বরিশাল শহরের অদূরে ছোট্ট গ্রাম লামচরির এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্ম নেয় আরজ আলী । দারিদ্রতার আদর-যত্নে (!) ধীরে বেঁড়ে উঠতে উঠতে বাবাকে হারায় চার বছর বয়সে। জমি-জমা ও বসতবাড়ি নিলামে উঠে, অল্প যা কিছু ছিল বন্ধক পড়ে মহাজনের কাছে। সব হারিয়ে কৈশোরেই লেগে যায় কৃষিকাজে। কৃষক আরজ আলীর কোনরকম প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই সহস্র বাঁধা-বিপত্তি, পারিপার্শ্বিক প্রতিকূলতা ও নিজেকে ডিঙিয়ে তার প্রথাবিরোধী চিন্তা ধারাকে বিস্তৃত করে পরবর্তী ‘আরজ আলী মাতুব্বর’ হয়ে উঠাটা একটা বিস্ময়! বিস্ময়কর তার প্রশ্ন করার ধরন ও সাহসিকতা। তার প্রথাবিরোধী আচরণের মুল কারণ তার ধার্মিক মায়ের মৃত্যু পরবর্তী একটি ঘটনা। আরজ আলীর মৃত মায়ের ছবি তোলার দায়ে মৃতদেহ কেউ জানাজা করতে রাজী হয়নি। এতে তিনি দারুন ভাবে আঘাত প্রাপ্ত হন। সামাজিক এই আঘাতই তাকে সত্য সন্ধানী করে তোলে। লিপ্ত হন জ্ঞান সাধনায়। চলতে থাকে জ্ঞান চর্চা; ধর্ম, দর্শন ও বিজ্ঞান অধ্যয়ন। রচনা করেন প্রথাবিরোধী প্রশ্ন সম্বলিত গ্রন্থ।
আরজ আলী মূলত প্রশ্নবাজ। প্রশ্ন করার উদ্দেশ্য সত্যের রূপ(Nature of Truth) কে জানা। তার প্রশ্নের তীর ছুটে প্রথার দিকে, ধর্মের দিকে, শত বছরের প্রতিষ্ঠিত অন্ধ বিশ্বাসের দিকে, মনুষ্যত্বহীন কুসংস্কারের দিকে। তার প্রশ্নের মুখে নড়ে উঠে সংস্কার! কেঁপে উঠে হাজার বছরের লালিত বিশ্বাস! তাহলে কি ধর্ম প্রান বিশ্বাসীদের বিশ্বাসে আঘাত হানাই তাঁর মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল? নাকি অন্ধের চোখে দৃষ্টিদান? নাকি এটা স্রেফ ধর্মীয় কুসংস্কার দ্বারা আঘাত প্রাপ্ত ব্যক্তির প্রতিশোধ পরায়ণতা? তাঁর বেশ কিছু প্রশ্নই আমার কাছে হাস্যকর ঠেকেছে। মনে হয়েছে কেবলমাত্র প্রশ্ন করার খাতিরেই প্রশ্ন করা আর কি!তবুও সেইগুলি প্রশ্ন। প্রশ্নকে বড় ভালবাসি! সত্যকে জানার সর্বোত্তম পন্থাই হল প্রশ্ন। সন্দেহ জাগুক, প্রশ্ন জাগুক। দূর হোক মূর্খতা। মুক্ত হোক জ্ঞান চর্চা। মুক্ত হোক মানুষ, প্রসারিত হোক চিন্তার পরিধি।