আপনার সিদ্ধান্ত, চয়েস, আর কনফিউশন

আপনে সত্যিই জানেন না আপনার নেয়া সিদ্ধান্তগুলা আসলে কোথেকে আসে। এইগুলা ঠিক আপনার হেঁচকি উঠার মতই। হেঁচকি যেমন আপনি নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী যখন তখন তোলতে পারেন না, তেমনি সিদ্ধান্তগুলাও আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকে না। এবং আপনে যখন কোন ডিসিশন মেইক করেন, তখন আপনে এক ধরণের মানসিক চাপের মধ্যে পইড়া যান, উদ্বিগ্ন হইয়া পড়েন। আপনে ভাবেন, “আমি কি যথেষ্ট পরিমাণ সময় নিয়া ভাইবা সিদ্ধান্তটা নিলাম? আমি কি সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সবগুলা অপশনরে বিবেচনায় আনছি?” এইটা ভাবতে গিয়া টেনশনে আপনার শরীর এবং মনের সবগুলা মাসল টাইট হইয়া যায়। কিন্তু এই রকম কইরা যদি আপনে ভাবতেই থাকেন, তাইলে একটা সময় দেখতে পাইবেন যে আপনার নেয়া সিদ্ধান্তের পেছনের অপশনগুলা আসলে ইনফিনিট। আপনার যে কোন পরিস্থিতিতে নেয়া যে কোন সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেই যতগুলা অপশনের কথা আপনে চিন্তা করতে পারবেন, সবগুলাই অসীম। এখন যদি সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় ভাবতে ভাবতে অপশনের এই অসীমতা আবিষ্কার কইরা ফালান, তখন আপনার বিপদ আরো বড় হইয়া যাইব। আপনে তাইলে কি করবেন? আপনে যেইটা করবেন সেইটা হইলো, আপনে পুরা সিদ্ধান্তটারে মোশ্যানের উপরে ছাইড়া দিবেন, কোন প্রকার জোর খাটাইবেন না, যেমনটা আপনে চাইলেও জোর কইরা হেঁচকি তোলতে পারবেন না। কিন্তু আপনে আসলে দুশ্চিন্তা ভালবাসেন, তাই আপনে আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়াও ভাবেন, সিদ্ধান্তটা এইভাবে নিলে কি হইতে পারতো? অন্যভাবে নিলে কি হইতে পারতো? অথবা আরেকভাবে নিলে?

সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আপনে সাধারণত একটা চয়েস মেইক করেন। যে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আপনার ভিতরে যেই হেজিটেশন কাজ করে, সেইটাই হইলো চয়েস। আর এই চয়েস হইলো আমাদের মনের একটা কনফিউশন, সুতরাং আমরা সবসময় একটা সন্দেহের মরুভূমিতে উদেশ্যহিন ভাবে প্যানিক হইয়া দৌড়াই আর ভাবি, আমরা কি ঠিকভাবে চলতেছি? আমরা কি ঠিক কাজটা করতেছি? …ব্লা ব্লা ব্লা। আর এতে আমাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের একটা বড় ধরণের অভাব তৈরি হয়। যখন আপনার ভেতরে আত্মবিশ্বাসের অভাব থাকবো, তখন আপনে ভুল করবেন। মারাত্মক ভুল করবেন। আপনার যদি আত্মবিশ্বাস থাকে তাহলে আপনে মারাত্মক ভুল করা থেকে সহজেই বাইচা যাইতে পারবেন।

নিজেরে আপনে আকাশের মেঘের মত মনে করতে পারেন। মানে রক্ত মাংসের তৈরি মেঘ আর কি! খেয়াল করলে দেখবেন আকাশের মেঘ কখনো কোন ভুল করে না। আপনে কি জীবনে কখনো দেখছেন যে কোন মেঘের টুকরা বিকৃত হইয়া গেছে? দেখেন নাই। মেঘের টুকরার আকৃতি যেমনই হোক সেইটাই আপনার কাছে সুন্দর লাগে, কারণ মেঘের টুকরার কোন নির্দিষ্ট আকৃতি আপনার মনের ভিতরে সেট করা নাই। যদি আপনে সত্যিই নিজেরে মেঘের মত মনে করেন অথবা ঢেউয়ের মত মনে করেন, তাইলে দেখবেন আপনে আসলে কোন ভুল করতেছেন না। এমনকি আপনে যদি এমন কিছু কইরাও ফালান যেইটারে আপাতদৃষ্টিতে খুবই জঘন্য মনে হয়, সেইটাও কোন না কোন ভাবে আবার ঠিক হইয়া ফিরা আসবই। তারপর আপনার এই ক্যাপাসিটির মধ্যে দিয়া আপনার মধ্যে এক ধরণের কনফিডেন্স তৈরি হইব এবং এই কনফিডেন্সের মাধ্যমে আপনার নিজের ইনটিউশনরে বিশ্বাস করার ক্ষমতা তৈরি হইব।

তখন আপনে জ্ঞানের মাঝ পথে গিয়া দাঁড়াইবেন, যখন বুঝতে পারবেন যে আপনার নেয়া সিদ্ধান্তের উপরে আসলে রিয়্যালিটি নির্ভর করে না। অর্থাৎ আপনে যদি সিদ্ধান্ত নেন যে আপনে ভুল করবেন না, অথবা যদি সিদ্ধান্ত নাও নেন, তাতেও কিছু আসে যায় না। যা সত্য, তা সত্যই থাইকা যাইব। আপনে আসলেই মেঘের মত, জলের মত। আর এই উপলব্ধির মধ্য দিয়া আপনে এমন একটা পয়েন্টে আইসা পৌঁছাইবেন, যেইখান থাইকা আপনে নিজের সত্ত্বার সাথে আপন হইয়া বাঁচা শুরু করবেন, পাশপাশি আপনার নিজের মগজটারেও বিশ্বাস করা শুরু করবেন।

অগাস্ট ১৯, ২০১৬
তর্জমা ও বিশ্লেষণ।। শরিফুল ইসলাম।
সোর্স।। এলান ওয়াটস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *