সোসাইটি হইলো মানুষরে হ্যাণ্ডিক্যাপ বানানোর বৃহদাকার, প্রায় সফল, প্রাচীন একটা প্রোডাকশন হাউজ। এইখানে দক্ষতার সাথে সেই এগরিকালচার রেভুলুশনের পর থাইকা, অর্থাৎ প্রায় দশ হাজার বছরেরও বেশী সময় ধইরা মানুষরে হ্যাণ্ডিক্যাপ বানানো হইয়া থাকে। সোসাইটি এই কাজটা করে কতগুলা সিস্টেমের সাহায্যে। তাঁর মধ্যে অন্যতম হইলো এডুকেশন সিস্টেম। প্রাতিষ্ঠানিক এডুকেশন আসছেই মানুষরে উন্নতমানের কামলা বানানোর জন্যে, জ্ঞানী বানানোর জন্যে না। তবে সোসাইটি প্রধানত যেই পন্থায় মানুষরে হ্যাণ্ডিক্যাপ বানায় সেইটা হইলো ‘সোশ্যাল নর্ম’ অর্থাৎ ‘সামাজিক রীতিনীতি’ নামক এক চিপা গলির মাধ্যমে। সোশ্যাল নর্মের একটা সফটওয়্যার সমাজ প্রথমেই প্রতিটা বাপ-মায়ের মাথার মধ্যে ইন্সটল কইরা দেয়। ফলে একটা মানুষরে হ্যাণ্ডিক্যাপ বানানোর কাজ সেই শিশুকাল থাইকাই শুরু হইয়া যায়। সাধারণত অসংখ্য মুক্ত চিন্তার ডালপালা আর অসীম ইচ্ছাশক্তির অধিকারী একটা বিশাল মানুষরে সমাজ জোর কইরা, দলা মুচড়া কইরা ঠাইসা রীতিনীতির চিপা গলির এক মাথা দিয়া ঢুকাইয়া দেয়। তারপর মানুষটা গলির অন্য মাথা দিয়া একটা নির্দিষ্ট লিমিটেড শেইপ নিয়া বাহির হইয়া আসে। তাঁর চিন্তা ভাবনাগুলাও হইয়া যায় লিমিটেড। বাহির থাইকা তাঁরে তখন অক্ষত দেখা গেলেও তাঁর ভেতরের চিন্তা চেতনাগুলা সব আসলে ম্যারামোচা হইয়া যায়। সোশ্যাল নর্মের এই চিপা গলির ভেতর দিয়া আসা এই মানুষটারে সোসাইটি তখন ‘নরমাল’ বইলা ঘোষণা দেয়। অর্থাৎ এই সোসাইটিতে যেই ব্যক্তি নর্ম মাইনা চলে তাঁকে বলা হয় ‘নরমাল’। আর কেউ যদি সেই চিপা গলিতে ঢুকতে না চায় অথবা চিপা গলির ভিতর দিয়া আইসাও নিজস্ব শক্তিবলে চিন্তার ডালপালাগুলোরে কোনরকমে অক্ষত রাইখা দেয়, তখন সোসাইটি তাঁরে বলে ‘এবনরমাল’। পাগল অথবা দেশদ্রোহী শব্দগুলোও তাঁর কপালে জুইটা যায়। অবশেষে ফলাফল দাঁড়ায়, সমাজের নিরানব্বই ভাগ মানুষই হইয়া যায় নরমাল অর্থাৎ চিন্তায় তাঁরা ল্যাংড়া এবং লুলা। আর এই লুলাদের নিয়া হাজার বছর ধইরা ব্যাবসা কইরা যায় কর্পোরেশন।—এইভাবেই জইমা উঠে সভ্যতা নামক এই লুলার হাটবাজার!
জুলাই ২৩, ২০১৬।