মানুষের জীবনটা সাধারণত সিনেমার মতই বেশ কয়েকটা জানরায় ভাগ হইয়া প্যারালালি সামনের দিকে আগাইতে থাকে। কমেডি, অ্যাকশন, থ্রিলার, হরর, রোম্যান্টিক সহ যতগুলা জানরা সিনেমায় আছে তাঁর সবগুলাই একটা মানুষের জীবনে একলগে থাকে। তবে মানুষের জীবনের যেই অংশটা অনেক বেশী শক্তিশালী হইয়া পুরা জীবনটারে ড্রাইভ করে সেইটা হইলো ‘হরর’। জীবনের হরর মানুষরে সামনের দিকে ধাবরাইয়া বেড়ায়, সেইটা আবার পেছনের দিকেও হইতে পারে দৃষ্টিভঙ্গিটা উলটাইয়া দেখলে আর কি। মানুষের অনুভূত সুখও এক ধরণের হরর, তবে হরর ব্যাপারটারে নেগেটিভ ইমোশনের সাথে মিলাইতে আমাদের বেশী আরাম লাগে। কারণ ‘হরর’ এর যেইসব বাংলা অর্থ পাওয়া যায় তাঁর সবই হইলো নেগেটিভ — আতঙ্ক, ভয়, নিষ্ঠুরতা, বিভীষিকা ইত্যাদি। তবে যেইটাই হোক, মানুষের জীবনের এই হরররে একটা সিনেমাটিক নাম দিয়া বলা যায় — দ্যা হরর অব লাইফ। মানুষ তাঁর জীবনে যত ধরণের হরর ফেইস কইরা থাকে তাঁর মধ্যে সবচাইতে হরিফিক হররটা হইলো তাঁর অনুভূত একাকীত্ব। এই একাকীত্ব বলতে শুধু তাঁর জীবনসঙ্গীর অভাবে একলা থাকারে বোঝায় না। এই একাকীত্ব আরও বড়, এই একাকীত্ব হইলো সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্নতা। সবার মাঝে থাইকাও একলা অনুভব করা। এই একাকীত্ব একজনের অনুভূতিতে আইসা ভর করতে পারে বিভিন্ন কারণে। তাঁর মধ্যে একটা হইলো মানসিক অসুস্থতা। তবে সেই অসুস্থতা আদৌ অসুস্থতা কিনা সেইটারে আবার যথেষ্ট সন্দেহের চোখে দেখার অবকাশ থাইকা যায়, কারণ সমাজ তাঁর নিজের মত কইরা কাউরে রুল করতে না পারলে তখন তাঁরে অসুস্থ ঘোষণা কইরা দেয়, আর আমরাও সেইটা মাইনা নিয়া তাঁরে অসুস্থ হিসাবেই ট্রিট কইরা থাকি। একজন মানসিক রোগীর জীবনের একাকীত্বের এক্সট্রিম হরর নিয়া বানানো হইছে মুভি দ্যা ভয়েসেস (২০১৪)।
মুভিতে দেখা যায় জেরি নামের একটা সুন্দর চেহারাওয়ালা গোবেচারা পোলা একটা এপার্টমেন্টে একলা থাকে। তবে পুরাপুরি একলা থাকে সেইটাও বলা ঠিক না, কারণ লগে একটা কুত্তা আর বিলাইও থাকে। এবং অদ্ভুদ ব্যাপার হইলো কুত্তা আর বিলাই দুইটাই আবার মানুষের মত কথা কইতে পারে। যতই কথা বলুক, এইগুলা যেহেতু মানুষ না, তাই তাঁরে একলাই বলতে হবে। কারণ আমরা আবার কেবল মানুষ ছাড়া অন্য কিছুর সঙ্গরে সঙ্গই মনে করতে পারি না। আমাদের এই জেরি পোলাডা নিজের পেট চালানোর জন্যে চাকরি করে একটা বাথটাব ফ্যাক্টরিতে। অতি গোবেচারা হওয়া সত্ত্বেও পোলাডা সেইখানে একটা অতি সুন্দরী কলিগের উপরে ক্রাশ খাইয়া বসে। এইদিক দিয়া জেরির আসল মানসিক সমস্যাটা হইলো, সে চোখে ভ্রম দেইখা বেড়ায়, আর ঘরে আইসা তাঁর কুত্তা আর বিলাইটার লগে সবসময় কথা বলে। এমনভাবে বলে দেখলে মনে হয় জন্তু দুইটা সত্যিই কথা বলতে পারে। জেরির এই অসুস্থতার ব্যপারে তাঁর অফিসের কলিগরা পুরাপুরি অবগত না হইলেও তাঁর আচরণ দেখলেই তাঁরা বুইঝা ফেলে যে সে মানুষটা “স্বাভাবিক” না। তো যেই মেয়েটার উপরে সে ক্রাশ খাইছে সেই সুন্দরীর নাম হইলো ফিওনা। ফিওনারে সে অনেকভাবে ইমপ্রেস করার চেষ্টা কইরা মোটামুটি ব্যর্থ হওয়ার পরেও ঘটনাক্রমে মেয়েটা তাঁর গাড়িতে একদিন রাতের বেলা চইড়া বসে। পথের মধ্যে ঘটনা এমন প্যাচ খাইয়া বসে যার লগে নিজের হ্যালুসিনেশন মিলাইয়া জেরি মেয়েটারে সেইখানে ছুরি দিয়া আঘাত কইরা খুন কইরা ফেলে। কিন্তু খুন করার পরেও তাঁর ফিওনার উপর থাইকা ক্রাশ কাটে না। অতঃপর সে মেয়েটার প্রতি অতি ভালোবাসা আর ফ্যাসিনেশনের তাড়নায় মেয়েটার কল্লাটা কাইটা ঘরে নিয়া ফ্রিজে রাইখা দিয়া এই কল্লার লগেই নিয়মিত কথা কইয়া যায়। ঘটনা আরও অদ্ভুদ এবং ভয়ানক দিকে টার্ন নিতে নিতে আগাইতে থাকে মুভির কাহিনী।
মুভির নাম দ্যা ভয়েসেস হওয়ার কারণ হইলো, জেরি তাঁর মানসিক অসুস্থতার কারণে ইমাজিনারি কণ্ঠের আওয়াজ শুনতে পায় যেগুলা তাঁরে ভায়লেন্ট কাজকর্মে লিপ্ত হইতে উদ্ভুদ্ধ করে। কিন্তু জেরি আসলে স্বেচ্ছায় একটা পিঁপড়া মারতেও সাহস করতে পারবে বলে মনে হয় না। জেরির ঘরের কুত্তা আর বিলাই দুইটা দুই ক্যারেক্টার নিয়া তাঁর সাথে কথা বইলা যায়। কুত্তা আর বিলাই দুইটার আবার মরাল সেন্স সম্পূর্ণ বিপরীত। এই দুইটা ক্যারেক্টার জেরির অভ্যন্তরীণ মরাল কনফ্লিক্টরে রিপ্রেজেন্ট করে।
মুভিটারে বানানো হইছে হরর আর কমেডি এলিমেন্টের পারফেক্ট সংমিশ্রণে। পুরা মুভিটাই ডার্ক হিউমারে ভরা। মুভির শুরু থাইকা শেষ পর্যন্তই একটা টানটান কোল্ড থ্রিল অনুভব করা যায়। আপাতদৃষ্টিতে মুভিটারে বিনোদনধর্মী হরর মুভি মনে হইলেও মুভির গভীরে খুইজা পাইবেন মানুষের একাকীত্ব নিয়া গভীর দার্শনিক ইন্সাইট। অন্তর্নিহিত দর্শন আর মুভির এন্ডিং মুভিটার সত্যিকারের গ্রেটনেস বহন করে।
মুভির কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করছে রায়ান রেনল্ডস। রায়ান বরাবরের মতই তাঁর অভিনয়ের সেরাটা দেখাইছে এই মুভিতে। মুভিটা দেখতে বসার আগে আপনার জন্যে সতর্কবানী হইলো, মুভিতে খুন-খারাবি আর রক্তারক্তির দৃশ্য দেখার অভ্যাস না থাকলে এই মুভি দেখতে না বসাই উত্তম।
অরিজিনাল কাহিনীর আন্ডারএপ্রিশিয়েটেড এই অসাধারণ হরর মুভিটার আইএমডিবি রেটিং হইলো ৬.৩। আর রটেন টমেটোতে ৭৩% ফ্রেশ।
রিভিও শেষ।