কোন সোসাইটিই চায় না আপনি জ্ঞানী হন

কোন সোসাইটিই চায় না আপনি জ্ঞানী হন। আপনে জ্ঞানী হইয়া উঠলে সকল সোসাইটির ইনভেস্টম্যান্টই বিফলে যাইব। মানুষ জ্ঞানী হইলে তাঁরে শোষণ করা যায় না, মানুষ বুদ্ধিমান হইলে তাঁরে বশ করা যায় না। এবং তাঁরে জোর কইরা কোন যান্ত্রিক জীবনের ভেতরে ঠাইসা ঢুকানো যায় না, যেইখানে সে রোবটের মত জীবন যাপন করবে। জ্ঞানী হইলে মানুষ এইসবের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলে, সে তাঁর ইনডিভিজুয়ালিটি রক্ষা করার চেষ্টায় মত্ত হইয়া যায়। তাঁদের আশেপাশে তখন বিদ্রোহের গন্ধ পাওয়া যায়। তাঁরা মুক্ত হইতে চায়। আর মুক্তি আসেই জ্ঞানের উপর ভর কইরা। জ্ঞান আর মুক্তি একসাথে জড়িত। কোন সমাজই মানুষরে মুক্তি দিতে চায় না।

কম্যুনিস্ট সোসাইটি বলেন, ফ্যাসিস্ট সোসাইটি বলেন আর ক্যাপিটালিস্ট সোসাইটি বলেন, অথবা হিন্দু, খ্রিষ্টান আর মুসলিম সোসাইটির কথাই বলেন, কোন সোসাইটিই চায় না মানুষ তাঁর নিজের বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করুক। কারণ যেই মুহূর্তে মানুষ তাঁর নিজের বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করা শুরু করে, ঠিক সেই মুহূর্ত থাইকাই সে সমাজের কাছে মহা বিপদ হইয়া দাঁড়ায়, ক্ষমতাসীনদের কাছে বিপদ হইয়া দাঁড়ায়, প্রতিষ্ঠানের কাছে বিপদ হইয়া দাঁড়ায়, সর্বোপরি সে সকল প্রকার শোষণ, অত্যাচার এবং অনাচারের কাছে বিপদ হইয়া দাঁড়ায়। চার্চের কাছে, রাষ্ট্রের কাছে এবং জাতীর কাছেও সে বিপদ হইয়া দাঁড়ায়।

প্রকৃতপক্ষে একজন জ্ঞানী হইলো একটা জীবন্ত আগুনের গোলা। সে বরং মইরা যাইতে চায়, কিন্তু কিছুতেই সমাজের দাস হইয়া বাঁচতে চায় না। সে সমাজের সব স্টুপিড কর্মকাণ্ডের কাছে, সমাজের সব স্টুপিড লোকজনের কাছে নিজেরে বিক্রি করার চাইতে মৃত্যুরে উত্তম মনে করে। সে সমাজের কাছে মাথা নত করতে পারে না, সমাজের সেবা করতে পারে না। কারণ এই সমাজ সবসময়ই মানুষরে মিথ্যা গিলায়, মিথ্যা খাওয়ায়। এবং এইসব মিথ্যার চর্চার উপর ভিত্তি কইরাই গইড়া উঠে স্কুল, কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলা।

মনে রাখবেন, এইসব প্রতিষ্ঠানগুলা আপনারে সার্ব করে না, তাঁরা অতীতরে সার্ব করে, তাঁরা তাঁদের ওয়েস্টেড ইন্টারেস্টরে সার্ব করে। এবং অবশ্যই তাঁরা প্রতিনিয়ত আপনার ইগোটারে ফুলাইয়া আরও বড় কইরা তুলে। তাঁরা আপনারে একটার পর একটা ডিগ্রি দিতেই থাকে, এতে কইরা আপনার নামটা দিনে দিনে লম্বা হইয়া উঠে, কিন্তু শুধু আপনার নামটাই কেবল লম্বা হয়, আপনে হন না। আপনে দিনে দিনে ছোট থাইকা আরও ছোট হইতে থাকেন। একটা সময় আসে যখন আপনার জীবনে শুধু সার্টিফিকেটগুলাই থাকে, আপনি আর থাকেন না। প্রথমে একজন মানুষ তাঁর সার্টিফিকেটগুলা বইয়া বেড়ায়, পরে সার্টিফিকেটগুলা মানুষটারে বইয়া বেড়ায়। এরপর শুধু সার্টিফিকেটগুলা থাইকা যায়, আর মানুষটা হইয়া যায় মৃত — লং ডেড (Long Dead)!

তর্জমা © শরিফুল ইসলাম
নভেম্বর ১০, ২০১৬।
অশো। খণ্ডাংশ। নো সোসাইটি ওয়ান্টস ইউ টু বি ওয়াইজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *