ট্রাফিক জ্যাম, দুর্গন্ধ, ময়লা আবর্জনা, চাকুরীর আকাল, মারামারি-হানাহানি, হরতাল অবরোধের এই শহর থাইকা আপানারে যদি একটা এসি বাসে উঠাইয়া দেওয়া হয়। বাসটা যদি আপনারে একটা আইসোলেটেড জায়গায় নামাইয়া দেয়। নামার লগে লগেই যদি একজন গাড়ি নিয়া আইসা আপানারে রিসিভ কইরা নেয় যেইখানে সে আপানার লাইগা ওয়েলকাম ব্যানারও লাগাইয়া রাখছিল। তারপর সে যদি আপনারে একটা ছোট্ট পরিচ্ছন্ন সুন্দর শহরে নিয়া গিয়া একটা হ্যান্ডসাম সেলারি যুক্ত চাকরির অফার দেয় লগে থাকার লাইগা একটা সুন্দর এপার্টমেন্টও দেয়। এবং চাকরিতে জয়েন কইরা দেখলেন যে বিশাল আলিশান অফিস, আপনার অফিস রুমটাও গরজিয়াস, তার ওপর প্রথম দিনেই এক মাসের এডবান্স বেতন দিয়া দিসে। যদি ঐ শহরে বসবাসের কিছুদিনের মধ্যেই এক সুন্দরী মাইয়া আপানার গার্ল ফ্রেন্ড বইনা যায় তাইলে বিষয়ডা কেমন হইব? আপানার কেমন লাগব? আপানাগো যেমনই লাগুক আমার যে কিরাম লাগবো সেই অনুভূতি এই রিভিওর ভিত্রে বইলা বুঝানো সম্ভব না!
মুভির কেন্দ্রীয় চরিত্রের সাথে এইরকম ঘটনা দিয়াই মুভি কাহিনী শুরু হয়। তয় কেন্দ্রীয় পোলাডা এই শহরে আসার আগে ঢাকা শহরের মত কোন শহরে ছিল কিনা এই ব্যাপারটা ক্লিয়ার না। সে আসলে ঠিক কইথাইকা আসছে সেইটাও আনক্লিয়ার। যাই হোক এইরকম ভাবে তার দিন কাল অত্যন্ত সুখে কাটতেছিল। শহরের সবাই সুখী। দুঃখ বইলা কোন কিছুর অস্তিত্ব এইখানে নাই। সবাই সবসময় হাসে, কখনই কাঁদে না। অফিসের বস প্রতিদিন আইসা খবর লইয়া যায়। কিন্তু এতসব কিছুর মইধ্যে একটা বড় ধরনের ঘাপলা লুকাইয়া আছে। আস্তে আস্তে সেই বিষয়ডা কেন্দ্রীয় পোলাডার কাছে স্পষ্ট হইতে থাকে। সে খেয়াল করে এই শহরে কোন বাচ্চা কাচ্চা নাই। নাই মানে একটাও নাই। কোন দিন কোন বাচ্চার কান্না বা হাঁসি কোনডাই সে শুনতে পায় নাই। এক সময় বুঝল এইখানে কেউ মরেও না। আউট অব বোরডেম একদিন সে কাগজ কাটার মেশিনে আঙ্গুল ঢুকাইয়া দেয়। আঙ্গুল হারাইয়া রক্তারক্তি অবস্থায় জ্ঞান হারায়। পথে জ্ঞান ফিরে দেখে হাতে ব্যান্ডেজ, বাসায় গিয়ে ব্যান্ডেজ খুলে দেখে আঙ্গুল ঠিক আগের মতই আছে, যেন কিছুই হয় নাই। আরও অদ্ভুত ব্যাপার হইল এই শহরের বারে গিয়া আপনি যতই মদ খাইবেন, মাতাল হইবেন না। মদ বানানো হইছে এমনভাবে যাতে কেউ মাতাল হইয়া আবেগ প্রকাশ করতে না পারে। এইখানে বিনোদন বলতে আছে শুধু ডিনার পার্টি। এই পার্টি আসলে কোন পার্টি না। সবাই এসে চুপচাপ খায়, সিলি কিছু বিষয় নিয়া হালকা হাসে, তারপর বাসায় চইলা যায়। প্রত্যেক দিন এইরকমই চলে। এইখানে সেক্স কইরা কেউ কখনও অর্গাজমে পৌছাইতে পারে না। কোন মজা নাই। কাউরে কিস করা অবস্থায় দেখলে মনে হয় যেন কোন জম্বি কিস করতাছে। এইরকম আরও অনেক উদ্ভট ঘটনায় স্বর্গরুপী এইরকম একটা শহরে থাইকাও পোলডার লাইফটা হেল হইয়া যায়। একসময় সে প্রশ্ন করা শুরু করে অথরিটিকে। শুরু হয় জটিলতা। এইসব জটিলতা নিয়া আগাইতে থাকে মুভির কাহিনী।
মুভিটা হইল নরওয়িয়ান সারিয়াল কমেডি। মুভির শুরুতে বাস থাইকা নামার পরেই আপনি ঢুইকা পরবেন একটা পরাবাস্তব জগতে। মুভিতে যা দেখানো হইছে তারে কেউ বলে রিলিজিয়ান হেভেন এর উপর স্যাটায়ার, কেউ বলে মডার্ন সোসাইটির ক্রিয়েটেড আর্টিফিশিয়াল হেভেন এর উপর স্যাটায়ার। তবে আমার কাছে দুইটাই মনে হইছে। রোবটিক মিডেলক্লাস মডার্ন লাইফ হইল একটা জলজ্যান্ত জাহান্নাম! কিন্তু এইডারে স্বর্গ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার আপ্রাণ চেষ্টা করা হয় ইনডিভিজুয়াল লেভেল থাইকা ন্যাশনাল লেভেল পর্যন্ত। যা আমরা সহজে অনুধাবন করতে পারিনা। সবাই এক অদৃশ্য স্বর্গ পাওয়ার আশায় বইসা থাকে। দুনিয়াতে না হইলেও পরকালে। কেউ একজন বলছিল, সম্ভবত এইডা কোন গানের কথা, “স্বর্গ হইল সেই জায়গা যেখানে আসলে কিছুই ঘটে না।“ মানুষ কিভাবে ন্যাচারাল আবেগ হারাইয়া রোবটিক যন্ত্রতে পরিণত হইতেছে সেইটা এই মুভির গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মুভির সেটিং অন্যরকম। সচরাচর যেরকম দেখেন সেরকম না আর কি! এনডিংটাও ভিন্ন রকম। ভিন্ন ধাঁচের কাহিনী আর সারিয়াল অভিজ্ঞতার জন্য মুভিটা নিয়া বইসা পরতে পারেন। সিনেমাটিক মজাটাও পাবেন, সাথে চিন্তার খোরাক।