দ্যা এইজ অব অ্যাংজাইটি

পরিপূর্ণ বাহ্যিক রূপে আমাদের এই জীবন দুটি অন্তহীন অন্ধকার পিণ্ডের মধ্যিখানে একটি আলোর ঝলকানি। প্রথম অন্ধকার জন্মপূর্ব এবং দ্বিতীয় অন্ধকার ভবলীলা সাঙ্গ করার পরবর্তীকাল। তবে এই দুই অন্ধকার রাত্রির মাঝখানের আলোর ঝলকানিটা কোন পরিষ্কার রোদেলা দিন নয়, বরং অস্থিরভাবে মেঘাচ্ছন্ন। সুখানুভূতিতে আমাদের ইন্দ্রিয়গুলো যতই সক্ষমতা অর্জন করে, ততই সেগুলো যন্ত্রণার কাছে অসহায় হয়ে পড়ে — সুখানুভূতির আগে হোক কিংবা পরে হোক, বেদনা বরাবরের মতই সর্বদা সঙ্গ দিয়ে যায় আমাদেরকে। এমতবস্থায়, আমাদের অস্তিত্বের মূলহীনতাকে কাটিয়ে উঠতে আমরা একটা বিশ্বাসে নিজেদেরকে অভ্যস্ত করে তুলেছি। আমাদের বিশ্বাস, জীবনের এই বাহ্যিক রূপই শেষ কথা নয়, এখানে আরও কিছু আছে। অবশ্যই তা থাকতে হবে। সেই বিশ্বাসের ঘোড়ায় চড়ে আমরা এক অদৃশ্য ভবিষ্যতের পেছনে ছুটতে থাকি। কারণ, অদৃশ্য ভবিষ্যৎ ছাড়া কেবল বাহ্যিক রূপে জীবন অর্থপূর্ণ ঠেকে না। যদি যন্ত্রণায়, অপূর্ণতায়, আর শূন্যতায় এই জীবনের সমাপ্তি ঘটে, তাহলে মানবজন্ম নিয়ে এতসব যুক্তি, আশা, আর ভালোবাসার মত অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাওয়াটা নিতান্তই নিষ্ঠুর এবং বিষাদময়। অর্থপ্রেমী প্রাণী হওয়ার ফলে মানুষ সর্বদাই তাঁর জীবনের অর্থ খুঁজে বেড়ায়। জীবন-মৃত্যুর এই অনিশ্চিত ক্ষণস্থায়ী অভিজ্ঞতার পেছনে কোন শাশ্বত নিয়ম এবং প্রতিজ্ঞাপূর্ণ ভবিষ্যতের অস্তিত্ব থাকতে পারে না এমন কথা মেনে নেয়া হেতু নির্ভর মনুষ্যজাতির পক্ষে প্রায় অসম্ভব ব্যপার।

কিন্তু যৌক্তিক অর্থপ্রেমী মানুষের আপাত বিশৃঙ্খল অভিজ্ঞতাগুলোর একটা অর্থ দাঁড় করানোটা যেন কারো কাছে চিঠির খামে করে পানির পার্সেল পাঠানোর মত। গ্রাহক খামটা খুললেই তাঁর কোল ভেসে যাবে জলে। তবে কোন গ্রাহকের সাথে এরকম একটা গেইম খেলা কখনই সম্ভব না, যেহেতু কাগজের প্যাকেজে নির্দিষ্ট আকৃতি দিয়ে এক পাউন্ড জল মোড়ানো যায় না।

একজন মানুষ যতই রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক, শিল্প, দর্শন, এবং ধর্মের সমস্যাগুলোর সমাধান নিয়ে অধ্যয়নের চেষ্টা চালায়, ততই সে দেখতে পায় কিছু মারাত্মক মেধাবী লোকজন তাঁদের চাতুর্য সর্বোচ্চ ব্যবহারে নিঃশেষ করে জীবনের জলটাকে কিছু পরিষ্কার এবং স্থায়ী প্যাকেজে আবদ্ধ করার অসম্ভব এবং ব্যর্থ চেষ্টায় লিপ্ত হয়ে আছে।

বর্তমান সময়ের যে কোন বিশেষ লোকের কাছে এই বিষয়টা প্রতীয়মান হওয়ার পেছনে যথেষ্ট কারণ রয়েছে। আমরা এখন ইতিহাস সম্পর্কে যথেষ্ট অবগত। ইতিহাসের সবগুলো প্যাকেজ সম্পর্কে আমরা জানি, এও জানি যে সবকটিই ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। জীবনের সবগুলো সমস্যা সম্পর্কে এখন আমরা এত বিশদ জ্ঞান ধারণ করি যে আমরা ইতিমধ্যে বুঝে গেছি এসব সমস্যার কোন সহজ সমাধান নেই, বরং ইতিহাসের অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে এখনকার সমস্যাগুলো আরও জটিল, আরও কাঠামোহীন। অধিকন্তু, বিজ্ঞান এবং শিল্পকারখানার উন্নতি জীবনের বেগমাত্রা এবং হিংস্রতা এমনভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে যে আমাদের ইতিমধ্যে বানানো প্যাকেজগুলো ছিন্ন হচ্ছে দ্রুত থেকে আরও দ্রুততর গতিতে।

অতঃপর, আমাদের অনুভূত হয় আমরা এক অদ্ভুদ অনিরাপত্তার সময়ে বাস করছি। গত কয়েকশ বছরে অসংখ্য দীর্ঘস্থায়ী ঐতিহ্য ভেঙ্গে টুকরো হয়েছে — পরিবারের ঐতিহ্য এবং সামাজিক জীবন, সরকার, অর্থনৈতিক নীতি, এবং ধর্মীয় বিশ্বাস। যতই বছর পেরুচ্ছে, আমাদের আঁকড়ে ধরার পাথরের পরিমাণ ততই কমে যাচ্ছে, কমে যাচ্ছে চিরন্তন সত্য এবং শাশ্বত সঠিক বলে বিবেচনা করার জিনিসগুলোও।

জানুয়ারি ০৫, ২০১৮
[দ্যা এইজ অব অ্যাংজাইটি]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *