুরাপুরি ওপেন রাখতে পারে না। ওপেননেসের সাথে যেই অনিশ্চয়তা এবং লিমিটলেসনেসের ব্যাপার চইলা আসে সেইটাতে মাইন্ড সহজেই টেরিফাইড হইয়া পড়ে। কিন্তু যতই কনক্লুশনে আসুক না কেন মাইন্ডের ভেতরে যে কিউরিসিটির বাস সেইটা চাড়া দিয়া উঠে যখন তখন। সেই কিউরিসিটির তাড়না মিটাইতে মাইন্ড নিজের জন্য একটা কোপিং ম্যাকানিজম তৈরি কইরা রাখে। নিজ নিজ স্ট্রেন্থ অনুযায়ী প্রতিটা মাইন্ড তার কিউরিসিটি মিটানোর সাবজেক্ট চুজ কইরা থাকে কিংবা সাবজেক্ট নিজেই তারে চুজ করে। যেসব মাইন্ডের ইন্টেলেকচুয়াল ওপেননেস ধইরা রাখার ক্যাপাসিটি যত বেশি সেসব মাইন্ড তত জটিল বিষয়ের চর্চা কইরা তার কিউরিসিটির তাড়না মেটায় (এইখানেও অনেক মাইন্ড বিভিন্ন পর্যায়ে গিয়া কনক্লুশনের আশ্রয় নিয়া নেয়), আর অন্যদিকে কনক্লুশন প্রবণ সংখ্যাগরিষ্ঠ হিউম্যান মাইন্ড তুলনামূলক কম জটিলতা সম্পন্ন জিনিস দিয়া তার কিউরিসিটির ফাঁকা জায়গাটা ভইরা তুলে। যেমন, আমাদের দেশীয় কালচারে দেখা যায়, কোন এক জায়গায় একটা গর্ত খোঁড়ার কাজ দেখলেই একদল মানুষ আইসা জমায়েত হইয়া সেইটা উৎসাহ নিয়া দেখা শুরু করে কিংবা দুইটা মানুষ ঝগড়া লাগলে সেইখানে দশ-বিশ জন মানুষ আইসা সেইটা উৎসাহ নিয়া দেখতে থাকে কিংবা পরিবার, পাড়া, গ্রাম, মহল্লা, অফিস এবং অন্যান্য কম্যুনিটিতে একে অন্যের ব্যক্তিগত, বংশগত, গোত্রগত এবং পেশাগত নানান বিষয়ে খোশগল্প, কন্সপিরেসি এবং ক্রিটিসিজমের ব্যাপারে উৎসুক হইয়া থাকে প্রতিনিয়ত। অন্যান্য কালচারের কিউরিসিটি মেটানোর সেটআপ অন্যরকম হইলেও ব্যাসিক ফর্মটা সেইম। হিউম্যান মাইন্ডের কিউরিসিটির এই লিমিটেড ব্যবহার আর ওপেননেসের মাত্রাতিরিক্ত ভয়ের মধ্যে মাইন্ড আপাত সারভাইবালের ধারায় কোনরকমে টিকে থাকলেও—আলটিমেটলি সাক্ষাৎ মেলে না নিজের সাথে নিজের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *