Bigstock 22321633 Spa still life with bamboo fountain and zen stone

জেন হাইকু সমগ্র

ভূমিকা

জাপানি শর্ট ফর্মের কবিতা হাইকু। জাপানি হাইকু লেখা হয় এক লাইনে। ট্র্যাডিশনাল হাইকুতে সিলেবাল থাকে ১৭ টা। কিন্তু মডার্ন হাইকুতে সিলেবাল আরও বেশীও থাকতে পারে এবং লাইন হয় একাধিক। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে তা হয় তিন লাইন। হাইকুর মূল সত্তা ঠিক রেখে লুজ ট্রান্সলেশন হয় বিভিন্ন ভাষায়। হাইকুতে মূলত একটা সিঙ্গেল ইমেজকে তুলে ধরা হয়। ইমেজটা না ধরতে পারলে মনে হতে পারে যেন কবিতা শুরু না হতেই শেষ। জেন মাস্টাররা যেসব হাইকু লেখে সেগুলোকে বলা হয় জেন হাইকু। তবে সব জেন পোয়েট জেন মাস্টার নয়।

এখানে প্রায় সবগুলো জেন হাইকু আমার করা লুজ ট্রান্সলেশন। সাথে আমার নিজের ভাবেরও কিছুটা মিশ্রণ রয়েছে। কোন কোনটা শুধু জেন সত্তা ঠিক রেখে নিজের ভাষাতেই লিখেছি। তবে এর কোনটাকেই আমি আলাদি করিনি। যেহেতু মূল সত্তাটা জেন, তাই সবগুলোই জেন হাইকু। কোন হাইকুতেই কোন প্রকার হাইকু ফরম্যাট মানা হয়নি। শুধু ইমেজকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।

শরিফুল ইসলাম
নভেম্বর ০১, ২০১৭, ঢাকা

দীর্ঘ রাত;
জলের কলকল শব্দ
বলে দেয় আমি কি ভাবি।

***

একটা ঝরা ফুল
ফিরে যাচ্ছে ডালে?
এটা একটা প্রজাপতি ছিল।

***

চোর
ফেলে রেখে গেছে এটা—
জানালায় উঁকি দেয়া চাঁদটা।

***

পুকুরের গায়ে তারাগুলো;
আবারো এক পশলা শীতের বর্ষণ
আলোড়িত করে জলটাকে।

***

শীতের নিঃসঙ্গতা;
বৃষ্টিজলের কেঠোতে,
হেঁটে বেড়াচ্ছে চড়ুইগুলো,

***

একটা মাছ লাফিয়ে উঠে;
মেঘগুলো গড়াগড়ি খাচ্ছে
স্রোতস্বিনীর বিছানায়।

***

তুষার পড়ছে;
অগাধ, অন্তহীন
একাকীত্ব।

***

সান্ধ্য কুয়াশা;
ভাবনায় অতীতের স্মৃতিরা,
কতটা দূরে তাঁরা এখন!

***

পাতারা ঝরছে;
গা এলিয়েছে একে অন্যের উপর,
বৃষ্টি আঘাত করছে বৃষ্টির পিঠে।

***

বজ্রপাতঃ
সারসের চিৎকারটা
ছুরিকাঘাত করে অন্ধকারের বুকে।

***

বসন্তের বৃষ্টি,
একটা সুন্দরী মেয়ে
হাই তুলছে।

***

এই বসন্তে আমার কুটিরে
কিছুই নেই—
আছে সবকিছু।

***

পুরনো পুকুর,
একটা ব্যাঙ লাফিয়ে পড়ে—
প্লপ!

***

শাপলাঃ
জলটাকে ছাড়িয়ে
নিজেকে ছাড়িয়ে।

***

ঘুগরা পোকার চিৎকার—
সাধ্য নেই কারো অনুমান করে
কতটা নিকটে তাঁর মৃত্যু!

***

একটা তিক্ত সকালঃ
চড়ুইগুলো বসে আছে পাশাপাশি
তাঁদের ঘাড় নেই।

***

আহত হরিণটা পান করে,
জলে প্রতিবিম্বটা হয়ে উঠে
এক টুকরো লাল মেঘ।

***

এই বিচ্ছিন্ন পাহাড়ের একাকীত্ব,
বুড়ো কৃষক খুঁড়ছে
বন্য আলু।

***

স্বর্গ আর পৃথিবীকে,
গরমের কাপড় হিসেবে
গায়ে জড়িয়েছে ভিক্ষুক।

***

সন্ধ্যার কচি অন্ধকার,
একটা সাদা পেঁচা
নিরবে উড়াল দেয় গলির শূন্যতায়।

***

সন্ধ্যা বৃষ্টি,
কলা পাতাটাই প্রথম
বলে উঠে তাঁর কথা।

***

বর্ষার সন্ধ্যা,
বিছানার চাদরে
শুয়ে আছে এক গোছা বিবর্ণ ফুল।

***

ঘরের কোণায়,
ঐ যে ক্লান্ত পুতুল দুটো—
হ্যাঁ, এরা দুজন স্বামী-স্ত্রী।

***

উড়ে চলে গেছে কাকঃ
সন্ধ্যার সূর্যটায় দুলে উঠছে,
একটা পত্রহীন উলঙ্গ গাছ।

***

মন্দিরের কুয়োয়,
ব্যাঙগুলো মন্ত্র পড়ছে—
ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ,ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ, ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ!

***

গ্রীষ্মের বৃষ্টি,
ধুয়ে নিয়ে যায়
শীতের ক্রোধ।

***

তুষার পড়ছে,
প্রতিটা কণাই খুঁজে নেয়
তাঁর যথাযথ স্থান।

***

একটা শূন্য এলিভেটর,
খুলে আর
বন্ধ হয়।

***

মন্দিরের ঘণ্টা-ধ্বনি মিলিয়ে যায়,
রয়ে যায় ছড়ানো সৌরভ।
একটা যথাযথ সন্ধ্যা!

***

সঙ্গ দিতে,
বসে আছে একটা
শূন্য চেয়ার।

***

একটা তীক্ষ্ণ চিৎকারে
রাঙা পাখিটা গিলে খেয়েছে
বিস্তীর্ণ চরণভূমি।

***

ভোরের নীরবতায় ঝরে
ক্যামেলিয়ার পাপড়ি…
ছলকে ফেলে এক ফোঁটা জল-রত্ন।

***

ঘরের নয়া ছাঁইচে,
বৃষ্টির টুপটুপ শব্দ
জাগিয়ে তোলে ভেতরটা।

***

চাতক পক্ষীঃ
গলার নিঃসঙ্গ স্বর গড়িয়ে পড়ে,
পেছনে ফেলে শূন্যতা।

***

আমি লিখি, মুছে ফেলি, আবার লিখি,
আবার মুছে ফেলি, অতঃপর
পূর্ণতায় বিকশিত হয় একটা রক্তিম পপি।

***

শিলাবৃষ্টির শব্দ—
আমি দাঁড়িয়ে রই, আগের মতই,
একটা প্রাচীন ওকগাছ হয়ে।

***

নদীপ্রপাত,
পাথরের উপর ঠায় বসে আছে
একটা পতিত ক্যামেলিয়া।

***

গোলাঘর
পুড়ে ছাই হয়েছে,
চাঁদটাকে এখন দেখা যাবে।

***

Comments

comments

3,663 views

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *