মনের ঘরে (৫)

১৬
ইনডিভিজুয়ালি প্রতিটা হিউম্যান মাইন্ড অনেকক্ষেত্রে এগ্রেসিভ এবং ভায়োলেন্ট হইলেও কালেক্টিভলি সে খুবই সাবমিসিভ তথা সহজেই বশ্য। কালেক্টিভলি হিউম্যান মাইন্ড নিজেরে সইপা দেয়ার জন্য একটা ফাদার ফিগার তৈরি করে কিংবা ফাদার নিজেই আইসা তাদের কাছে হাজির হয়। ইনডিভিজুয়াল এগ্রেশনের ক্ষেত্রে মাইন্ডের স্বভাব উল্লেখযোগ্য। মাইন্ড তার এগ্রেশন সকল সময়ে সকল জায়গায় সমানভাবে প্রকাশ করে না। মাইন্ড শুধু তার সাথেই এগ্রেসিভ এবং ভায়োলেন্ট হইয়া উঠে যে তার থেকে শারীরিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিকভাবে দুর্বল। এইটার চর্চা মাইন্ড শিশু অবস্থা থাইকাই শুরু করে। বাচ্চারা খেলা করার সময় সবল বাচ্চা দুর্বল বাচ্চার উপর ভায়োলেন্ট হইয়া উঠে। পরিবার, কর্মক্ষেত্র, বন্ধুমহল থেকে শুরু করে অন্যসব পাবলিক রিলেশনে মাইন্ড বিভিন্ন ফর্মে প্রতিনিয়ত এগ্রেশন শো কইরা যায়। সোশ্যাল ক্লাশিফিকেশন মাইন্ডের এগ্রেশন শো করার ক্ষেত্রগুলারে ডিসটিংক্ট কইরা দেয়। যেমন, একজন ভদ্রলোক তার সহকর্মী কিংবা বন্ধুর সাথে রাস্তার পাশে দাঁড়াইয়া বেশকিছুক্ষণ মিষ্টি এবং মোলায়েম গলায় কথা বলার পর সে যখন কোথাও যাওয়ার জন্য একটা রিকশা ডাকে, তখন সেই ডাকে অটোম্যাটিক্যালি তার গলায় রিকশাওয়ালার প্রতি একটা এগ্রেশনের সুর প্রকাশিত হয়। কারণ তার মাইন্ড সোশ্যাল ক্লাশিফিকেশনের সাথে ধইরাই নেয় যে তার থেকে দুর্বল যে কারও সাথে এগ্রেশন শো করা তার অধিকার। উল্টোদিকে, ইনডিভিজুয়ালি এগ্রেসিভ এই হিউম্যান মাইন্ডগুলাই আবার অত্যন্ত সাবমিসিভ, দুর্বল, ভঙ্গুর এবং ভীত হয়। রাষ্ট্রীয়, বৈশ্বিক, সামাজিক এবং মূল লাইফ সেন্সের ক্ষেত্রে হিউম্যান মাইন্ড সবসময় ফাদার ফিগার খুঁজে বেড়ায়। সে চায় কেউ একজন সবসময় মাথার উপর থাকুক যে তাকে পরিচালনা করবে, নিয়ন্ত্রন করবে এবং শাসন করবে। এতে সে নিজেরে দায়িত্বহীন এবং নিরাপদ মনে করে। শাসিত এবং শোষিত হওয়ার একটা ক্ষুধা মাইন্ডের মধ্যে সবসময় লুকায়িত থাকে। এর উপর ভিত্তি কইরাই সকল জাগতিক এবং আধ্যাত্মিক সিস্টেমগুলা দাঁড়ায়, কাঠামোগুলা দাঁড়ায়। হিউম্যান মাইন্ড নিজেকে এতটাই আনস্টেবল হিসেবে ধইরা নেয় যে সে নিজের পকেটের টাকা খরচ কইরা নিজেরে ঠিক রাখার লাইগা ফাদার ফিগারের তত্ত্বাবধানে রাষ্ট্রীয় পুলিশিং এর ব্যবস্থা কইরা রাখে। মাইন্ডের ভেতরগত আদর্শিক এবং মরাল পুলিশিংও এই একই প্রক্রিয়ায় ঘটে।

১৭
সময় তথা কালের সাথে মাইন্ডের সম্পর্ক অত্যন্ত শক্তিশালী। সময়ের অনন্ত স্রোতকে মাইন্ড প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করে – অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ। এই তিনটার মধ্যে শুধু বর্তমানটা রিয়েল হইলেও মাইন্ড নিজেরে সবসময় অতীত এবং ভবিষ্যতে নিয়া গিয়া ব্যস্ত রাখতে আরামবোধ করে (মোস্টলি সাফার করে)। সোশ্যাল ইনফুলেয়ন্সেই হোক আর সারভাইবাল ইন্সটিংক্ট হিসেবেই হোক মাইন্ডের কাছে কখনই বর্তমান মুহূর্তটারে সম্পূর্ণ মনে হয় না। খুবই অল্প কিছু এক্সেপশনাল মুহূর্ত বাদে মাইন্ড নিজেরে সবসময় বর্তমানে অসুখী হিসেবে ধইরা নেয় এবং আশায় থাকে যে ভবিষ্যতে এক সময় সে সুখ অনুভব করবে কিংবা সুখী হইয়া উঠবে। এবং ইন্টারেস্টিংলি, এই বর্তমান “অসুখী” মুহূর্তের ঘটনাগুলা যখন সে বেশ কয়েক বছর পরে গিয়া মনে করবে, তখন তার কাছে আবার এইগুলাই অনেক মধুর বইলা ঠেকবে। পুরোপুরি মধুর না হইলেও তখনকার ওই মুহূর্তটারে এখনকার চাইতে বেটার মনে হবে। এইটারে আমরা বলি নস্টালজিয়া। নস্টালজিয়াও আনস্যাটিসফাইড মাইন্ডের একটা কোপিং ম্যাকানিজম। অপরদিকে, ভবিষ্যৎ হইল একটা বাস্তবিক অন্ধকার জায়গা যেইখানে আলো ফেলতে হইলে বর্তমানকে অতিক্রম না করে যাওয়া কিছুতেই সম্ভব না, অথচ সেইটা নিয়া উৎকণ্ঠায় ভোগা হইল মাইন্ডের প্রধানতম কাজ। অতীত এবং ভবিষ্যতের এই সাইকেলে ঘুরপাক খাইতে খাইতে অসম্পূর্ণ বর্তমান নিয়া হিউম্যান মাইন্ড তার একটা লাইফটাইম পার কইরা দিতে পারে।

১৮
মাইন্ড কেন বর্তমানে থাকতে চায় না? সারভাইবালের দৃষ্টিকোণ থাইকা দেখলে সারভাইবালই এইটার প্রধান কারণ। মনুষ্য ইতিহাসে হান্টার গ্যাদারারদের টাইম কিংবা তারও আগে থেকে মাইন্ড তার ধারণকৃত শরীরকে বাঁচাইয়া রাখতে অতীত থেকে শিক্ষা নিতে হইছে এবং ভবিষ্যৎ নিয়া এক ধরনের পরিকল্পনা করে রাখতে হইছে। যেমন, শিকার ধরার সময় কোন এক জায়গায় বাঘের কবলে পড়লে, সেইখান থেকে বাঁইচা ফিরা আসতে পারলে, পরবর্তীতে শিকারে গেলে সে নিজে এবং তার গোত্র বাঘের ব্যাপারে সতর্ক হইয়া উঠবে। অন্যদিকে, এই বছর ফসল ভালো হইলেও পরের বছর খরা হইতে পারে এইরকম আশংকা কইরা খাবার মজুত কইরা রাখাটা ভবিষ্যৎ চিন্তা নির্ভর হিউম্যান মাইন্ডের সারভাইবালের ব্যাপার। কিন্তু এই সারভারবাইবালের পার্ট আসলে হিউম্যান মাইন্ডরে জাস্ট কনসার্ণ করা ছাড়া অন্যভাবে অকোপাই কইরা রাখার কথা না। কিন্তু মাইন্ড সারাক্ষণই অতীত আর ভবিষ্যৎ নিয়া পইড়া থাকে। এইটা হওয়ার একমাত্র কারণ হইল মাইন্ডের বোরডেম (আগেই উল্লেখ করা হইছে) না নেওয়ার মারাত্মক টেনডেন্সি। মাইন্ড প্রেজেন্ট মোমেন্ট-এ এটেনশন দেওয়াটারে অত্যন্ত বোরিং হিসেবে আবিষ্কার করে। বর্তমান মুহূর্তে পূর্ণ মনসংযোগ দিতে গেলে মাইন্ডকে একটা টেনশনলেস অবস্থায় অবস্থান করতে হয় যেইটা আলটিমেটলি খুবই বেনিফিশিয়াল হইলেও কমপালসিভ মাইন্ডের জন্য খুবই ফ্রাইটেনিং। কারণ মাইন্ড যখন সম্পূর্ণ টেনশনলেস হয় তখন তার নিজের কাছে নিজেরে মৃত মনে হয়। তবে মাইন্ড ইভ্যুলুশনের এক পর্যায়ে আইসা মাইন্ড বুঝতে পারে যে তাকে পুরোপুরি সেইন হইতে হইলে বর্তমানেই থাকতে হবে।

১৯
বৃহত্তর শক্তির কাছে নিজের সাবমিশনের বিপরীতে ইনডিভিজুয়ালের এগ্রেশনের পাশপাশি এভারেজ হিউম্যান মাইন্ডে বাস করে ইনডিভিজুয়ালের আইডেন্টিটি ক্রাইসিস। নিজের কম্যুনিটি, গোত্র এবং ইন্টার-রিলিজিয়াস সোসাইটির মধ্যে মানুষ তার নিজের আইডেন্টিটি প্রতিষ্ঠা এবং সর্বক্ষণ সেইটার প্রকাশনার জন্য তন্ময় হইয়া থাকে। সেইক্ষেত্রে মাইন্ড নিজে যা না তা দিয়া অন্যরে বুঝাইয়াও আইডেন্টিটি প্রকাশ করে। এইটা না করলে মাইন্ড নিজে অস্তিত্ব সংকটে পইড়া যাওয়ার মত অবস্থায় চইলা যায়। কারও নিজের একান্ত ব্যক্তিগত উল্লেখ করার মত কোন আইডেন্টিটি না থাকেলও সে তার মামা, চাচা, খালু, আত্মীয়স্বজন, পাড়া, গ্রাম এবং জাতীয় পর্যায়ে কারও না কারও আইডেন্টিটি দিয়ে ক্ষেত্র বিশেষে নিজের আইডেন্টিটির ব্যাকাপ দেয়। জাতীয়তাবাদ থাইকা শুরু কইরা কিংবা, উল্টা কইরা, নিজের মাইক্রো লেভেল থাইকা শুরু কইরা জাতীয়তাবাদ পর্যন্ত যত আইডেন্টিটি নিয়া মানুষ গর্ব এবং আইডেন্টিফাইড অনুভব করে সেইটা হইল পুরোপুরি মাইন্ডের সেলফ এওয়ারন্যাস না থাকার ফল। অপরদিকে এভারেজ মাইন্ড ছাড়া যারা সোসাইটিতে একটা উচ্চ অবস্থানে নিজেরে নিয়া যাইতে সক্ষম হয় কিংবা পরিস্থিতি তারে সেই অবস্থানে নিয়া যায় তারা আবার ঠিক উল্টাভাবে নিজের আইডেন্টিটিরে নিয়া সন্দেহের মধ্যে পইড়া যায়। এইটারে বলা হয় ইম্পোস্টার সিনড্রোম। সমাজের উচু শ্রেণির অনেকেই, বিশেষ কইরা যারা পাবলিক ফিগার তারা প্রায়ই এই সিনড্রোমে ভুইগা থাকে। তাদের মাইন্ড অনুভব করে যে তারা যে আইডেন্টিটিটা ধারণ কইরা আছে এইটা স্টেবল না, অব্জেকটিভ না। এবং এইক্ষেত্রে মাইন্ড এক সময় ফিয়ারফুল হইয়া পড়ে এই ভাইবা যে তার আইডেন্টিটিতে বুঝি যেকোন সময়ই ধস নাইমা আসবে। তার আরও মনে হয় এই আইডেন্টিটা ক্যারি করার জন্য যে পরিমাণ ট্যালেন্ট এবং যোগ্যতা তার থাকা দরকার সেইটা বোধহয় তার নাই। তার নিজেরে নিজের কাছে জোচ্চোর মনে হয়। হলিউডের বিখ্যাত অভিনেত্রী কেট উইন্সলেট ২০০৯ সালে দ্যা মিরর নিউজপেপারে দেয়া এক ইন্টার্ভিউতে বলছিল, “বছরে বছরে আমার ঝুঁকি অনেক বেড়ে গেছে। মাঝে মাঝে ঘুম থেকে উঠার পর শুটিং-এ যাওয়ার আগে মনে হয় আমি বোধহয় আজকে অভিনয়টা করতে পারব না। মনে হয় আমি একজন ফ্রড। মনে হয় যে আমি অভিনয়ের কিছুই পারি না, আর এটা মানুষ বুঝে ফেলবে।” আরেক অভিনেত্রী এমা ওয়াটসন ২০১৩ সালে রুকি ম্যাগাজিনে এক সাক্ষাতকারে বলছিল, “আমার মনে হয় যেকোন সময় কেউ একজন ধরে ফেলবে যে আমি একজন ফ্রড এবং বুঝে ফেলবে যে আমি যা কিছু অর্জন করছি তা আসলে আমি ডিজার্ব করি না।” এরা ছাড়াও টম হ্যাঙ্কসের মত অভিনেতাসহ আরও অনেকেরই মাইন্ড এইরকম কন্ডিশন সাফার করে প্রতিনিয়ত। এইটার উৎসও মাইন্ডের ল্যাক অব সেলফ এওয়ারনেস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *