কেমন হইব যদি বুঝতে পারেন আপনার সব অপূর্ণ স্বপ্ন, আশা, ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষা, স্বাদ-আহ্লাদ অতীতে পূরণ হইছে, এখনো হচ্ছে, ভবিষ্যতেও হইব? যদিও সময়ের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের ভাগাভাগিটা একটা ইল্যুশন মাত্র। তবে সেইটা অন্য আলোচনা। ধরেন আপনি বুঝলেন যে আপনি শুধু ঘর নামক এক ছোট্ট খাঁচায় একটা মিজারেবল লিটল শীটি লাইফ লিড করার সেই সাধারন মানুষটা না।আপনি একি সময়ে অনেক জায়গায় বিচরন করেন, একি সাথে অনেক গুলা জীবন অতিবাহিত করতেছেন। আপনি একি সময়ে মৃত আবার জীবিতও। আপনি সেই ব্যাক্তি যেইটা আপনি হইতে চাইছিলেন, একি সময়ে আপনি সেই ব্যাক্তি যেইটা আপনি হইতে চান নাই। কিন্তু দুঃখের বিষয় হইল যেইটা আপনি হইতে চান নাই শুধু সেই ব্যাক্তিটারেই আপনি ফিল করেন, অন্যটা না। কেন এমনডা হয়? এইসব প্রশ্ন বা কথাবার্তা পাগলের প্রলাপ মনে হইলেও বিজ্ঞান ঠিকি এইসব নিয়া চিন্তা করে আর মাথা খাওজায়। কোয়ান্টাম ফিজিক্সের একটা এক্সপেরিমেন্টে দেখা যায়, যখন কোন পার্টিকেলকে শুট করা হয় তখন এইটা মানুষের চোখের দৃষ্টির উপর ভিত্তি কইরা ভিন্ন ভিন্ন আচরণ করে। যখন কেউ তাকাইয়া থাকে তখন নরমাল আচরণ করে, কিন্তু না তাকাইলে এইটা একি সময়ে অসংখ্য কপি হইয়া সকল সম্ভাব্য রাস্তা দিয়া গমন করে যা আপনার একি সময়ে অনেক গুলা জীবন অতিবাহিত করার ব্যাপারটাকে সাপোর্ট করে, যদিও আপনার জীবনের বিষয়ডা এখনো প্রমাণ হয় নাই। বিজ্ঞানী শ্রডিঞ্জার একটা বিলাই নিয়া এক্সপেরিমেন্ট কইরা দেখাইছিল যে বিলাইডা একি সময়ে মৃত ও জীবিত দুইটাই। এই থিওরিটারে বলা হয় “শ্রডিঞ্জারস ক্যাট”। তাছাড়া জাপানী বিজ্ঞানী মিশিও কাকুর স্ট্রিং থিওরি আর প্যারালাল ইউনিভার্সের আইডিয়া উপরোক্ত প্রশ্ন গুলারে আরও শক্ত কইরা দেয়।
আসেন এইবার মুভিতে যাই। মুভির নাম মি. নোবডি হওয়ার কারন মুভির কেন্দ্রীয় চরিত্রটা আপনি নিজেই আর আপনি আসলে কেউ না। আপানারে মানুষ যেই নামে ডাকে সেইটা আপনার আসল নাম না, আপনার আসল নাম হইল মি. নোবডি। যেহেতু আপনি কেউনা তারমানে আপনি সবকিছু। তাই উপরোক্ত পাগলের প্রলাপের মত কথাবার্তার সবগুলাই আপনার জীবনে ঘইটা থাকে। ভাবতাছেন এইগুলা উল্টা পাল্টা কি কইতাছি? মুভিটা দেইখা এইসব কথা বার্তা গুলা মিলাইয়া লওয়ার ভার আপনার উপর বর্তাইল। মুভির প্লটটা অত্যন্ত জটিল। কারন পুরা সাবজেক্ট ম্যাটারটাই জটিলতর। তবে বিষয়ডা একি সাথে অনেক মজার আর থ্রিলিংও বটে। মুভিতে দেখায় কিভাবে একজন মানুষ অনেকগুলা পসিবল লাইফ একি সাথে লিড করে। মুভিতে আপনি স্ট্রিং থিওরির এপ্লিকেশন খুইজা পাইবেন। পাইবেন জটিল দার্শনিক ও আধ্যাত্মিক জীবন তত্ত্ব। দেখবেন অসাধারন সিনেমাটোগ্রাফি। মুভিটা পালটাইয়া দিতে পারে আপনার কনভেনশনাল জীবন দর্শন।আপনারে নিয়া যাইতে পারে জীবনেরও পেছনে আরেক জীবনে। মুভিটা শুরু হয় একটা ছোট্ট পোলার বাপের সাথে থাকবো না মায়ের সাথে থাকব এইরকম দ্বিধান্বিত চয়েস মেকিং এর কনফিউশন নিয়া। পরে দেখা যায় পোলাডা এট দ্যা সেইম টাইম বাপের লগে ও মায়ের লগে দুই জায়গাতেই থাকে। এইখানে দার্শনিক এপ্লিকেশনটা হইল আমাদের জীবনের চয়েস মেকিং নিয়া। আমাদের জীবন প্রায় সময়ই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড় নেয় যা আমাদের জীবনের কোর্স পালটাইয়া দেয়। এইসব মোড় নেয়ার মুহূর্ত গুলাতে আমরা চয়েস মেকিং করতে গিয়া কঠিন দ্বিধার মইধ্যে পরি। শেষমেশ একটা ডিসিশান নিয়া নেই। কিন্তু এই ডিসিশানটারে নিয়া সারা জীবন রিগ্রেট করি। ভাবি, যদি অন্যভাবে নিতাম তাইলে তো অন্য রকম হইত। আহারে কেন নিলাম না! মুভিটা এই আফসোসটারে আপনার জীবন থাইকা দূর কইরা দেওয়ার চেষ্টা করছে। মুভির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও চুম্বকীয় ডায়লগ হইল, “Every path is the right path. Everything could’ve been anything else. And it would have just as much meaning.” অর্থাৎ জীবনে সঠিক পথ ভার্সেস বেঠিক পথ বলে কিছু নাই। সব পথই সঠিক। আপনি জীবনে কোন পথে গেলেন সেইটা ব্যাপার না। আধ্যাত্মিকতা এইখানে বলে, পথটা ব্যাপার না, ব্যাপার হইল আপনি যেই পথে গেছেন সেই পথ উপভোগ করছেন কিনা, উপলব্ধি করছেন কিনা জীবনের গভীরতাকে। সবকিছুই যেকোন কিছু হইতে পারত। এবং জীবন যেদিকেই যায় তা সমান অর্থ ও গুরুত্ব বহন করে। সুতরাং আপনার বর্তমান জীবন নিয়া আফসোস করার কিছু নাই। জীবনের পথে হাঁটেন, হাসেন আর মাঝে মাঝে জিরান। উপভোগ করেন জীবনকে। কিন্তু কর্পোরেশণের কথায় দৌড়াইয়েন না। তাইলে হাপাইয়া পরবেন।
মুভির নন লিনিয়ার স্টোরি লাইন আপনার মেজাজ গরম কইরা দেওয়ার সম্ভাবনা আছে। তবে একটু ক্লোজলি দেখেলেই বুঝবেন পুরা স্টোরিটা কতটা টুইসটেড আর মজার। দর্শন, আধ্যাত্মিকতা আর সাইন্স এই তিনটা জিনিসের স্বাদ পাইবেন এই মুভিতে। অভিনয় শিল্পী গুলার অভিনয় দেইখা মুগ্ধ না হইয়া পারবেন না। পরিচালকরে স্যালুট এইরকম একটা মুভি বানানোর লাইগা।