আমাদের সবারই যেন দুইটা ‘আমি’ আছে। একটা আমি (I), আরেকটা আমি (Me)। প্রথম ‘আমি’টার সাথে দ্বিতীয় ‘আমি’র সম্পর্ক সম্ভবত খুব একটা ভালো না। প্রায় খারাপই বলা যায়।
প্রথম ‘আমি’টা নিজেরে নিয়া সবসময় কনশাস থাকে। অন্তত থাকার ভান কইরা যায়। এই আমি (I) টা কনশাস হইলেও, সে সবসময় একটা হঠাৎ বন্ধি হইয়া পড়া প্রাণীর মতই কনফিউজড আর হতবিহ্বল অবস্থায় থাকে। আর এই আমিতেই ইগোর বসবাস।
অন্যদিকে দ্বিতীয় আমি (Me) টা প্রকৃতির সাথে জড়াইয়া এক হইয়া থাকে। তাঁর কোন চিন্তা ভাবনা নাই। সে প্রকৃতির সাথে সাথেই প্রতি মুহূর্তে পরিবর্তিত হয়। তাঁর এই পরিবর্তন প্রথম ‘আমি’র চাওয়ার সাথে বেশীরভাগ সময়ই মিলে না।
প্রথম আমি (I) দ্বিতীয় ‘আমি’রে বশে আনতে চায় সবসময়। কিন্তু বেশীর ভাগ সময়ই তা হইয়া উঠে না। কারণ দ্বিতীয় আমি, প্রকৃতি আর এই মহাবিশ্বের স্বভাবই হইলো পরিবর্তনের উপরে থাকা। এরা যেন সেই সুন্দরী মাইয়ার মত, যারে কখনই ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না, সবসময় থাকে নাগালের বাইরে, আর তাঁর এই অস্থিরতাই তাঁর সৌন্দর্যের মূল। এই অস্থিরতাই তাঁর চার্ম।
কেউ কেউ বলে, এই প্রথম আমি বাস করে মানুষের মাথায়, আর দ্বিতীয় আমিটা থাকে হৃদপিণ্ডে। তাই উৎসাহদাতারা মানুষরে উৎসাহ দেওয়ার সময় বইলা থাকে “ফলো ইউর হার্ট”। আর প্রত্যেকেই বিভিন্ন সময় নিজের কর্মকাণ্ডের জন্যে নিজেরে ভেতরে ভেতরে বকাজকা করে। এইটা একটা চলমান কনফ্লিক্ট। এই প্রথম আমি যখন দ্বিতীয় ‘আমি’র সাথে একটা কনস্ট্যান্ট কনফ্লিক্টে জড়াইয়া থাকে, তখন কোন আমিই ঠিক মত নিজেরে উপভোগ করতে পারে না। চলতে থাকে ‘আমি’র লগে ‘আমি’র যুদ্ধ।
এই দুই ‘আমি’র মধ্যে মূল পার্থক্য হইলো মেমরির ইল্যুশন। প্রথম ‘আমি’ মেমরি দিয়া নিজেরে এক জায়গায় স্থির কইরা রাখতে চায়। তাঁর কাছে পরিবর্তন একটা হতাশাজনক বিষয়। সে সবসময় নস্টালজিয়ায় ভোগে। আর চায় সবকিছু আগের মতই থাকুক। এই হতাশা কাটাইয়া উঠার একমাত্র উপায় হইলো পরিবর্তন মাইনা নেওয়া। এই মাইনা নেওয়ার মধ্য দিয়া দুই ‘আমি’ পুরোপুরি এক হইতে না পারলেও সেইখানে আর কনফ্লিক্ট থাকে না, থাকে প্যারাডক্স। আর জীবনের গোপন সত্যিটা হইলো — জীবন একটা প্যারাডক্স।
ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৭।