২০
হিউম্যান মাইন্ডের যত ধরনের সাফারিং আছে সেইগুলারে সাম আপ করলে একটা মেজর পার্ট দখল কইরা রাখবে মাইন্ডের এংজাইটি এবং স্ট্রেস তথা মানসিক উদ্বেগ এবং চাপ। কালেক্টিভ লেভেলে খুব একটা জোরালো না হইলেও প্রতিটা ইনডিভিজুয়াল মাইন্ড বেশিরভাগ সময় ধরাশায়ী হইয়া থাকে এংজাইটি আর স্ট্রেসের কারণে। যে কোন কিছু করা বা না করা নিয়া মাইন্ড প্রায়ই অপ্রয়োজনীয় টেনশন এবং ভয়ের কবলে পইড়া যায় কিংবা মাইন্ড নিজেই সেই টেনশন এবং ভয় ক্রিয়েট করে। এইটার মাত্রা মাইন্ড টু মাইন্ড ভ্যারি করতে পারে। তবে হিউম্যান সারভাইবালের জন্য একটা নির্দিষ্ট লেভেল পর্যন্ত স্ট্রেসের প্রয়োজন পড়ে। আমাদের আদিম পূর্বপুরুষরা যেকোন থ্রেট তথা হুমকির মুখে পড়লে চিন্তা-ভাবনা না কইরা তাৎক্ষনিক যে রেসপন্স করতো সেইটারে অ্যামেরিকান সাইকোলজিস্ট ওয়াল্টার ক্যানন ১৯১৫ সালে একটা নামকরণ করছে, তা হইল ‘ফাইট এন্ড ফ্লাইট রেসপন্স’। অর্থাৎ কোন হুমকির সম্মুখীন হইলে হয় সেইটারে আক্রমণ করা, না হয় সেইটার কাছ থাইকা পালাইয়া যাওয়া। তিনি অবশ্য এইটা এনিম্যালদের কথা উল্লেখ কইরা বলছিলেন। কিন্তু আদিম মানুষদের থট প্রসেস যেহেতু এখনকার মত এত সফিসকেটেড ছিল না তাই তাদের থ্রেট রেসপন্সও এনিম্যালদের মতই ছিল যেইটা এখনো হিউম্যান মাইন্ডের থটকে অকোপাই কইরা রাখছে অনেকাংশে। হিউম্যান ইভ্যুলুশনে ফাইট এন্ড ফ্লাইট রেসপন্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন কইরা থাকে। আর এংজাইটি হইল ইভ্যুলুশনের একটা কোর পার্ট। আদিম মানুষের জন্য এংজাইটি এবং স্ট্রেসের মাত্রা তেমন কোন সমস্যার সৃষ্টি না করলেও আধুনিক মানুষের জন্য এইটা ডিজঅরডার বইলা বিবেচিত। মাইন্ডের প্রাইমারি ফাংশন যদিও তার বাহক শরীরকে বাঁচাইয়া রাখা, কিন্তু আধুনিক মানুষের লাইফে পটেনশিয়াল অনুযায়ী ফুলফ্লেজে থ্রাইভ করার ক্ষেত্রে এইটা হইয়া দাঁড়াইছে অনেক বড় বাঁধা। এইখানে বইলা রাখা ভালো, রিয়েল ফিয়ারের সামনে দাঁড়াইলে মানুষের মাইন্ড এবং বডি যে টেনশন অনুভব করে সেইটা আসলে এংজাইটি না। ইন্টারেস্টিংলি, এংজাইটি হইল রিয়েল ফিয়ারের অনুপস্থিতিতে অনুভব করা টেনশন আর নারভাসনেস। অর্থাৎ এই ক্ষেত্রে প্রতিটা হিউম্যান মাইন্ডই ক্রিয়েটিভ। প্রতিটা মাইন্ডই প্রতিনিয়ত সারি সারি কল্পিত সমস্যা তৈরি কইরা যায় যেইটার সিংহভাগই বাস্তবে কখনও ঘটে না। এই ব্যাপারে ১৫৩৩ সালে জন্ম নেয়া ফ্রেঞ্চ দার্শনিক মিশেল দে মন্টাইগনে এক উক্তিতে বলছিলেন, “আমার জীবনটা শুরু থাইকাই ভয়ংকর সব দুর্দশায় ভরপুর হইয়া আছে, যার বেশিরভাগই বাস্তবে কখনই ঘটে নাই।” আমাদের সবার মাইন্ডই মিশেল দে-এর মত ভয়ংকর ভয়ংকর দুর্দশায় পূর্ণ, বর্তমান স্টাডি অনুযায়ী যার ৮৫ ভাগই বাস্তবে কখনও ঘটে না, যেই ১৫ ভাগ ঘটে সেইটার মধ্যে আবার ৭৯ ভাগ মানুষই সেইগুলারে সহজে হ্যান্ডেল করার ক্ষমতা রাখে, অর্থাৎ আমাদের মোট ৯৭ ভাগ দুর্দশাই আমাদের মাইন্ডের কল্পিত হাস্যকর সৃষ্টি।
২১
হিউম্যান মাইন্ড কি এংজাইটিতে আসক্ত? বলা যায়, হ্যাঁ। আপাতদৃষ্টিতে মাইন্ড এংজাইটি ফ্রি থাকতে চায় এইরকম মনে হইলেও মাইন্ড আসলে এইটাতে এডিক্টেড। এই এডিকশন আসে মাইন্ডের স্থিরতার প্রতি অনীহা থাইকা। কমপালসিভ মাইন্ড সবচাইতে যেই জিনিসে বেশি টেরিফাইড হয় সেইটা হইল স্টিলনেস তথা স্থিরতা। মাইন্ডের একটা পার্ট খুব ভালো কইরাই জানে যে নিজের মধ্যে স্থিরতা আনতে পারলে সে অনেক আননেসেসারি সাফারিং থাইকা বেঁচে যাবে এবং লাইফের প্রতিটা আসপেক্টরে ডিল করতে তার জন্য অনেক সহজ হইয়া যাবে। কিন্তু এই জানাটা মাইন্ডের আনকনশাসের নিচে অসহায় অবস্থায় চাপা পইড়া থাকে জীবনভর। মাইন্ড নিজের আনকনশাসের দিকে তাকাইতে যেই পরিমাণ ভয় পায় সেই পরিমাণ ভয় সে শারীরিক মৃত্যুকেও পায় না। এই ভয়ের কারণে সে সবসময় সারফেস লেভেলে থাইকা ফাংশন কইরা যায় যেইখানে এংজাইটি এবং স্ট্রেস আসা-যাওয়া করে খুবই ফ্রিকোয়েন্টলি। সারফেস লেভেলের এই টেনশন মুডে থাকার সুবিধা হইল এইখানে অনুভূত টেনশনটা এক ধরনের উত্তেজনা বইলা বোধ হয় যেইটা মাইন্ডকে এই রহস্যময় পৃথিবীতে মুভ অন করার ক্ষেত্রে ড্রাইভিং ফোর্স হিসাবে কাজ করে। সারফেস লেভেলে থাকা এই মাইন্ড স্থিরতাকে নেগেটিভলি দেখে। বস্তুত, অনেক সময় স্থিরতা জিনিসটারে সে এক ধরনের ইনডিফারেন্স এক্ট হিসেবে বিবেচনা কইরা স্থির মাইন্ডরে (সংখ্যায় নগণ্য) ইনসেইন তথা পাগল বইলা সম্বোধন করতেও দ্বিধা বোধ করে না। মাইন্ডের সারফেস লেভেলে থাকার টেনডেন্সির পেছনে প্রধানত দুইটা রিজন কাজ করেঃ এক – কালেক্টিভ ইভ্যুলুশন, দুই – পারসোনাল ইভ্যুলুশন। আগেই বলছি যে এংজাইটি হিউম্যান ইভ্যুলুশনেরই একটা পার্ট। কালেক্টিভলি হিউম্যান মাইন্ড বিবর্তিত হইতে হইতে এখন যে পর্যায়ে আইসা পৌঁছাইছে এইখানে মাইন্ড আগের থেকে জটিলতর চিন্তা এবং চিন্তার চেইন দ্রুত এবং সহজে প্রসেস করার সক্ষমতা অর্জন করছে। কিন্তু একই সময়ে নিজের কালেক্টিভ আনকনশাস থেকে পালাইয়া বাঁচার কারণে মাইন্ড হইয়া উঠছে আগের চাইতে আরও ভালনারেবল এবং আরও এংশাস। কালেক্টিভ ইভ্যুলুশন ছাড়াও একটা মাইন্ড পারসোনালি বয়সের সাথে সাথে বিবর্তিত হইতে থাকে। চাইল্ড থাকা অবস্থায় মাইন্ডে সারাক্ষণ এক ধরনের চাইল্ডিশ অস্থিরতা কাজ করে। এই জন্যে দেখা যায় বাচ্চারা শুধু ঘুমন্ত অবস্থা ছাড়া আর কোন মুহূর্তেই স্থির হইয়া বসে থাকতে পারে না। কিন্তু বাচ্চাদের এই অস্থিরতার কোন নেগেটিভ সাইড ইফেক্ট নাই। অন্যদিকে, মাইন্ডের যখন বয়স বাড়তে থাকে তখন তার স্থিরতার পরিমাণও বাড়তে থাকে। এইখানে মজার বিষয় হইল, ব্যক্তিগত বিবর্তনের এই ধারায় বেশিরভাগ মাইন্ড সাত থেকে নয় বছর বয়সের পরে আর বিবর্তিত হয় না। অর্থাৎ সাত থেকে নয় বছর বয়সে আইসাই মাইন্ড বিবর্তিত হওয়া থামাইয়া দেয় যেইখানে বাকি জীবন সেই মানুষ শুধু গায়ে-গতরে বাড়ে আর একটিভিটিতে বাড়ে। এই হাফ-বিবর্তিত চাইল্ডিশ মাইন্ড এডাল্ট লাইফে গিয়া যখন এডাল্টহুডের একটিভিটি নিয়া এংজাইটি তথা অস্থিরতার জন্ম দিতে থাকে, সেইটার নেগেটিভ ইফেক্ট লাইফরে কইরা তুলে লিমিটেড এবং কন্সটিপেটেড।
২২
এই ধরণীতে যত ধরনের প্রেম আছে তার মধ্যে সবচাইতে শক্তিশালী প্রেম হইল হিউম্যান মাইন্ডের গল্পপ্রেম। এখন চাইলে আপনি অবাক হইতে পারেন কেন এইটা নারী-পুরুষের প্রেম হইল না কিংবা পিতা-মাতার সাথে সন্তানের প্রেম হইল না। মাইন্ড সবচাইতে বেশি ভালোবাসে গল্পকে, সকল ধরনের গল্পকে। এইটা হইতে পারে সাহিত্যের গল্প – ছোট গল্প, বড় গল্প, উপন্যাস, সিনেমা, ডকুমেন্টারি, হইতে পারে কারও ব্যক্তি জীবনের গল্প, রাষ্ট্রীয় গল্প, ঐতিহাসিক গল্প, ধর্মীয় গল্প, পৌরাণিক গল্প, জগতের সৃষ্টিতত্ত্বের গল্প, ক্যাপিটালিজমের গল্প, মার্ক্সিজমের গল্প, লিবারালিজমের গল্প ইত্যাদি। মানুষ যখন এই পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করে, তখন সে পৃথিবীতে আইসা দেখে যে এইখানে এক অদ্ভুদ লীলা খেলা তার জন্মের আগে থেকেই চইলা আসতেছে যেইটার শুরু কী সে জানে না এবং একটা বয়সে গিয়া সে বুঝতে পারে, যে, সে গুটি কয়েক বছর বাইচা থাকার পর যখন মারা যাবে তার পরেও এই লীলা খেলা চলতে থাকবে, কোথায় গিয়া এইটা শেষ হবে এবং আদৌ শেষ হবে কিনা তাও সে জানে না। অ্যামেরিকান মিথলোজিস্ট জোসেফ ক্যাম্পবেল এই ব্যাপারটারে নিয়া বলছিলেন, যে, পৃথিবীতে মানুষের এই আসা-যাওয়াটা যেন অর্ধেক ছবি পার হইয়া গেছে এইরকম একটা সিনেমা হলে ঢুকে ছবি দেখা আবার ছবির গল্পটা শেষ হওয়ার আগেই নিজের অনিচ্ছায় সিনেমা হল থাইকা বাহির হইয়া যাওয়ার মত। ঠিক এইরকম একটা অবস্থায় যেহেতু প্রতিটা হিউম্যান মাইন্ড পৃথিবীতে এক্সিস্ট করে তাই সে এই পুরা ব্যাপারটাকে বোঝার জন্য একটা গ্র্যান্ড গল্প খুঁজতে থাকে। এবং নিজ নিজ দেশ, কালচার এবং রিলিজিয়াস ব্যাকগ্রাউন্ডের ভিত্তিতে মাইন্ডকে নানান ধরনের গল্প শোনানো হয়। এবং প্রতিটা কালচারের মাইন্ডগুলারে বলা হয় যে তাদের গল্পটাই গ্র্যান্ড এবং হলি, বাকিগুলা অসত্য এবং ভুয়া। এই গল্পগুলা শুইনা হিউম্যান মাইন্ডগুলা ব্রহ্মাণ্ডের জন্ম-মৃত্যু খেলার এই অথৈ সাগরে একটা থৈ খুইজা পায়। মাইন্ডের একটা টিপিক্যাল কিন্তু শক্তিশালী টেনডেন্সি হইল সে সবকিছুর মধ্যে ‘কজ এন্ড ইফেক্ট’ খুইজা বেড়ায়। কজ এন্ড ইফেক্ট জিনিসটা রিয়্যালিটিতে যা কিছু ঘটে সবকিছুর একটা আপাত ব্যাখ্যা দাঁড় করাইতে পারে। যেমন, আপনি আমার গালে একটা থাপ্পড় বসাইলে আমি গালে ব্যাথা পাবো এবং মেন্টালি রাগান্বিত অনুভব করব। এইখানে আমার গালে ব্যথা পাওয়া এবং রাগান্বিত হওয়াটা হইল ইফেক্ট আর আপনার থাপ্পড়টা হইল তার কজ তথা কারণ। এইভাবে সবকিছুর সাথে সবকিছুর কারণ এবং ফলাফলের একটা লিংক তৈরি কইরা মাইন্ড নানান ধরনের গল্প তৈরি করে। এইসব গল্প ছাড়া মাইন্ড রিয়্যালিটিতে তার নিজের ব্যালেন্স ধইরা রাইখা সারভাইব করতে পারে না। কিন্তু মজার বিষয় হইল, রিয়্যালিটিতে খুইজা পাওয়া সকল ধরনের ‘কজ এন্ড ইফেক্ট’ এর ব্যাখ্যা রিয়েলিটিরই শো করা একটা ভেল্কিবাজি। এভারেজ মাইন্ড এই ভেল্কিবাজিতে ভুইলা গিয়া গল্পের যে নেগেটিভ সাইডে আসক্ত হইয়া পড়ে সেইটা হইল ন্যারেটিভ ফ্যালাসি। সমাজে কেউ যখন হঠাৎ বিখ্যাত হইয়া যায় কিংবা সোসাইটির দৃষ্টিতে সফলতার চুড়ায় পৌঁছাইয়া যায়, তখন তার কাছে যখন মিডিয়া সাক্ষাতকার নিতে যায়, প্রথমেই তারে কীভাবে সে আজকে এই পর্যায়ে আইসা পৌঁছাইল এই ব্যাপারে প্রশ্ন করা শুরু করে। অর্থাৎ তার এই সফলতার গল্পটা শুনতে চাওয়া হয়। এবং ওই সফল ব্যক্তিও একটা গল্প বলা শুরু করে যেই গল্পটা তার ইনটেনশনালি বানানো ভুয়া গল্প হইতে পারে আবার রিয়্যালিটির ভেল্কিবাজির ফলে সে নিজে এইটারে সত্য গল্প মনে কইরাও বলতে পারে। যেই গল্প পরে আপামর জনগণের জন্য একটা মোটিভেশন হইয়া দাঁড়ায়। এইটাই ন্যারেটিভ ফ্যালাসি, তবে ব্যক্তির সফলতার গল্পই না, অন্যান্য আদর্শিক গল্পগুলাও ন্যারেটিভ ফ্যালাসির মধ্যে পড়ে। এইটার উপর ভিত্তি কইরাই গড়ে উঠছে পৃথিবীর মোটিভেশনাল বিজনেস। আমাদের গল্পপ্রেমী হিউম্যান মাইন্ড এই পুরা ব্যাপারটাতে যেই জিনিসটা সম্পূর্ণ ওভারলুক কইরা যায় সেইটা হইল, রিয়্যালিটিতে যত শৃঙ্খলা আছে, ঠিক তার চাইতে বেশি আছে বিশৃঙ্খলা তথা র্যানডমন্যাস। মানুষের জীবনও মুভ করে র্যানডমন্যাস, লাক আর সিচুয়েশনের আনলিমিটেড ভ্যারিয়েবলের মধ্য দিয়া যেইটারে নিয়া যত নিখুঁতভাবেই গল্প তৈরি করা হোক না কেন সেইখানে কোন না কোন (আসলে অসংখ্য) মিসিং লিংক থাইকাই যাবে সবসময়।