অশোরে একবার বলা হইছিল, আপনেই হইলেন এই ধরায় প্রথম পুরুষ যে নারীদেরকে পুরোপুরি বুঝতে পারছে এবং গ্রহণ কইরা নিতে পারছে। দয়া কইরা নারীদের ব্যপারে কিছু বলেন।
অশো বলছিল—
একজন নারীকে ভালোবাসা যায়, বোঝা যায় না। এই ব্যপারটা আপনারে প্রথমে বুঝতে হইব।
জীবন এতটাই রহস্যজনক যে আমাদের হাত এইটার চুড়ায় কখনই পৌঁছাইতে পারে না, আমাদের চোখ এইটার রহস্যের গভীরতাটা ঠিক দেখতে পায় না। অস্তিত্বের এক্সপ্রেশনটা বুঝতে পারা — পুরুষ অথবা মহিলা অথবা বৃক্ষ অথবা জন্তু-জানোয়ার অথবা পাখ-পাখালিরে বুঝতে পারা — এইগুলা হইলো বিজ্ঞানের কাজ, এইগুলা কোন আধ্যাত্মিক লোকের কাজ না। আমি কোন বিজ্ঞানী না। বিজ্ঞান নিজেও আমার কাছে একটা রহস্য বইলাই ঠেকে, এবং বর্তমানে বিজ্ঞানীরাও এই জিনিসটা বুঝতে শুরু করছে — ব্রহ্মাণ্ডে যা কিছু জানার আছে তাঁর সবই একদিন বিজ্ঞান জাইনা ফালাইব এই ধরণের একগুয়ে, ফালতু এটিটিউড বিজ্ঞান ইতিমধ্যেই ছাইড়া দিছে।
বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের সাথে সাথে বিজ্ঞানের পুরা ইতিহাস একটা সম্পূর্ণ ভিন্ন রাস্তায় হাঁটা শুরু করছে। কারণ আইনস্টাইন যতই ম্যাটারের গভীরে গেছিল, তাঁর মাথার তারগুলা ততই প্যাচ খাইছিল। সব ধরণের যুক্তি-বুদ্ধি তখন পেছনে পইড়া গেছিলো। আপনে চাইলেও অস্তিত্বের লগে জোর গলায় কথা কইতে পারবেন না, কারণ অস্তিত্ব আপনার যুক্তির ধার ধারে না। যুক্তি জিনিসটা মানুষের তৈরি।
আইনস্টাইনের জীবনে একটা সময় আসছিলো যখন সে তাঁর যুক্তির উপরে জোর দিবে কিনা সেইটা নিয়া দ্বিধায় পইড়া গেছিলো………… কিন্তু সেইটা তো হইব বোকামি। যুক্তি মাইনা চলাটা মানবিক, কিন্তু এইটা বোধশক্তিসম্পন্ন কোন ব্যাপার না। আপনে যদি আপনার লজিকের উপরেই জোর দেন, বিচারশক্তির উপরেই জোর দেন, এতে অস্তিত্ব আপনার এই লজিকের উপর ভিত্তি কইরা পরিবর্তিত হইয়া যাইব না; বরং আপনে আপনার লজিকরে অস্তিত্বের মত কইরা পরিবর্তন কইরা নিতে হইব। এবং যতই আপনে অস্তিত্বের গভীরে প্রবেশ করবেন, অস্তিত্ব আপনার কাছে ততই রহস্যজনক হইয়া ধরা দিব।
একটা সময় আসব যখন আপনারে আপনার সব লজিক ছুইরা ফালাইয়া সিম্পলি প্রকৃতিতে কান পাইতা শুনতে হইব। এইটারে আমি বলি আল্টিমেট আন্ডারস্ট্যান্ডিং — কিন্তু সাধারণত আপনে আন্ডারস্ট্যান্ডিং বলতে যেইটা বুঝেন সেইটার কথা আমি বলতেছি না। বিষয়টা এমন যে আপনে জানেন, আপনে অনুভব করেন, কিন্তু কি জানেন আর কি অনুভব করেন সেইটারে বর্ণনা করার কোন পন্থা অথবা কোন শব্দমালা নাই।
পুরুষ একটা রহস্য, নারী একটা রহস্য, যা কিছুর অস্তিত্ব আছে সবই একটা রহস্য — আর এই রহস্যটারে বর্ণনা করার জন্যে আমরা যত চেষ্টাই করি তাঁর সবই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হইব।
ক্রিস্টমাসে নিজের ছেলের জন্যে খেলনার দোকানে গিফট কিনতে যাওয়া এক ভদ্রলোকের কথা আমার এখন মনে পইড়া গেল। লোকটা ছিল খুব নামকরা গণিতবিদ, সুতরাং দোকানদার স্বাভাবিকভাবেই একটা জিগ স পাজল (jigsaw puzzle) উনারে বাইর কইরা দিল। ঐ গণিতবিদ দোকানে দাঁড়াইয়াই পাজলটা মিলানোর চেষ্টা শুরু করলো… পাজলটা ছিল খুবই সুন্দর। ভদ্রলোক চেষ্টা কইরা যাইতেই থাকল, একটা সময় লোকটা ঘাইমা গেল। লোকটার জন্যে পরিস্থিতিটা ধীরে বিব্রতকর হইয়া উঠতে লাগলোঃ অন্যান্য কাস্টমার এবং দোকানদার সবাই মিলা উনার দিকে তাকাইয়া আছে আর উনি পাজলটা কিছুতেই মিলাইতে পারতেছে না।
অবশেষে উনি এইটা মিলানোর আশা ছাইড়া দিয়া দোকানদারের উপরে চিল্লাইয়া উঠলোঃ “আমি একজন গণিতবিদ আর আমিই এইটা মিলাইতে পারি নাই, তাইলে আমার ছোট্ট ছেলেটা এইটা মিলাইব ক্যামনে?”
দোকানদার উত্তর দিল, “ আপনে বুঝতেছেন না। এইটা এমনভাবে বানানো হইছে যাতে কেউই এইটা মিলাইতে না পারে — সে হউক গণিতবিদ অথবা সাধারণ কেউ।”
গণিতবিদ জিজ্ঞেস করলো, “কেন এইটারে এইভাবে বানানো হইছে?”
দোকানদার উত্তর দিল, “এইটারে এইভাবে বানানো হইছে যাতে কইরা একটা বাচ্চা জীবনের শুরুর দিকেই বুঝতে পারে যে জীবন কোন মিলানোর জিনিস না, জীবন বোঝারও জিনিস না।”
আপনে জীবনরে যাপন করতে পারবেন, জীবনের আনন্দে ডুইবা থাকতে পারবেন, জীবনের রহস্যটার সাথে এক হইয়া যাইতে পারবেন, কিন্তু এইগুলা বাদ দিয়া জীবনরে আপনে খালি বুঝার চেষ্টা করবেন আর দেখার চেষ্টা করবেন এইটা কোনভাবেই সম্ভব না।
আমি আমারেই ঠিকভাবে বুঝি না। আমার কাছে দুনিয়ার সবচাইতে বড় রহস্য আমি নিজেই।
একজন মহিলা একবার এক পুলিশের কাছে গিয়া নালিশ করলো, “অফিসার, ঐ যে কোণায় লোকটা দাঁড়াইয়া আছে সে আমারে খুবই বিরক্ত করতেছে।”
পুলিশ বলল, “আমি তো পুরা সময় ধইরাই লোকটারে দেখতাছি। কই লোকটারে তো একবারও আপনার দিকে তাকাইতে দেখলাম না।”
মহিলা বলল, “এইটা কি বিরক্তিকর একটা ব্যপার না?”
তর্জমা। শরিফুল ইসলাম। অক্টোবর ২৯, ২০১৬।
সূত্রঃ অশো টাইমস, অশো— দ্যা গ্রেট পিলগ্রিমেজঃ ফ্রম হেয়ার টু হেয়ার।