মনের ঘরে (২)


সেলফ কন্ট্রাডিকশন ছাড়া হিউম্যান মাইন্ডের সবচাইতে বড় যে পিকুলিয়ার দিক আছে সেইটা হইল ডিনায়াল। খুবই নগণ্য একটা সংখ্যা বাদে বেশিরভাগ মানুষ বাঁচে ডিনায়ালে। ডিনায়াল হইল চোখের সামনে দেখা ফ্যাক্টরে অস্বীকার করা, অন্যের কাছে এবং নিজের কাছে। মানুষ অন্যের কাছে যতটুকু না ডিনায়াল শো করে তার থেকে বেশি করে নিজের কাছে। অলমোস্ট নিরানব্বই ভাগ ‘সত্য’ কিংবা ফ্যাক্ট থেকে মানুষ জীবনভর তার চোখ ফিরাইয়া রাখে, যেন সে কিছুই দেখতেছে না। এবং এইটা মানুষ বেশিরভাগ সময়ই করে অবচেতনে। এইটা এভারেজ মাইন্ডের একটা ডিফেন্স ম্যাকানিজম। যতক্ষণ পর্যন্ত কোন মাইন্ড পুরোপুরি সেলফ এওয়্যার না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত ডিনায়াল ছাড়া তার বাঁচা প্রায় অসম্ভব।


মানুষ আপাতভঙ্গিতে দুঃখ-কষ্টরে এড়াইয়া চলতে চাইলেও এবং শুধু দুঃখ-কষ্ট থেকে নিজে এবং নিজের আশেপাশের মানুষরে বাঁচাইয়া রাখার জন্য পুরো জীবন উৎসর্গ কইরা দিলেও মানুষ আসলে দুঃখ-কষ্টরে মনের গভীর থেকে পছন্দ করে। তবে এইখানে ম্যাকানিজমটা হইল সে নিজের জন্য একটা মডারেট লেভেল পর্যন্ত দুঃখ চায়। অনেকক্ষেত্রেই মানুষ অন্যের কঠিন যন্ত্রণা এবং ব্যর্থতারে উপভোগ করে। এইটা উপভোগের একটা সোশ্যালি ভ্যালিড পন্থা হইল প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতায় সবসময় কেউ না কেউ পিছাইয়া পড়েই, এবং তার পিছাইয়া পড়ার কারণেই আরেকজন সামনে আগাইয়া যায়। সামনে আগাইয়া ব্যক্তি যখন আনন্দিত হয়, সে মূলত পিছাইয়া পড়া ব্যক্তির ব্যর্থতারেই উপভোগ করে।


হিউম্যান মাইন্ড ক্রাইসিস এবং টুইস্টে খুব আসক্ত। মাইন্ডের একটা শক্তিশালী ডিফল্ট মুড হইল সে বোরডেম নিতে চায় না। জীবনের কোন ঘটনা স্মুথলি অনেকদিন চললে সেইটাতে সে সহজেই বোরড হইয়া পড়ে। ক্রাইসিস আর টুইস্টের স্বাদ প্র্যাকটিক্যাল লাইফে কম পায় বলে মানুষ ফিকশন পড়ে এবং সিনেমা দেখে। নিজে সেদে টাকা খরচ করে, সময় খরচ করে মানুষ নিজেকে অন্যের গল্পে প্রবেশ করায় একটা টেনশন এবং টানাপড়েন অনুভব করার জন্য। হিউম্যান মাইন্ডের এই দিকটা রিয়্যালিটির অন্যান্য সবকিছুর সাথেই সামঞ্জস্যপূর্ণ। কারণ টানাপড়েন ছাড়া রিয়্যালিটির কোন ইনসিডেন্ট ক্রিয়েট হয় না। তবে হিউম্যান মাইন্ডের এই দিক সম্পর্কে বেশিরভাগ মাইন্ডই নিজে সচেতন না।


হিউম্যান মাইন্ডের সাইভাইবাল ম্যাকানিজমের একটা বড় অংশ দখল কইরা থাকে ফরগেটফুলনেস। মানুষ ভুলে যায়। অলমোস্ট সবকিছুই ভুলে যায়। মানুষের এই ভুলে যাওয়াটা বিচিত্র। ভুলে যাওয়া মানে এইখানে জাস্ট স্মৃতিভ্রষ্ট হওয়া না। এই ভুলে যাওয়ার সাথে ডিনায়াল জড়িত। একজন মানুষের সাথে যদি আজকে একটা ডিজাস্টার ঘটে এবং এই সেইম ডিজাস্টার যদি আবার এক বছর পর তার সামনে এসে হাজির হয় তাহলে সম্ভাবনা খুবই কম যে সে গত বছরের ডিজাস্টারের সবকিছু চিন্তা করে এক্ট করবে। এই ভুলে যাওয়া মানুষকে ট্র্যাজেডি মেনে নিতে এবং উপভোগ করতে সাহায্য করে। ভুলে যাওয়ার সাথে টাইমের একটা লিনিয়ার সেন্স জড়িত। তাই বলা যায়, ট্র্যাজেডি বলে আসলে কিছু নাই। শেক্সপিয়র বলছিলেন, ‘ট্র্যাজেডি ইজ অ্যা কমেডি মিসআন্ডারস্টুড’। আর উডি এলেন তার এক সিনেমায় বলছিলেন, ‘কমেডি ইজ ট্র্যাজেডি প্লাস টাইম।’ অর্থাৎ আমাদের মাইন্ড ফরগেটফুল, আজকের ট্র্যাজেডির কথা দশ বছর পরে মনে কইরা আমরা চাইলেও আজকের মত কষ্ট অনুভব করতে পারব না।

০৭-০৪-২০২০

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *