মুভি দ্যা কিউরিয়াস কেইস অব বেঞ্জামিন বাটন (২০০৮)— একটা কিউরিয়াস মাস্টারপিস

আপনার কি মনে হয় যে জীবন সুন্দর? জীবন চমৎকার? মাঝে মধ্যে হয়তো মনে হয়। কিন্তু বেশীরভাগ সময়ই আপনার কাছে  জীবনের সবকিছুই নিজের প্রতিকূলে আছে বইলা মনে হয়। এই মনে হওয়ার পরেও জীবনের প্রতি আপনার একটা এডিকশন আছে, যা আপনারে বাঁচাইয়া রাখছে। জীবনের বেশীরভাগটাই দুঃখ কষ্টে ভরপুর থাকলেও জীবনের প্রতি নেশাটার কারণে আপনার খালি বাইচা থাকতে মন চায়। আবার মাঝে মধ্যে মইরা যাইতেও মন চায়। মইরা যাওয়ার চিন্তাটা কারো মাথায় শক্ত ভাবে গাইথা গেলে আর জীবনের উপরে ত্যক্ত বিরক্ত হইয়া গেলে, তখন কেউ কেউ সুইসাইড কইরা বসে। এখন জীবন সুন্দর নাকি অসুন্দর এইটা আসলে আসল প্রশ্ন না। কারণ জীবন সবসময় সুন্দর অসুন্দরের বাইরে থাকে। জীবন জীবনই। আসল প্রশ্ন হইলো, আমাদের কাছে কেন বেশীরভাগ সময় জীবনরে অসুন্দর, কুশ্রি এবং পেইনফুল মনে হয়? এবং সবচাইতে বড় কথা, জীবনের কাছে কেন আমাদের নিজেরে এত অসহায় লাগে? এই প্রশ্নের উত্তর প্রত্যেকেই আলাদা আলাদা কইরা দিতে পারবে, কারোটার সাথে কারো উত্তর মিলব না। কারণ একেক জনের লাইফের স্পেসিফিক একেক রকম। কিন্তু তারপরেও এইখানে একটা কমন উত্তর চইলা আসে। সেইটা হইলো, জীবনরে আপনে যখন জীবনের মত কইরা না দেইখা কেবল আপনার মত কইরা দেখবেন, তখনই সেইটারে বড় কুৎসিত মনে হইব। এখন এই দেখাদেখিটা আপনে ক্যামনে করেন, সেইটাও হয়তো আপনে ঠিকমত জানেন না, হয়তো জানেন। না জানলে আপনারে জানানো, আর জানলে আপনারে তা আবার মনে করাইয়া দেওয়ার জন্যই এই মুভি।

এখন ধরেন, আপনে আশি বছর বাঁচবেন। একদম শিউর। কিন্তু আপনার জন্ম হইলো ঠিক আশি বছর বয়সে। অর্থাৎ আপনে জন্মের পর থাইকা সময়ের পেছনের দিকে যাইতে থাকবেন। মানে উল্টা জীবন কাটাইবেন আর কি! জন্মের পরে দেখা যাইব, আপনার শরীরের হাড় মাংস সব আশি বছরের বুড়াদের মত। যখন বাচ্চারা মাটিতে হামাগুড়ি দিয়া খেলা করে, তখন আপনে বুড়াদের মত হুইল চেয়ারে বইসা থাকবেন। আপনের বাপ মাও আপনারে ইতিমধ্যে এবানডন কইরা দিছে। এইরকম বাপ মা ছাড়া একটা উল্টা জীবনে আপনে যখন আটকা পইড়া যাইবেন, যেইখানে আপনার আশেপাশের সবার জীবনই “নরমাল”, তখন কি আপনার কাছে জীবনরে সুন্দর মনে হইব? খুব সম্ভবত হইব না। বরং আপনার মনে হইতে পারে যে আপনে অভিশপ্ত, আপনে প্রকৃতির এক বিকৃত সৃষ্টি। মনে হইব, জীবন জঘন্য।

এইরকম হইলে জীবন আসলে কেমন হইতে পারে সেইটা বুঝার জন্যে চলেন আপনারে এখন মুভিতে নিয়া যাই। মুভির নাম ‘দ্যা কিউরিয়াস কেইস অব বেঞ্জামিন বাটন’। নামের অর্থটা এইখানে সহজ। বেঞ্জামিন বাটন হইলো মুভির কেন্দ্রীয় চরিত্র। আর এইখানে দেখানো হইছে তাঁর কিউরিয়াস উল্টা জীবনের কাহিনী। মুভির শুরুতে দেখা যায়, এক মায়ের পেট থাইকা এক শিশুর জন্ম হইছে, যেই শিশু দেখতে বয়স্কদের মত। এই শিশুর জন্মের লগে লগেই শিশুর মা মইরা যায়। এইরকম বয়স্ক শিশু দেইখা শিশুর বাপ এইটারে ডেমন টাইপের কিছু একটা মনে করে। তাই সে শিশুটারে একটা নার্সিং হোমের দরজায় চুপিসারে রাইখা চইলা আসে। ওইখানেই শুরু হয় বেঞ্জামিন বাটনের কিউরিয়াস লাইফের কিউরিয়াস যাত্রা। প্রথমে ডাক্তার আইসা বইলা যায়, এই বাচ্চা বেশিদিন বাঁচব না। কিন্তু বেঞ্জামিন ডাক্তাররে ভুল প্রমান কইরা বাইচা থাকাটা চালাইয়া যায়। পরে এক সময় অবাক হইয়া আবিস্কার করে যে সে আসলে দিনে দিনে বুড়া থাইকা জুয়ান হইতেছে। সে তখন বুঝতে পারে যে তাঁর জীবন আসলে উল্টা দিকে চলতাছে। কোন বাচ্চাই তাঁর সাথে খেলাদুলা করতে আসে না। সে বড় একলা হইয়া থাকে। এক সময় ডেইজি নামের এক পিচ্চি মাইয়া তাঁর সাথে মিশা শুরু করে। মাইয়াটা তাঁর বন্ধু হইয়া যায়, এক সময় দুইজন দুইজনের প্রেমেও পইড়া যায়। দুইজনই জানে যে দুইজনের বয়স উল্টা দিকে যাইতাছে, অর্থাৎ ডেইজি যখন বুড়া হবে, বেঞ্জামিন তখন শিশু হইয়া যাবে। তারপরেও দুইজন দুইজনের প্রেমে পইড়াই থাকে। বেঞ্জামিনের বয়স কমার সাথে সাথে সে জীবনে বিভিন্ন এডভেঞ্চারে জড়াইয়া পড়ে। জীবনরে সে পসিবল সবগুলা এঙ্গেল থাইকাই উপভোগ করার চেষ্টা করে। তাঁর উল্টা জীবনের সুখ, দুঃখ, এডভেঞ্চার, টুইস্ট আর গভীর প্রেম নিয়া আগাইতে থাকে মুভির কাহিনী।

এই মুভির রেকারিং থিমটা হইলো, মানুষের জীবনে বয়সটা আসলে কোন ব্যপার না। বয়স হইলো শুধুই একটা নাম্বার। আপনে কতদিন বাঁচলেন সেইটা আসল কথা না, যতদিন বাঁচলেন ততদিন আপনে আসলেই বাঁচলেন কিনা এইটাই আসল কথা। এখন আপনে জীবনে আসলেই বাঁচতে চাইলে আপনার কি করতে হবে? বেঞ্জামিনের মত বয়সরে বুড়া আঙ্গুল দেখাইয়া আপনার নিজের চয়েস মেইক করতে হবে। আপনে যখন জীবনরে জীবনের মত কইরা দেখা শুরু করবেন, তখন জীবনের সবগুলা এঙ্গেলেই প্রবেশ করার একসেস জীবন আপনারে দিয়া দিব। আপনার বয়স কত, শারীরিক অবস্থা কেমন, আপনে দেখতে কেমন, আপনার অর্থনৈতিক অবস্থা কি, সামাজিক অবস্থা কি এর কোন কিছুই তখন আপনারে জীবনের সুধা পান করা থাইকা বিরত রাখতে পারব না। বেঞ্জামিন জানে যে, যেই মাইয়ারে সে ভালোবাসে একদিন তাঁর বয়স কমতে কমতে এই মাইয়ার কোলে শিশু অবস্থায় তাঁরে মরতে হইব। তারপরেও সে ভালবাসতে পিছপা হয় নাই। এই মুভিটা মূলত আমাদের জীবনের চয়েস, চয়েস নিয়া আমাদের জীবন আর জীবনের অসীমতাই আমাদেরকে চোখে আঙ্গুল দিয়া দেখাইয়া যায়।

বলা যায় ,মৃত্যু, ক্ষমা অথবা ভালোবাসা এই মুভিতে জোরালো ভাবে দেখাইলেও, এইখানে এইগুলা মুখ্য বিষয় না। এই মুভিতে যা মুখ্য তা হইলো ‘জীবন’। আমাদের জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত, প্রতিটা ডিটেইল এবং প্রতিটা অভিজ্ঞতাই হইলো জীবন। এইখানে প্রতিটা মুহূর্তই জীবনরে সমানভাবে ধারন করে। এবং বেঞ্জামিনের জীবনের মধ্য দিয়া দেখানো আমাদের জীবনের প্রত্যেকটা মুহূর্তের সুন্দরতম পোরট্রেয়াল হইলো এই মুভি।

মুভিতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করছে ব্র্যাড পিট। সম্ভবত ব্র্যাড পিট তাঁর জীবনের সেরা অভিনয়টা দেখাইছে এই মুভিতেই। মুভির গল্পটা নেয়া হইছে ১৯২২ সালে লেখা স্কট ফিটজগারেলড এর একই নামের ছোট গল্প থাইকা। মুভিটা হইলো এই ছোট গল্পের ‘লুজ এডাপটেশন’। নায়িকা হইয়া এই মুভিতে অভিনয় করছে কেইট ব্লাঞ্চেট।

মুভিতে যেহেতু একটা গভীর প্রেমের কাহিনী এবং একটা আনরিয়াল লাইফ প্যাটার্ন দেখানো হইছে, তাই মুভিটারে ফরমালি বলা হয় ‘রোম্যান্টিক ফ্যান্টাসি ড্রামা’। মুভির সিনেমাটিক মূল আকর্ষণ হইলো মুভির ইউনিক কাহিনী আর মেকাপ। মেকাপের জন্যে এই মুভি অস্কারও পাইছে। মেকাপ ছাড়াও এই মুভি অস্কার পাইছে আরও দুইটা ক্যাটাগরিতে। মুভির রান টাইম দুই ঘণ্টা পঞ্চাশ মিনিট। মুভিটা নাকি অনেক লম্বা আর স্লো এইরকম অভিযোগ মুভি নিয়া অনেকেই করছে। কিন্তু আসলে তা না। এই মুভির এই লেন্থটাই পারফেক্ট। মুভিটারে নিয়া অনেক দর্শকের অনেক অভিযোগ থাকলেও, মুভিটা আসলে টাইমলেস। এই মুভি ব্র্যাড পিটরে ‘বেঞ্জামিন বাটন’ হিসাবে অমর কইরা রাখব। মুভির ক্রিটিকাল রেস্পন্স অনেক পজিটিভ হইলেও অডিয়েন্স থাইকা অনেক নেগেটিভ রেসপন্স পাইসে। বেশীরভাগভাগ সময় অডিয়েন্স থাইকা এইরকম রেস্পন্স আসার মূল কারণ হইলো মুভির মূল সুরটা ধরতে  না পারা। মুভিটার আইএমডিবির রেটিং ৭.৮। রটেন টমেটোতে ৭২% ফ্রেশ।

রিভিও শেষ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *