ভালোবাসায় একাকীত্ব

মানুষ সাধারণত একাকীত্বে বাস করে। এই একাকীত্ব দূর করার সে জন্যে তৈরি করে সব রকমের সম্পর্ক, বন্ধুত্ব, সংগঠন, রাজনৈতিক দল, ধর্ম এবং আরও কত কি! কিন্তু এইখানে ব্যাসিক জিনিসটা হইলো সে আসলে একা থাকতে ভয় পায়। একা হইতে ভয় পায়। একাকীত্ব হইলো একটা ব্ল্যাক হোল, একটা ঘোর অন্ধকার, মৃত্যুর মতই একটা ভয়ানক নেগেটিভ স্টেট… যেন মৃত্যু এসে আপানারে আস্ত গিলে খাচ্ছে। এইটাকে দূর করার জন্যে আপনি দৌড়াইতে থাকেন, কারো উপড়ে গিয়া ঝাঁপাইয়া পড়েন, কারো হাতটা ধরতে চান শুধু আপনার একাকীত্বের অনুভূতিটারে নাই করার জন্যে… একাকীত্বের চাইতে কষ্টের আর কিছুই হইতে পারে না।

এখন সমস্যা হইলো, এই একাকীত্বের ভয় থাইকা যেইসব সম্পর্ক তৈরি হয় সেইটা কখনই সুখকর অভিজ্ঞতায় রূপ নেয় না, কারণ দুইজনেই নিজের ভয় থাইকা আইসা সম্পর্কে জড়াইয়া পড়ে। দুইজনেই এইটারে বলে ভালোবাসা। এইখানে দুইজনেই নিজের সাথে এবং তাঁর সাথেরটার সাথে প্রতারণা করে। এইখানে যেইটা কাজ করতেছে সেইটা সিম্পলি ভয়, আর ভয় কখনও ভালোবাসার উৎস হইতে পারে না। শুধু যারা ভালোবাসে তারাই সম্পূর্ণ ভয়হীন; যারা ভালোবাসে তারাই শুধু একা থাকার ক্ষমতা রাখে, সানন্দে। ভালবাসলে অন্যের প্রয়োজন ফুরাইয়া যায়, ভালবাসলে একজন নিজেই পরিপূর্ণ হইয়া উঠে।

ঠিক যেদিন আপনার এই একাকীত্ব দূর করার জন্যে যতসব চেষ্টা আছে সবগুলা যে ব্যর্থ সেইটা মাইনা নিতে পারবেন, যেদিন বুঝতে পারবেন যে সকল চেষ্টার পরেও আপনার একাকীত্ব আনটাচড রইয়াই গেছে, সেইটাই হবে আপনার গুরুত্বপূর্ণ আন্ডারস্ট্যান্ডিং এর মুহূর্ত। তখন একমাত্র যা অবশিষ্ট থাকবে তা হইলোঃ আপনে দেখতে চাইবেন একাকীত্ব কি আসলেই ভয় পাওয়ার জিনিস নাকি এইটাই আসলে আপনার ন্যাচার। অতঃপর আপনে দৌড়ানোর পরিবর্তে নিজের চক্ষু দুইটা বুইঝা স্থির হইয়া বসবেন, তারপর ডুব দিবেন নিজের ভেতর। হঠাৎ দেখতে পাবেন আপনার একাকীত্বের রাত্রিটা শেষ হইয়া গেছে, চোখের সামনে উদয় হইছে একটা নতুন ভোর… আপনার পুরনো একাকীত্ব (Loneliness) টার্ন নিছে এক নতুন একাকীত্বে (Aloneness)।

এই নতুন একাকীত্বটাই আপনার ন্যাচার। আপনে একাই জন্ম নিছেন আবার একলাই মরে যাবেন। আর এখন আপনে সেইটা না বুইঝা, জাগ্রত হইয়া অনুভব না কইরাই একা একা বেঁচে আছেন। আপনে আপনার নির্জনতারে (Aloneness) ভয়ানক একাকীত্বের (Loneliness) সাথে গুলিয়ে ফেলছেন। এইটা সিম্পলি একটা ভুল বুঝাবুঝি। আপনে আসলে নিজেই নিজেরে নিয়া পরিপূর্ণ, অপূর্ণতার অনুভূতিটা আসে ভয় থাইকা।

আপনার এই নতুন একাকীত্বের (Aloneness) মানে এই না যে আপনে কারো সাথে জড়াবেন না, এর মানে এই যে আপনি জড়াবেন সম্পূর্ণ নতুন পন্থায়।

এইটা না বোঝার কারণে মানুষের মধ্যে কমুনিকেশন বন্ধ হইয়া গেছে। মানুষ এখন আর এক অন্যের সাথে কথা বলে না; বেশীরভাগ সময় একে অন্যের উপরে কথা বলে। মানুষ ভুলে গেছে কিভাবে আরেকজনের একদম কাছে গিয়া পৌঁছাবে। মানুষ একে অন্যের কাছে প্যারালাল লাইন হইয়া গেছে, খুব কাছাকাছি থাকে কিন্তু কেউ কাউরে ভেদ করতে পারে না, পাশাপাশি থাইকাও কারো সাথে কারো সাক্ষাত হয় না। এমনকি স্বামী, স্ত্রী, বন্ধু বান্ধব, তথাকথিত প্রেমিক-প্রেমিকা সবাই হইলো প্যারালাল লাইন, কারো সাথে কারো দেখা নাই — খুব কাছাকাছি দৌড়ায় আর আশায় থাকে কালকেই বোধয় দেখা হবে। কিন্তু এইটা কেবলই একটা আশা, কেবলই একটা ভ্রম। আর এই ভ্রমটা নিয়াই মানুষ কোন রকমে টেনেটুনে বেঁচে থাকে।

তর্জমা © শরিফুল ইসলাম
জানুয়ারি ২০, ২০১৭
[অশো]

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *