শবাধারের গান

তুমি এখনো নিস্তব্ধতার সেই অক্ষত নববধূ,
তুমি মৌনতা আর ধীর সময়ের পালক সন্তান।
তুমি ইতিহাসবেত্তা, তোমার গায়ে অরন্যের ইতিহাসের
নিখুদ খোঁদাই। তুমি সেই ইতিহাসবিদ,
যে পুস্পময় ভ্রমণের কথা আমার মিত্রাক্ষর কবিতার চেয়ে
মিষ্টি করে প্রকাশ করতে পারে না।
তবু তোমার গায়েই আমি হাজার বছরের
ইতিহাস পড়ি। কত গল্পে ভঁরা চিত্রকল্পে খচিত
তোমার ঐ শরীর! কে ঐ পাতার আগায় বারবার
ফিরে আসা কিংবদন্তী, জানতে চায় তোমার চিত্রকল্পকে?
পল্লী স্বর্গের উপত্যকায় ঐসব আকৃতিগুলো কি মানুষের নাকি ঈশ্বরের?
নাকি উভয়ের? তাঁরা কেমন মানুষ আর ঈশ্বর?
কুমারীরা কেন এত বিতৃষ্ণ? কিসের এত ছুটাছুটি?
কিসের বাঁশি আর খঞ্জনী বাজে? কিসের এত অদম্য আনন্দোচ্ছাস?

যে সুর শোনা যায় তা মধুর,
কিন্তু যে সুর অশ্রুত তা যে আরও মধুর!
অতএব তুমি বাজাও, তুমি বাজাও তোমার বাঁশীর নরম সুর,
যে সুর আমার রক্ত-মাংসের কানে নয়, বাজবে আত্মার কানে।
যে সুরের তাল নেই, লয় নেই, আওয়াজও নেই।
যৌবন বসে আছে ঐ গাছের নিচে,
তুমি তো পারবে না তোমার সুর থামাতে, না পারবে গাছটাকে ছাড়তে।
সাহসী প্রেমিকাটিও কখনো, কক্ষনও পারবে না তোমাকে চুমু খেতে,
যদিও সে লক্ষ্যের অতি নিকটে, দুঃখ কর না। কারন
সে তো আর চলে যাচ্ছে না, যেতে পারেও না। যদিও তুমি
আশীর্বাদপুষ্ট নও। তবু তোমার ভালোবাসা টিকে থাকবে চিরকাল,
টিকে থাকবে তোমার প্রেমিকা।

আহ! গাছের ডালে সুখের নৃত্য! এই গাছের পাতা ঝরার নয়,
এই বসন্ত অন্তহীন। তুমি সুখি গায়ক, অপরিশ্রান্ত! বাজছে অন্তহীন
নতুন সুর। আহ! সুখের ভালোবাসা, ভালবাসার সুখ!
আবিরাম ঊর্ধ্বশ্বাস, চির তরুণ। সকল মনুষ্য আবেগের ঊর্ধ্বে।
এতে হৃদয় ভঁরে যায় বিষাদে, বিতৃষ্ণায়।
যেন পোড়া কপাল, মরুর বুকে তৃষ্ণায় ঝলসানো জিহ্বা।

কারা আসছে ঐ বলির অনুষ্ঠানে? ঐ যাজক কি নতশিরের গরুটা নিয়ে আসছে
কোরবানি দিতে? প্রাণীটা কি জানে সে একটু পরেই বলি হতে যাচ্ছে?
কি এই নদীর পাঁড়ের জনশূন্য শহর? শহরের সবাই কি সেই বলির অনুষ্ঠানে গেছে?
তোমার এই শহর, এই রাস্তা, চির নীরবতায় ডুবে থাকবে। কে করবে এই শহরের গল্প?
কেন তোমার চিত্রকল্প জনশূন্য হয়, তাঁরা আর ফিরে আসতে পারে না?

আহ! তোমার চিত্রকল্পের সেই চিলাকৃতি, কুমারীর ছড়াছড়ি,
অরন্য শাখা, নিষ্পিষ্ট গাঁজা। তুমি নিরব রও আমাকে অনন্ত
চিন্তার সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে। যখন এই প্রজন্ম নষ্ট হয়ে বুড়ো হয়ে যাবে,
তখনও তুমি দুর্ভাগ্যে ঠায় দাড়িয়ে রবে, চির তরুণ।
তারপর তুমি ইতিহাস বলবে, অন্য কোন বন্ধুকে, অন্য কোন পুরুষকে।
পৃথিবীতে তুমি যা জানো এবং একমাত্র যে কথাটি জানা প্রয়োজন—
“সুন্দরই সত্য, সত্যই সুন্দর”।

তর্জমা
১০/০২/২০১৬
মুলঃ ওউড অন অ্যা গ্রেইশান আর্ন

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *