সিরিজ ডার্ক (২০১৭-) – কম্পলিকেটেড টাইম থেরাপি

সময় মূল্যবান। অনেক মূল্যবান। এতই মূল্যবান যে আমাদেরকে স্কুলে থাকতেই ‘সময়ের মূল্য’ নামক লম্বা রচনা মুখস্থ কইরা পরীক্ষার খাতায় লেইখা বড় হইতে হয়। বড় হইয়াও আমরা টের পাই মুখস্থ করা ঐ রচনার কথাগুলো আসলে সত্যিই ছিল। সময়ের মূল্যটা আসলে মাপা হইয়া থাকে সময়ের অভাব বোধ থাইকা। আর সময়ের অভাব বোধ হইল পোস্টমডার্ন ওয়ার্ল্ডের মানুষের সবচাইতে তীব্রতর বোধ।

এখন প্রশ্ন হইল, সময়ের আবার ‘অভাব’ হয় ক্যামনে? সময় তো নির্দিষ্ট কোন পরিমাণে কমানো যায় না, বাড়ানোও যায় না, এবং সময় কোন ব্যক্তির কর্ম কিংবা অকর্মের ভিত্তিতেও বয়ে চলে না। তাহলে সময় “কম”, “বেশী”, কিংবা এর “অভাব” হয় কিভাবে?

উত্তর হইল কোন ভাবেই হয় না। ব্যাপারটা সময়ের না, ব্যাপারটা আমাদের সেন্স পারসেপশনের। অর্থাৎ সময়ের এই কম, বেশী বা অভাব বোধ হইল সিম্পলি আমাদের সাবজেকটিভ পারসেপশন।

Time বইলা আসলে কিছু নাই। যেইটা আছে সেইটা হইলো Eternity। আর Eternity-র কোন আগা, মাথা, শুরু, শেষ কিছুই নাই। তবে হিউম্যান মাইন্ড দিয়া আমরা একটা Linear Timeline Sense করি। আমাদের সেন্স করা টাইম হইলো একমুখী, যেইটা শুধু সামনের দিকে যায়। এতে আমাদের মনে হয়, একবার যা হইয়া যায় তা বোধয় আর রিপিট হয় না। এখন আমাদের এই Time Sense দিয়া দেখলেই দেখা যায় যে আমাদের Life Cycle, আমাদের কর্মকাণ্ড, আমাদের ডিজায়ার, এবং (dis)Satisfaction – পুরাটাই একটা Repetitive Pattern. এইটারে বলা যায় Samsara. এইটা একটা সার্কেল।

তবে আপনি যদি Eternity-র দৃষ্টি দিয়া দেখেন তাইলে দেখবেন Time বইলা কিছু নাই। Eternity-তে কোন কিছুই Grow করে না, কোন কিছু কোন দিকে যায় না, কোন দিক থাইকা আসেও না। তবে যত চিত্র-বিচিত্র, ঘটনা-দুর্ঘটনা দেখা যায় এইগুলা মিথ্যা না। এইগুলা হইলো, Eternity-র প্রতিটা Pixel এর নিজ নিজ জায়গা থাইকা জ্বলা আর নিভার কারবার, যা একটা ইল্যুশন তৈরি করে – যেমন কম্পিউটারের স্ক্রিনে যত Movement (চলচ্চিত্র) দেখি, সেইখানে আসলে কিছুই মুভ করে না, শুধু স্ক্রিনের প্রতিটা Pixel তাঁর নিজ নিজ জায়গা থাইকা বিভিন্ন রঙে জ্বলে আর নিভে।

সময় নিয়া এইরকম উদ্ভট এক্সপ্লেনেশন আমি এতক্ষণ ধরে কেন দিতেছি সেইটা নিশ্চয়ই আপনে ইতিমধ্যে বুইঝা ফেলছেন। গত ডিসেম্বরের ১ তারিখে মুক্তি পাওয়া নেটফ্লিক্সের অরিজিনাল সিরিজ “ডার্ক (২০১৭)” সময়ের নন-লিনিয়ার এক্সিসটেন্স নিয়াই ডিল করে।

সিরিজের প্রথম এপিসোডের শুরুটাই হয় সময় নিয়া বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের এই উক্তি দিয়া –

“…the distinction between past, present, and future is only a stubbornly persistent illusion.”

ঠিক তারপরেই সিরিজের ভয়েস ওভার ন্যারেটিভ ভরাট গলায় বইলা উঠে –

“আমাদের মনে হয়, সময় একটা লিনিয়ার প্রবাহ। মনে হয়, সময় অন্তহীন ভাবে খালি সামনের দিকে আগাইয়া যাইতে থাকে, যেইখানে সে ধাবিত হয় অসীমতার গর্ভে।

কিন্তু সময়ের অতীত, বর্তমান আর ভবিষ্যতের মধ্যকার যে পার্থক্যটা আমরা দেখি তা কেবলই একটা ভ্রম। গতকাল, আজ, এবং আগামীকাল এইগুলা আসলে সময়ের ধারাবাহিকতা না, বরং এইগুলা একটা নেভার এন্ডিং সার্কেলে কানেকটেড। অস্তিত্বে যা কিছু আছে সবকিছুই কানেকটেড।”

সিরিজে যখন আপনে পুরাপুরি ডুইবা যাইবেন, তখন আপনে সময়ের অতীত, বর্তমান, আর ভবিষ্যতের ভাগাভাগিটা ভুইলা যাইবেন, হারাইয়া যাইবেন অ-সময়ের অলিতে-গলিতে। খেই হারাইয়া গোত্তা খাইয়া চইলাও আসতে পারেন। সময় আর অসময়ের প্যাচের মধ্যে সিরিজের ক্যারেক্টারের ট্র্যাক ধইরা রাখতে আপনার যথেষ্ট বেগ পাইতে হইতে পারে।

সিরিজের গল্পটা অতীব জটিল। সিরিজটা অফিসিয়ালি সাইন্স ফিকশন থ্রিলারের জানরার মধ্যে পড়ে। এই গল্পটারে আপনি চাইলে সিম্পলি টাইম ট্র্যাভেল ক্যাটাগরিতেও ফেলতে পারেন। তবে টাইম ট্র্যাভেল নিয়া এযাবৎ কালে যত মুভি আর সিরিজ তৈরি হইছে এইটা নাথিং লাইক এনিথিং। গল্পে পাইবেন স্লো বারনিং থ্রিল, সেই থ্রিল আপাতভাবে উপভোগ্য হইলেও এইটা মূলত ফিলসফিক্যাল থ্রিল।

সিরিজের ‘সময়’ নিয়া এতসব প্যাচের দার্শনিক ক্যাচালরে ইগনোর কইরা যদি আপনে দেখতে চান, তাইলেও সিরিজের এটমোসফিয়ার আর কমপ্লেক্সিটি আপনারে বিনোদিত করতে সক্ষম। তবে এভারেজ ভিউয়ারের জন্যে সিরিজের গ্লুমি এবং টুইেস্টড টোন হয়তো খুব বেশী কনফিউজিং ঠেকতে পারে। গল্পে হরর উপাদান আছে যথেষ্ট পরিমাণে যা আপনার লোম খাড়া করাইয়া দিতে পারে। তবে টিপিক্যাল সিরিজের মত এইখানে জাম্পস্কেয়ার, কিংবা কাটাকটি-মারামারি নাই। পুরাটাই সাইকোলজিক্যাল।

সিরিজের ক্রিয়েটর হইলো বারান বো ওদার এবং জান্তজে ফ্রিজ। কান্ট্রি জার্মানি। এইটা নেটফ্লিক্সে প্রথম জার্মান সিরিজ। রিলিজ হওয়া প্রথম সিজনে এপিসোড মোট দশটা। শেষ করার পর পরবর্তী সিজন দেখার তিব্র আকাঙ্ক্ষা জাগে মনে।

ক্রিটিকদের কাছ থাইকা পজিটিভ রিভিও আসছে অনেক। অডিয়েন্সের দেয়া স্কোরও হাই। আইএমডিবিতে রেটিং ৮.৮। রটেন টমেটোতে ৮৬% ফ্রেশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *