আপনি কি জানেন গড এখনো জীবিত? তিনি তাঁর দশ বছর বয়সী মেয়ে ও বউ নিয়া বেলজিয়াম এর ব্রাসেলস এ একটা ছোট এপার্টমেন্ট এ থাকেন? জানেন বোধয়। তবে আমি জানতাম না। যারা আমার মত জানেন না, আসেন জাইনা লই। মুভিতে দেখায় গড তাঁর বউ মাইয়া লইয়া রহস্যজনক একটা এপার্টমেন্টে থাকেন। এই এপার্টমেন্টের বৈশিষ্ট হইল “নো ইন, নো আউট”। কেউ ভিত্রে ঢুকতেও পারে না বাইরও হইতে পারে না। যেহেতু গড ফ্যামিলি তাই এইটা বিশেষ কোন ব্যাপার না। ঘরে আসবাবপত্র আছে কিন্তু ভিতরে কোন জিনিসপত্র নাই। যেমন, ফ্রিজ আছে কিন্তু খালি। যখন গডের বিয়ার খাইতে মন চায় তখন ফ্রিজের দরজা প্রথমবার খুললে কিছুই নাই। কিন্তু পরের বার খুললে ফ্রিজ ভর্তি বিয়ার। বুঝতেই পারছেন গডলি ব্যাপার স্যাপার! গড তাঁর অফিসিয়াল কাজ নিজস্ব কম্পিউটারে সারে। তাঁর অফিস রুমে অন্য কারো ঢুকা নিষেধ। গড ঐ কম্পিউটারে বইসাই সব কিছু সৃষ্টি করেন। গডের বউ কক্ষনো কোন কথা বলে না। শুধু ঘর মুছে, সেলাই করে আর টিভিতে বেইসবল খেলা দেখে। এই ঘরে টিভিতে কেবল খেলা দেখাই জায়েজ, অন্য কিছু না। প্রচণ্ড বদমেজাজি গডের কম্পিউটারে বইসা, বউ মাইয়ারে শাসাইয়া দিনকাল চইলা যাচ্ছিল। কিন্তু সমস্যা হইল গড কম্পিউটারে যতই হাঁস মুরগি, গরু ছাগল বানায় না কেন তাতে তাঁর মন ভঁরে না। মনে হয় কি জানি মিসিং। হঠাৎ গডের মনে হইল নিজের আকৃতির মানুষ বানাইবে। যেই বুদ্ধি সেই কাজ। বানাইল এডামরে, তারপর ইভরে। বানাইল দুনিয়া। বানাইল অনেক নিয়ম কানুন। যেইগুলারে আমরা প্রাকৃতিক নিয়ম বইলা জানি। যেমন একটা নিয়ম বানাইল কেউ কাউনটারে লাইনে দাঁড়াইলে সব সময় তাঁর পাশের লাইনটা আগে চলবে অথবা কেউ রুটিতে জেলি লাগাইতে গেলে জেলি সব সময় উল্টা পিঠে লাগবে অথবা সবচেয়ে প্রিয় কাচের বাসনটি হাত থাইকা পইড়া ভাঙবেই। এইভাবে নিজের সৃষ্ট মানুষরে সাফার করাইয়া গড বড়ই আনন্দ লাভ করিতে লাগিল। তারপর সমস্যা বাঁধাইল তাঁর পিচ্চি মাইয়ডা। পিচ্চিটা ভয়ংকর কিউট ও পাঁজি। বেয়াদবও বটে। অন্তত গডের চোখে। কারন সে তাঁর কথা শুনে না। যেমন শুনে নাই তাঁর বড় ছেলে যিশু খ্রিস্ট। শেষে ক্রুশ বিদ্ধ হইয়া মরল পোলাডা । গড এখনো তাঁর মরা ছেলেরে ঘৃণা করে। পিচ্চি মাইয়ার বাঁধানো জটিল এক ঝামেলা নিয়াই আগাইতে থাকে মুভির কাহিনী।
পুরা মুভিটাই হাস্যরসে ভঁরা। মুভিতে ধর্মকে ছোট কইরা দেখাইল কিনা সেই তর্ক মুভি দেইখা নিজের লগে নিজে করা উত্তম। মুভির মূল আকর্ষণ হইল উচ্চ লেভেলের হিউমার আর রিলিজিয়ানের উপর ডার্ক স্যাটায়ার। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বসবাসকারী মানুষের গডের কনসেপ্ট ও পুরুষতান্ত্রিক হয়। গডের কথা মনে হইলেই সবার কল্পনায় একজন দাড়িওয়ালা বয়স্ক লোককে আসমানি সিংহাসনে বসা অবস্থায় ভাসে। এই মুভিতে অবশ্য গডের কোন দাড়ি নাই। বরং একটা থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পইড়া ঘুরে আর নিজের সৃষ্ট মানুষের হাতে মাইর খায়। রিলিজিয়ান আর গড ছাড়াও মুভিতে স্যাটায়ার করা হইছে মডার্ন সোসাইটি আর তাতে বসবাসকারী মানুষের মিজারেবল লাইফের উপর। দেখানো হইছে মরণের প্রতি মানুষের আচরণ। গডের ফাজিল মাইয়াডা একবার দুনিয়ার সবার ফোনে সবার মৃত্যু তারিখ এসএমএস কইরা দেয়। নিজের মৃত্যু তারিখ হাতে পাইয়া কেউ হাসে, কেউ কাঁদে, কেউ নাচেও। ধরেন আপনি জানতে পারলেন মাস খানেকের মধ্যেই আপনি মইরা যাবেন অথবা জানলেন আপনার বৃদ্ধ বাপ আরও পঞ্চাশ বছর বাঁচবে কিন্তু আপনি বাঁচবেন আর মাত্র এক সপ্তাহ অথবা ঘণ্টা পাঁচ পরেই আপনার মরণ শিউর। তখন জীবনের প্রতি আপনার রিয়েকশন কেমন হবে ভাবেন! আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার দেখানো হইছে সেইটা হইল করপোরেশন এর ব্যবসা। মানুষের মরণ নিয়েও কিভাবে ব্যবসা করে। আল্লার দুনিয়ায় এমন কোন সেক্টর নাই যেইখানে করপোরেশন এর ব্যবসায়িক স্কিম নাই। আমি শিউর কেয়ামতের দিনেও করপোরেশন তার ব্যবসায়িক নতুন স্কিম বাইর করবে “ফর দ্যা ফাইনাল ডে”।
মুভির সিনেমাটোগ্রাফি চমৎকার। যাগো হজমশক্তি বেশি এবং ডার্ক হিউমার রিসিভ করার রিসিভারটা ঠিকমত কাজ করে তারা মুভিটা নিয়া বইসা পরতে পারেন। ঝিম মাইরা বইসা পুরা মুভিটা দেখলে আপনার ভাণ্ডারে একটা চমৎকার সুখময় সিনেমাটিক অভিজ্ঞতা যোগ হইবে। গ্যারানটিড।