মনের ঘরে (৪)

১২

ফোকাস এবং এটেনশন হইল হিউম্যান মাইন্ডের অসংখ্য ফ্র্যাজাইল তথা ভঙ্গুর পার্টের বিপরীতে সবচাইতে পাওয়ারফুল পার্ট। ধরণীর সকল মহৎ মহৎ সৃষ্টি এবং পরিবর্তনের আবির্ভাব হইছে মাইন্ডের ফোকাস আর এটেনশনের শক্তিতেই। কিন্তু অন্যান্য সেলফ কন্ট্রাডিকশনের মত এটা কন্ট্রাডিক্টলি (কিছু ক্ষেত্রে প্যারাডক্সিক্যালি) হিউম্যান মাইন্ডের দুর্বলতম পার্টও বটে। হিউম্যান মাইন্ডের ফোকাস এবং এটেনশনের ডিরেকশন খুব সহজেই প্রভাবিত করা যায়। এটা ইনডিভিজুয়াল এবং কালেক্টিভ উভয় ক্ষেত্রেই করা যায়, মাইক্রো এবং ম্যাক্রো লেভেলে। ছোট ছোট ক্ষেত্রে কিংবা মাইক্রো লেভেলে মাইন্ডের যে ফোকাস শিফটিং হইয়া থাকে সেইটা সব মাইন্ডের ক্ষেত্রেই সমান সত্য। যেমন, আপনি একজনের সাথে একটা বিষয় নিয়া খুব গভীর মনে কথা বলতেছেন, তখন শ্রোতার কোন অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন কিংবা আপনার মোবাইলে বেজে উঠা একটা কল আপনার মনের ফোকাস সম্পূর্ণ অন্য দিকে ঘুরাইয়া দিতে পারে। এবং ওইটা যদি কোন ডিটেইলড এবং সেনসেটিভ (মাইন্ডের দৃষ্টিতে) কিছু হয়, তাহলে আপনি যে বিষয় নিয়ে কথা বলতেছিলেন সেইটা প্রায় ভুইলাই যাইবেন। ম্যাক্রো লেভেলে যে শিফটিং ঘটে সেইটা সিগনিফিক্যান্ট এবং অনেক ক্ষেত্রেই স্ট্রেইঞ্জ। যেমন ধরেন, সড়ক দুর্ঘটনায় দেশে প্রতিদিন গড়ে মানুষ মারা যায় ৩০ জন। আজকে পত্রিকা খুলে আপনি দেখলেন যে পত্রিকার কোন এক কোণায় একটা নিউজে লেখা যে সড়ক দুর্ঘটনায় সারাদেশে গতকাল মারা গেছে ৫০ জন। নরমালের চাইতে ২০ জন বেশি। আপনি আনমনে কিংবা একটু সিরিয়াস হইয়া খবরটা পইড়া বারান্দা থাইকা টিভি ঘরে গেলেন। গিয়া দেখলেন একটা শুকনা কুয়ায় বেশ কিছু জটিলতার সহিত ফুটফুটে একটা বাচ্চা পইড়া গেছে, যারে উঠানোর জন্য উদ্ধারকর্মীর টিম কাজ করতেছে এবং সেইটা টিভিতে লাইভ দেখাইতেছে। আপনার চোখ আটকাইয়া গেল। আপনে টিভির সামনে বইসা পড়লেন। আর উঠতে পারতেছেন না। আপনার পরিবারের অন্য সদস্যরাও আপনার সাথে আইসা দেখা শুরু করল টিভি। এইভাবে অনেকক্ষন গেল, একটা উৎকণ্ঠা শুরু হইয়া গেছে আপনার মনে। আপনার পরিবারের মত আরও অনেক পরিবার তথা সারাদেশ এই মুহূর্তে টিভির সামনে দাঁড়াইয়া আগ্রহ আর উৎকণ্ঠা নিয়া এইটা দেখতেছে। শেষ পর্যন্ত বাচ্চাটারে বাঁচানো যাইব তো! এইভাবে বেশ কয়েক ঘণ্টা যাওয়ার পর বাচ্চাটা উদ্ধার হইল। আহ! এতক্ষণের উত্তেজনার পর আপনি এখন একটু শান্তি পাইলেন। আপনার মন আবেগি হইয়া উঠল। কিন্তু মনে কইরা দেখেন, আপনি যে পত্রিকায় ৫০ জন মানুষের সড়ক দুর্ঘটনার খবর পড়লেন সেইটা আপনাকে এতটা বিচলিত এবং উৎকণ্ঠিত করতে পারে নাই। বাচ্চার ঘটনাটা আপনার ফোকাস টাইনা নিয়া ইমোশনরে পুরাপুরি ড্রাইভ করতে পারছে, যেইখানে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫০ জন মারা যাওয়ার সংখ্যাটা আপনার মাইন্ডের কাছে জাস্ট একটা পরিসংখ্যান।

১৩

বিশেষ বিশেষ ইনটেন্স মুহূর্তেই কি হিউম্যান মাইন্ড শুধু ইমশোনালি ড্রিভেন হয় আর অন্য মুহূর্তগুলায় র‍্যাশনাল থাকে? না, অনেকটাই না। মাইন্ড অল্পকিছু সময় ছাড়া বেশিরভাগ সময় অটোপাইলট এবং অযৌক্তিক বিহ্যাভিয়ার কইরা থাকে। আর সারাক্ষণই মাইন্ড কোন না কোন ইমোশনের মধ্যে থাকেই। এমনিতে সাধারণত ইনটেন্স মুহূর্তগুলারেই আমরা ইমোশন বইলা রেকগনাইজ করি, আর অন্য মুহূর্তগুলারে ভাইবা নেই ফ্ল্যাট। আসলে তা না। অ্যামেরিকান সাইকোলজিস্ট পল একম্যান মানুষের পাঁচটা ব্যাসিক ইউনিভার্সাল ইমশোনের কথা বইলা থাকেন – ফিয়ার, এঙ্গার, এঞ্জয়মেন্ট, ডিজগাস্ট এবং স্যাডনেস। প্ল্যানেটের সকল হিউম্যান মাইন্ডই এই পাঁচটা ইমোশনের মধ্যে থাকে, পার্থক্য হয় মোমেন্ট টু মোমেন্ট। এই পাঁচটা ছাড়াও আরও অনেক সূক্ষ্ম আনডিফাইনড ইমোশন আছে যা হিউম্যান মাইন্ডকে প্রতি মুহূর্তে অকোপাই কইরা রাখে। জগতের সকল এভারেজ মাইন্ড ভাবে যে জগতের সব এক্সটারনাল ঘটনা দ্বারাই আমাদের ইমশোন নিয়ন্ত্রিত হয়। অর্থাৎ খারাপ কিছু ঘটলে আমাকে স্যাড ফিল করতেই হবে কিংবা রাগের কোন কথা শুনলে আমাকে রাগ প্রদর্শন করতেই হবে। এইটা ভাইবা তারা সবসময় অটোপাইলট মুডে থাকে, যা আসলে মাইন্ডে ফোকাস শিফটিং ঘটার ক্ষেত্রে সহায়ক, একমাত্র সহায়ক। হিউম্যান মাইন্ডের যদি ফ্রি উইল বলে কিছু থেকে থাকে সেইটা শুধুমাত্র ইমোশনাল রেসপন্স চুজ করতে পারাই হইতে পারে। কিন্তু এভারেজ মাইন্ড ফ্রি উইলের এই দায়িত্ব না নিয়া নিজেরে ভিকটিমহুড মুডে রাখতেই বরাবর কমফোর্ট ফিল করে।

১৪

সেলফিসনেস তথা স্বার্থপরতা হিউম্যান মাইন্ডের একটা কোর ফিচার। প্রতিটা হিউম্যান মাইন্ড স্বার্থপর। কিন্তু এইটারে সে সহজে এডমিট করতে চায় না। এবং ব্যাপারটারে সে নেগেটিভলি দেখে। মাইন্ড তার এটাচমেন্ট, ডিটাচমেন্ট এবং এপাথিকে নিজের কালচার এবং ট্র্যাডিশনের উপর ভিত্তি কইরা সেগুলোর উপর কয়েক ধরনের লেবেল লাগাইয়া সুবিধা অনুযায়ী নেগেটিভ এবং পজিটিভ হিসেবে জাজ কইরা থাকে। যেমন, ভারতীয় উপমহাদেশীয় কালচারে সন্তানের সাথে বাবা-মায়ের এটাচমেন্ট বেশি থাকে এবং এইখানে সন্তান তার বাবা-মায়ের সাথে সারাজীবন ধইরা একসাথে থাকবে, যেইখানে পুত্রবধূ তার শশুর-শাশুড়িকে আজীবন সেবা কইরা যাবে এইরকম মনে করা হয়। এর ব্যত্যয় ঘটলে এইখানে স্বার্থপরতার প্রশ্ন উইঠা আসে। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্বে এই একই ব্যপারে মাইন্ডের জাজমেন্টাল সেটআপ সম্পূর্ণ ভিন্ন। এইরকম প্রতিটা সম্পর্ক, প্রতিটা কর্মকাণ্ড – কালচার, সময় এবং জিওগ্রাফিক্যাল কন্ডিশন অনুযায়ী মরালী জাজড হইয়া থাকে যেইটার ইউনিভার্সাল কোন অব্জেকটিভিটি নাই। তবে আপাত কিছু ইউনিভার্সাল ব্যপার হিউম্যান মাইন্ড নিঃস্বার্থ বইলা কনসিডার কইরা থাকে, তার মধ্যে একটা হইল সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসা। মনে করা হইয়া থাকে যে এই ভালোবাসায় কোন স্বার্থ নাই। কিন্তু ব্যাপারটারে হিউম্যান মাইন্ড সম্পূর্ণ ওভারলুক কইরা যায়। মা তার সন্তানরে জন্ম দেয় সম্পূর্ণ তার নিজের স্বার্থের জন্যই। নিজের মাতৃত্ববোধের স্বাদ মেটানোর জন্য। নিজের শরীর থেকে অন্য একটা শরীর বের হওয়ার ব্যাপার থাকার কারণে সন্তানের প্রতি মায়ের সাইকোলজিক্যাল এটাচমেন্ট হয় অন্য সকল সম্পর্কের থেকে ইনটেন্স। এইরকম ভাবে মানুষের সাথে মানুষের নেটওয়ার্কিং, গ্লোবালইজেশন, প্রকৃতির প্রতি মানুষের যত্ন (মাইন্ডের লেটেস্ট রিয়েলাইজেশন) এবং মানবতাবাদ এই সবই স্বার্থপরতার খুঁটিতে ভর কইরা দাঁড়ায়া আছে এবং থাকবে। এইটার উপর নির্ভর করে মাইন্ডের সারভাইবাল।

১৫

মানুষের মধ্যে কি কোন ইনক্লুসিভনেস নাই? আছে এবং এইটা স্বার্থপরতার সাথে সাংঘর্ষিক না। বরং এইখানে মাইন্ডের কন্ট্রাডিকশনটা হইল তার নিজের সেলফিসনেসরে এডমিট না করা, যেইখানে মাইন্ড ফিয়ারফুল হইয়া থাকে এই ভাইবা যে এইটা এডমিট করলে তার মূল হলিস্টিক পার্টটা ধ্বংস হইয়া যাবে। তাই সে এইখানে আইসা ফুল ডিনায়াল মুডে থাকে। অপরদিকে, মাইন্ডের মধ্যে যে ইনক্লুসিভনেস ব্যাপারটা আছে তা অনেকক্ষেত্রেই লিমিটেড। তবে এইটা আছে। লিমিটেড হওয়ার কারণে মানুষ নিজের ট্রাইব তথা গোত্র, জাতি, বংশ, পরিবার এবং সম্পর্কের দূরত্ব অনুযায়ী ইনক্লুসিভ হইতে পারে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মানুষের ইনক্লুসিভনেস গ্লোবাল পর্যায়েও পৌছায় (যদিও এইখানে সেলফিসনেসের অংশটা মেজর)। মানুষের মধ্যে ইনক্লুসিভনেস আসে কমপ্যাশন তথা অনুকম্পা থাইকা। এইটা সেলফিসনেসের বিপরীত। মানুষ যখন কনশাসলি (আনকনশাসলিও হইতে পারে) অনুভব করতে পারে, যে, সে ছাড়া বাকি যে মানুষগুলা আছে কিংবা অন্যান্য বিয়িং আছে সেইগুলা এবং সে নিজে, অর্থাৎ সবকিছুই, একটা কসমিক ইন্টারপ্লে-এর অংশ এবং বুঝতে পারে যে, আমি, তুমি আর সে – প্রাণ আর অপ্রাণ, সবকিছু মিলাইয়া  ব্রহ্মাণ্ডে একটা নান্দনিক একক ছন্দ তৈরি হইয়া আছে, তখন সে সবকিছুর প্রতি কমপ্যাশনেট তথা দরদী হইয়া উঠে। এই দরদ ইনডিভিজুয়াল লেভেল থেকে ন্যাশনাল, ন্যাশনাল থেকে গ্লোবাল, গ্লোবাল থেকে কসমিক লেভেল পর্যন্ত ছড়াইয়া পড়তে পারে।

Comments

comments

1,228 views

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *