সুদূর ভবিষ্যৎ। একটা ডেডলি ভাইরাসের আক্রমণে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে গেছে। না, পুরোপুরি ধ্বংস অবশ্য হয় নাই। গোটা পৃথিবীতে মানুষ বেঁচে আছে দুই মিলিয়নেরও কম। কীভাবে এরা বেঁচে গেল সে ব্যাখ্যায় এখন না যাই। বেঁচে গেল আর কি। তবে বেঁচে গেলেও এরা হারিয়ে ফেলেছে একটা বড় ইন্দ্রিয়। দৃষ্টিশক্তি। অর্থাৎ এই দুই মিলিয়ন অথবা দুই মিলিয়নের কম কেহই চোখে দেখতে পায় না।
কিন্তু একটা ইন্দ্রিয়ের জন্য তো আর জীবনের স্রোত থেমে থাকে না। এই অন্ধরা কিংবা আমাদের ভবিষ্যৎ সন্তানেরা দৃষ্টিশক্তি ছাড়াই বেঁচে থাকা কিংবা সারভাইব করা কিংবা জীবনের স্রোতকে বহমান রাখা চালিয়ে গেছে যথেষ্ট আন্তরিকতার সাথে। থাকা, খাওয়া এবং যোগাযোগের জন্য তারা নতুন নতুন তবে প্রিমিটিভ সব পন্থা আবিষ্কার করেছে।
এভাবে কেটে গেছে কয়েক শতাব্দী। এক পর্যায়ে এসে মানুষ ভুলেই গেছে কিংবা মনে করতে চাইছে না কিংবা কনসেপচুয়ালাইজ করতে পারছে না যে আগেকার মানুষের ‘দৃষ্টিশক্তি’ বলে একটা শক্তি ছিল। এমনকি কেউ যদি এই ব্যাপারে কথা বলে তাহলে সেটাকে একটা জঘন্যতম পাপ হিসেবে দেখা হয়।
এর মধ্যে কীভাবে জানি কালো রঙের এক দাস (আমাদের সন্তানেরা হয়তো আবার আমাদের পূর্ব পুরুষদের মত দাস প্রথা চালু করবে) তাঁর দৃষ্টিশক্তি ফিরে পায় অথবা দৃষ্টিশক্তি নিয়েই সে জন্মায়, সে তাঁর এই শক্তির কথা বলতে থাকে। যারা শুনে তারা তওবা তওবা করে ঈশ্বরকে ডাকতে থাকে আর তাকে গালমন্দ করতে থাকে। শেষমেশ এই দাস এলাকা ছেড়ে পালায়।
অন্য কোন এক অঞ্চলে গিয়ে সে সাদা রঙের এক দৃষ্টিশক্তিহীন রমণীর দেখা পায়। তাকে সে তাঁর চোখে দেখার ব্যাপারটা বলে, তাঁর সাথে কিছুদিন থাকে, ঘুমায় এবং যৌনতায় লিপ্ত হয়। পরবর্তীতে গর্ভবতী হয়ে পড়া এই রমণীকে সে একটা লোকালয়ের পাশে রেখে চলে যায়।
লোকালয়ের নিঃসন্তান প্রধান এই রমণীকে বিয়ে করে। এরপর একদিন এই রমণী দুটি যমজ সন্তানের জন্ম দেয় যেখানে দু’জনেরই দৃষ্টিশক্তি আছে। দৃষ্টিশক্তিহীন পৃথিবীতে দৃষ্টি নিয়ে জন্ম নেওয়াটা নিসন্দেহে একটা বড় ধরণের অপরাধ। কালো রঙের দাস এবং তাঁর এই দুই সন্তানকে খুঁজে বের করে পুড়িয়ে মারার জন্য রাজ্যের রানী উঠে পড়ে লাগেন। এটা তাঁর নৈতিক দায়িত্ব।
–
এই গল্পটা নভেম্বর ০১, ২০১৯-এ রিলিজ হওয়া ‘সি’ নামক একটা অ্যামেরিকান সিরিজের প্রথম কয়েক এপিসোডের গল্প।
মানুষ দ্বারা সৃষ্ট কিংবা প্রাকৃতিকভাবে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে এই গল্প নিয়ে ইতোমধ্যে অসংখ্য মুভি, সিরিজ, বই লেখা হয়েছে। বর্তমান মানুষের আচরণগত প্যাটার্ন এর উপর ভিত্তি করে এই ধরণের গল্প লেখা হয়। হয়তো পৃথিবী এভাবেই ধ্বংস হবে কিংবা হবে না।
তবে যেটা এখানে ইন্টারেস্টিং ব্যাপার সেটা হল মানুষের মনের ধারনকৃত সংস্কার কিংবা কু-সংস্কার।
২০১৯ অবধি যদি আমরা দেখি, কালেক্টিভ হিউম্যান মাইন্ড সু অথবা কু কোন সংস্কারই এখনো ছাড়তে পারে নাই। এখনো যেখানে আলোর রাজত্ব সেখানে অন্ধকার বিধর্মী, যেখানে অন্ধকারের রাজত্ব সেখানে আলো বিধর্মী। এটা থেকে কি আমাদের কোন কালেই মুক্তি আছে? এখন পর্যন্ত কালেক্টিভলি এটা সম্ভব হয় নাই। তবে ইনডিভিজুয়াল কোন কোন মাইন্ডের পক্ষে এটা সম্ভব হতেও পারে।
এখানে দোষটা কার?
কারোই না। হিউম্যান মাইন্ড অথবা মাইন্ড বডি কোন বিলিফ ছাড়া কিছুতেই (অলমোস্ট – একটু ফাঁকা থাকার কথা) সারভাইব করতে পারে না। তাকে কিছু না কিছুকে খারাপ আর ভালো হিসেবে কনসিডার করেই চলতে হয়। অপোজিশন ছাড়া মাইন্ডের পক্ষে চলা প্রায় অসম্ভব।
এখন এই মাইন্ডকে কি টপকানো সম্ভব? বুদ্ধার মত কিছু ইনডিভিজুয়াল বলে যে সম্ভব। কিন্তু যেহেতু কালেক্টিভলি আমরা এটা দেখি না, সেহেতু তাঁদের এই কথা আমরা সহজে গ্রহণ করে নিতে রাজি না। হয়তো রাজি হওয়া উচিতও না।
কিন্তু এটা সত্য যে পৃথিবীর আনাচ-কানাচ ছাড়িয়ে আমরা এখন আউটার স্পেসে গিয়ে ব্রহ্মাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে অনেকটা (হয়ত কিছুটা) এগিয়ে গেলেও মাঝরাতে হঠাৎ কোন একটা চিন্তা কিংবা দুশ্চিন্তা মাথায় ভনভন করা শুরু করলে সেটাকে কীভাবে থামাতে হয় আমরা তা জানি না কিংবা চেষ্টা করেও সেটা পারি না। এর কারণ, আমাদের ভেতরে যে একটা ব্রহ্মাণ্ড আছে সেখানে আমাদের চলাফেরা খুবই কম।
আমাদের মাইন্ডের ভেতরে যে মেইজ আছে সেটার ভেতরে বেশিদূর আমরা দৌড়াতে পারি না এখনো। তাই এই মেইজের জটিলতাকে সিম্পলিফাই করার জন্য মাইন্ড নিজেই প্যারাডক্সিক্যালি একটা বিলিফ সিস্টেমে ঢুকে যায়। এতে সবকিছু একটু সহজ সহজ লাগে।
এখন যেহেতু আমরা সহজেই হার মানি না তাই হয়তো আমাদের ভবিষ্যৎ কল্পকাহিনী কিংবা আশা কিংবা নৈরাশা (মাইন্ডের জন্য) কিংবা প্রলয় অথবা মহাপ্রলয় পরবর্তী কিংবা পূর্ববর্তী যুদ্ধটা (হারমোনিয়াস যুদ্ধ হইতে পারে) ঘটতে পারে আমাদের কালেক্টিভ মাইন্ডের সাথে আমাদের কনসাশনেসের।
১৩-১১-২০১৯