মুভি দ্যা জিরো থিওরাম — অস্তিত্ব সংকটের মধ্য দিয়া দেখানো অস্তিত্বের গভীরতা

আপনে কেডা? কইথাইকা আইছেন? দুনিয়াতে কি করতাছেন? কেন করতাছেন? শেষ পর্যন্ত আপনে কই যাইবেন অথবা আপনার আদৌ কোন আল্টিমেট ডেসটিনেশন আছে কি? জীবনের কি কোন অর্থ আছে? নাকি শুধু আইলেন, খাইলেন, হাগলেন, বিয়া করলেন, সেক্স করলেন, বাচ্চা পয়দা কইরা এক সময় পটল তুললেন এইডাই জীবন? এইসব প্রশ্ন নিয়া বহু আগেই বুইড়া বুইড়া দার্শনিকরা অনেক কছলাইছে, মাথা ঘামাইছে, উত্তর খুঁজছে। কিন্তু সন্তোষজনক উত্তর কেউ দিতে পারেনাই। হয়তো পারছে কিন্তু সবাই সন্তুষ্ট হয় নাই। তবে এইসব প্রশ্নের খুব সহজ কিছু উত্তর রিলিজিয়ান দিয়া দিছে, যদিও এইসব উত্তরেও সবাই কনবিন্সড না। তয় এই রিভিও অথবা মুভিটা কি রিলিজিয়ানের বিরুদ্ধে গেল কি গেল না সেই তর্ক মুভি দেইখা নিজের লগে নিজে করা উত্তম। যেহেতু এইসব প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর এখনো পাওয়া যায় নাই, তাই মানুষ এইগুলারে নিয়া এখনো কছলায় এবং ভবিষ্যতেও কছলাইব।

960

মুভির নাম জিরো থিওরাম হওয়ার কারন মুভিটা থিওরি অব গ্রাভিটেশনাল সিঙ্গুলারিটি নিয়া ডিল করছে। উপরোক্ত প্রশ্নগুলাও এই মুভিতে উইঠা আসছে। মুভিতে দেখায় একজন টাকলা মাথার এবনরমাল (?)যুবক একলাই একটা বিশাল বিল্ডিঙে থাকে। দালানে অনেক গুলা ফ্লোর থাকলেও অন্য কেউ এই বিল্ডিঙে থাকেনা। এবং বাইরে থেকে দেখলে বুঝা যায় না ভিত্রে কিরকম হইতে পারে। মুভির কেন্দ্রীয় এই টাকলা পোলাডা অত্যন্ত লাজুক এবং অদ্ভুত। তার ঘরে একটা বিশাল কম্পিউটার আছে, যেইটায় প্রতিদিন সে একটা গেইমের মত কি একটা খেইলা শেষ পর্যন্ত কখনই যাইতে পারেনা। সবচেয়ে অদ্ভুত ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হইল পোলাডা চরম অস্তিত্ব সংকটে ভোগে এবং একটা ফোন কলের আশায় প্রতিদিন বইসা থাকে। সে বিশ্বাস করে এই ফোন কলের মাধ্যমে জানতে পারবে জীবনের আসলে কোন অর্থ আছে কিনা। কিন্তু দিন যায়, রাইত আসে, এই ফোন কল আর আসেনা। আদৌ আসবে কিনা সেইটা মুভি দেইখা জাইনা লওয়ার ভার আপনাগো উপর বর্তাইল। পোলাডার মাঝে মাঝে মেজাজ চইরা গেলে কম্পিউটার ভাইঙ্গা ফালায়, কিন্তু লগে লগে করপোরেশনের লোকজন আইসা ঠিক কইরা দিয়া যায়। একটা সুন্দরি মাইয়া তাঁর প্রেমে পরলেও সে লাজুকতা আর অস্তিত্ব নিয়া জটিলতায় থাকায় সাড়া দিতে পারেনা। একসময় যে টের পায় তাঁর পুরা ঘরে ক্যামেরা এবং তাঁর প্রতিটা মুভমেন্ট কেউ একজন মনিটর করতেছে। আরও অনেক অদ্ভুত জটিলতা নিয়া আগাইতে থাকে মুভির কাহিনী।

the-zero-theorem-di

মুভিটা একটা ব্যতিক্রমধর্মী আন্ডাররেটেট সাইন্স ফিকশন মাস্টারপিস। মুভিটা শুরু থাইকাই আপানারে একটা অন্য জগতে নিয়া যাইব। নিয়া যাইব আপানার অস্তিত্বের গভীরে। মুভিটার মেইন থিম এক্সিসটেনশিয়াল ক্রাইসিস এবং গুরুত্বপূর্ণ থিম হইল পোস্ট মডার্ন মিজারেবল ফুল অব শিট লাইফ যা করপোরেশন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। আপনে মানেন আর না মানেন। আপনার জীবনের প্রতিটা মুভমেন্ট নিয়ন্ত্রিত। এবং আপনি যা চিন্তা করেন সেগুলাও আপনের না। আপনে একটা পুতুল, আমিও। মুভিতে এক পর্যায়ে দেখায়, কেন্দ্রীয় পোলাডা যখনি ঘর থাইকা বাইর হইয়া রাস্তায় নামে, লগে লগেই একটা ডিজিটাল এড তাঁর পিছনে লাইগা যায়। এবং এইডা লগে লগেই ঘুরে। আর এই এড এর মূল ভাষ্য হইল “তুমি যথেষ্ট নও”। আপনারে আর আমারে প্রতিদিনই বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বোঝানো হয় আমাদের যা আছে তা যথেষ্ট না। আরও লাগবো। কিন্তু ঠিক কতটুকু হইলে যথেষ্ট হইব সেইটা কখনই বলা হয়না। আর আমরা এইডা নিয়া ভাবিওনা। খালি দৌড়াই আরও টাকা, আরও সম্পদ, আরও খ্যাতির পিছনে যেই দৌড়ের কোন শেষ নাই। জীবনে বসে জিরানোর সময় পাইনা। জীবনডারে উপভোগ করা অথবা তা না পারলেও জীবনরে প্রশ্ন করার সময় আর মগজও আমাদের অবশিষ্ট থাকেনা। দৌড়াই আর দৌড়াই। মুভিতে এক পর্যায়ে বোঝায় আপনি আসলে কতটা বড়। এই ব্যাপারে সুফি কবি রুমি বলছিল “তুমি মহা সমুদ্রে এক ফোঁটা জল নও, তুমি আসলে এক ফোঁটা জলে আস্ত একটা সমুদ্র”।

মুভিটা ভিন্ন ধাঁচের, কাহিনী, প্লট অরিজিনাল। আপনি একাকীত্বের রোগী না হইলে মুভিটা আসলে আপনার জন্য বানাইছে। আর যদি আপনি হইয়া থাকেন একজন লোনলি ভদ্র নেকড়ে তাইলে মুভিটা আপনের জন্য টনিক। আর যদি আপনি চিন্তাশীল হন, তাইলে মুভিটা নিয়া বইসা পরা আপনের জন্য ফরজ। হেপি মুভি ওয়াচিং।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *