লাভিং ভিনসেন্ট (২০১৭)

আমার জন্মেরও একশো বছর আগে পৃথিবীর অন্য প্রান্তে একজন লোক আপন মনে ছবি আঁকাবুকি করত। দুনিয়ার অন্য কিছুর দিকে তাঁর তেমন কোন আগ্রহ ছিল না। শুধু চক্ষু মেলিয়া সাধারণ চোখ যে সৌন্দর্য দেখতে পায় না, সেই সৌন্দর্যকে তুলি দিয়ে ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলার উপর তাঁর ব্যাপক আগ্রহ ছিল। তাঁর জন্ম হয়েছিল উচ্চ মধ্যভিত্ত পরিবারে। কিন্তু বয়সকালে আর্থিক অনটন তাঁকে ঘিরে ফেলেছিল চারিদিক থেকে। তবে অভাবের তাড়না তাঁর আঁকিবুঁকিতে তেমন ব্যাঘাত ঘটাতে পারেনি। একটানা আঁট বছরে সে এঁকেছিল প্রায় ২১০০ ছবি, এর মধ্যে ৮৬০ টাই ছিল তৈল চিত্র। এই আঁট বছরে শুধু একটা ছবিই মানুষ টাকা দিয়ে কিনেছিল। বাকিগুলোর মুল্য কেউ দেয়নি। শুধু টাকায় নয়, শৈল্পিক মূল্যটাও সমাজ দিতে অপরাগ ছিল। মূর্খ সমাজ। সমাজ বোধয় বরাবরই মূর্খ থাকে। এই মূর্খের পেটেই জন্ম নেয় কত শত অসীম আত্মা। এই মূর্খ সেটা বুঝতেও পারে না।

এই ছবি আঁকা লোকটাকে সমাজ পাগল বলে সাব্যস্ত করেছিল। পাগল ও অসুস্থ। শুধু কি তাই! লোকটা বড্ড দরিদ্রও বটে! এই দরিদ্র লোকটা কি সব এঁকে গেছে। তারা ভরা রাতের আকাশ, তারার আলোয় মিটিমিটি জ্বলা শহুরে বাড়িগুলো, উড়ন্ত কাকের তলে বিছানো গম ক্ষেত, বিধ্বস্ত মানুষের হতাশা, বোতল বন্ধী পানির স্থির জীবন, কঙ্কালের ঠোঁটে জলন্ত সিগারেট, চাষি মহিলার ক্ষেত খুঁড়ার দৃশ্য আরও কত কি! পাগল না হলে কেউ এইসব আঁকে!

দারিদ্রতার চাপেই হোক, কিংবা সৃষ্টিশীলতার চাপেই হোক, কিংবা মূর্খ সমাজের উপর অভিমান করেই হোক লোকটা ৩৭ বছর বয়সে নিজের পেটে নিজেই গুলি চালিয়েছিল। মেরে ফেলেছিল নিজেকে নিজেই। কেউ চিনল না কে সে, কি আঁকছে, কেন আঁকছে। কিন্তু মূর্খ সমাজ চলে গেলে ঠিকই চিনতে পারে। মরার পরে চিনে ফেলল তাঁকে, বুঝে ফেলল সে কি এঁকেছে, কেন এঁকেছে। তারপর সেই দরিদ্র মৃত ব্যক্তিটা হয়ে উঠল পশ্চিমা বিশ্বের সবচাইতে প্রভাবশালী এবং বিখ্যাত শিল্পী। ব্যক্তিটার নাম ভিনসেন্ট উইলিয়াম ভ্যান ঘগ।

তাঁর শিল্পকর্ম আর মৃত্যুকালীন সময়টা নিয়ে তৈরি হয়েছে অন্যরকম এনিমেশন ফিল্ম ‘লাভিং ভিনসেন্ট’। ছবিতে ব্যবহৃত ৬৫০০০ ফ্রেমের প্রতিটাই ক্যানভাসের তৈল চিত্র।

ভিনসেন্ট এর প্রতি ভালোবাসা গভীর থেকে গভীরতর করার ক্ষেত্রে মুভিটা খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছে। মেকিং অসাধারণ।

আইএমডিবি রেটিং ৭.৯। রটেনে ৮৪% ফ্রেশ।

Comments

comments

1,917 views

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *