আপনে যদি সম্পূর্ণ ওপেন মাইন্ড নিয়া মরালিটি জিনিসটারে অ্যানালাইসিস করতে বসেন, তখন আপনে কোন কিছুতেই কোন ফিক্সড মরালিটি খুইজা পাইবেন না। ব্যাপক ঝামেলায় পইড়া যাইবেন। মরালিটি তখন সিচুয়েশন টু সিচুয়েশন ভ্যারি করবো। আপনে শেষ পর্যন্ত দেখতে পাইবেন যে ‘অ্যাবসুলুট মরালিটি’ বলতে আসলে কিছু নাই। এমনকি যারা কিছু ফিক্সড মরালিটি আঁকড়াইয়া ধইরা জীবন চালায় তাঁদের মরালিটিও আসলে ষ্টেবল না, খালি তাঁরা তাঁদের নিজের পরিবেশ আর সময়ের গণ্ডির বাইরে চিন্তা করতে পারে না বিধায় সেইটা দেখতে পায় না। যদি আপনে ওপেন মাইন্ডেডই হন, তাইলে আপনারে নিয়া আপাতত কথা বলার তেমন কিছু নাই। চলেন বাকীদের নিয়া কিছু কথা বলি।
সাধারণত মানুষ তাঁর নিজের দৈনন্দিন একটিভিটি আর পারিপার্শ্বিকতাকে জাজ করে তাঁর ভেতরে প্রতিষ্ঠিত মরাল সেন্স দিয়া। এই মরাল সেন্স তাঁর সকল কর্মকাণ্ডকে ড্রাইভ করতে না পারলেও, অপরের কর্মকাণ্ড আর নিজে যা অলরেডি কইরা ফালাইছে সেগুলাকে সে তাঁর মরাল সেন্স দিয়াই ফিল্টার কইরা ভালো খারাপ নির্ধারণ কইরা ফালায়। কিছু মানুষ মরালিটি ধার করে প্রথার কাছ থাইকা অথবা বলা যায় প্রথা তাঁর উপর এইসব সেন্স একরকম চাপাইয়াই দেয়। প্রথার দেওয়া মরালিটির বেশিরভাগই হয় ফিক্সড। আর ফিক্সড মরালিটির সুবিধা হইলো, এইটা দিয়া খুব দ্রুত ভালো খারাপ নির্ধারণ কইরা কনক্লুশনে চইলা যাওয়া যায়। এতে লাইফটা একটু আরামের হয়, মরালিটি নিয়া তেমন একটা ঘিলু খাটানো লাগে না। প্রথার এই মরালিটির মূল ভাষ্য হইলো ‘মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব’। দুনিয়াতে আর যত প্রাণীকুল আর উদ্ভিদকুল আছে সবকিছুই তৈয়ার করা হইছে শুধু মানুষের আরামের জন্যে। অর্থাৎ দুনিয়ার সবকিছুই আসলে মানুষের ভোগের সামগ্রী। মানুষের এই ‘সেরা জীব’ বিষয়টার উপর ভিত্তি কইরাই প্রথা তৈরি করছে তাঁর মরালিটি। শুধু মানুষই সেরা আর প্রকৃতির বাকী সবকিছুই ধইঞ্চা, এই সেন্স মানুষরে বানাইছে ‘মানবিক বর্বর’। অর্থাৎ শুধু মানুষ ছাড়া বাকী সবকিছুরেই নিজের প্রয়োজনে ধ্বংস করা, কতল করা এবং কনজিউম করা মানুষের জন্যে জায়েজ। এতে মানুষ তাঁর নিজস্ব অধিকারের ভিত্তিতে নির্বিচারে পশু, পাখি, বন, জঙ্গল প্রিতিনিয়ত সাফ কইরা যাইতাছে। এইটা তাঁর মানুষ হিসাবে জন্মগত অধিকার! কিন্তু দুঃখজনক ভাবে মজার বিষয় হইলো, এই পশু-পাখি আর প্রকৃতির উপর চালানো এই হত্যাযজ্ঞই মানুষ মাঝে মাঝে তাঁর নিজের গোত্রের উপরও চালায়। অর্থাৎ পশু খুনের অভ্যাসের তাড়নায় সে মানুষও খুন কইরা ফালায়। তখন অবশ্য সেইটারে আমরা অমানবিক বলি।
অন্যদিকে যারা প্রথারে বুড়ো আঙুল দেখাইয়া চলে, তাঁরা আবার “সারভাইভাল অব দ্যা ফিটেস্ট” থিওরি অনুযায়ী মানুষরেই সেরা মনে করে। অর্থাৎ মানুষ সারভাইভ করতে করতে আজকে ইভ্যুলূশনারি ল্যাডারের একদম চুড়ায় উইঠা দাঁড়াইছে। তাঁদের মরাল সেন্স সাধারণত প্রথাবিরোধী হইলেও তাঁরাও মানুষের আরামের জন্যে অন্য সবকিছুরে ধ্বংস করাটারে ঘুরাইয়া ফিরাইয়া হইলেও সাপোর্ট করে। এখন প্রশ্ন হইলো মানুষ কি আসলেই সেরা? মানুষরে এই সার্টিফিকেট কে দিলো? মানুষ নিজেই নিজেরে দিলো? হ্যাঁ, দিলো। এর একটাই কারণ মানুষের ‘মন’ আছে যেইটা দিয়া সে রিজন খাটাইতে পারে। অন্য প্রাণীর যে মন নাই এইটার প্রমাণ কি? প্রমাণ হইলো মানুষ তাঁর মাথা খরচ কইরা দুনিয়ার প্রায় সকল প্রাণীকুল আর উদ্ভিদকুলরে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তাইলে, নিয়ন্ত্রণ জিনিসটা কি কোন কিছুর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে? তাবৎ দুনিয়ায় তো পুরুষরা নারীদের নিয়ন্ত্রণ করতেছে। তাই বইলা কি পুরুষ নারীর চাইতে শ্রেষ্ঠ হইয়া গেলো?
এইরকম হাজারো প্রশ্ন কইরা আপনে খোলা মন নিয়া কোন কিছুরে কোন কিছুর চাইতে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করতে পারবেন না। মানুষের অস্তিত্ব বিশাল, সীমাহীন। তারমানে অন্য প্রজাতির অস্তিত্ব এতে কোন অংশে কম হইয়া যায় না। কিন্তু সেই প্রস্তর যুগের পর থাইকাই মানুষের ঘাড়ে নিজেরে সেরা ভাবার ভূত চাপছে। আর মানুষের এই এটিটিউড তাঁরে বিধ্বংসী কইরা তুলছে। এই জন্যে মানুষ প্রকৃতিরে নিজের অস্তিত্বের অংশ মনে না কইরা, সবকিছুরে আপন করতে না চাইয়া, সে শুধু জয় করতে চায়। মানুষ সমুদ্র জয় করে, এভারেস্ট জয় করে, মহাবন আমাজনরে জয় করে। এই জয় করাকরি হইলো প্রকৃতির সাথে আমাদের এক ধরণের শত্রুতা মূলক আচরণ। এই আচরণের কারণে আমরা সবকিছুরে ভালবাসতে পারি না। আমাদের ভিতরে সবসময় জয় করার একটা এগ্রেসিভ এটিটিউড কাজ করে।
বর্তমানে দেখা যায় দুনিয়ার অনেক মানুষই প্রকৃতিরে ধ্বংস করার বিরুদ্ধে কথা কয়। যেমন আমরা আমাদের দেশের সুন্দরবন ধ্বংসের বিরুদ্ধে অনেক সোচ্চার হইয়া উঠছি। এইটা ভালো। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হইলো, এদের অলমোস্ট সবাই কোন প্রকার পশু প্রেম অথবা প্রকৃতি প্রেম থাইকা এইটার বিরোধিতা করে না। এরা জানে যে প্রকৃতি ধ্বংস হইয়া গেলে মানুষও টিকতে পারবো না। তাই তাঁরা নিজেদের অস্তিত্ব সঙ্কট নিয়া আতঙ্কিত হইয়া এইসবের বিরোধিতা করে। কারণ এদের অনেকেই সুন্দরবনের বাঘের প্রতি দরদ দেখাইলেও, রাস্তার কুকুরকে বিনা কারণে পিটাইয়া মারতে দ্বিধা করে না, কিংবা বাড়ির আঙ্গিনায় গাছপালা উজাড় করতেও দ্বিধা করে না।
এখন কথা হইলো, প্রকৃতির সাথে আসলে আমাদের সম্পর্কটা কেমন হওয়া উচিত? প্রকৃতির সাথে আমাদের সম্পর্কটা হইলো মিউচুয়াল। এইখানে কেউ কারো চাইতে শ্রেষ্ঠ না। এইখানে কোন কিছুরে জয় করারও কিছু নাই। এবং দুঃখের বিষয় হইলো এই ব্যাপারটা আমরা মিলিয়ন ইয়ার্স আগেই ভুইলা গেছি। এখন অবশ্য অনেকের কিছু কিছু মনে পড়তেছে। মানুষ সহ প্রকৃতিতে যা কিছু আছে সবকিছু মিলাই বাইজা উঠে মহাবিশ্বের মূল সুর। আর এই সুরের নাম হইলো জীবন। এই সুর তখনই বেসুরো হয় যখন মানুষ তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের দাবি নিয়া ধ্বংসযজ্ঞে মাইতা উঠে।
অগাস্ট ২৭, ২০১৬